এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় প্রযুক্তিপ্রেমী শিক্ষার্থীদের, ভবিষ্যতে আরও উদ্দীপনামূলক ও সমৃদ্ধ ইনভেনশিয়াস’র প্রত্যাশা এমআইএসটি কমান্ড্যান্ট’র
প্রকাশিতঃ 10:26 pm | March 08, 2025

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
বিশ্ব এখন এগোচ্ছে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের দিকে। এই বিপ্লবের মূলে আছে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি)। টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেটের ব্যবহার এই বিপ্লবের অনন্য নিয়ামক। বাংলাদেশেও আইসিটি প্রসার দ্রুত হচ্ছে। জীবনযাত্রায় যুক্ত হয়েছে প্রযুক্তির বহুমুখী ব্যবহার। তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অগ্রগতি দেশকে একটি বিশ্বমানের জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়তে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। এমন সম্ভাবনা জাগানিয়া মুহুর্তে দেশের মোট ৩৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে প্রযুক্তিগত দক্ষতার ক্ষেত্রে রীতিমতো এক চমক তৈরি করেছে মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) আয়োজনে অনুষ্ঠিত দু’দিনব্যাপী জাতীয় প্রযুক্তি উৎসব। যার নামকরণ করা হয়েছিল- ‘ইনভেনশিয়াস ৪.১’। চোখে স্বপ্ন আর প্রাণে প্রাণে উচ্ছ্বাসে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা, উদ্ভাবনী চিন্তা এবং নেতৃত্বের গুণাবলী বিকাশের মাধ্যমে ভবিষ্যতে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ও প্রেরণা নিয়েই উৎসব থেকে বাড়ি ফেরেন দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মেধাবী শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (০৮ মার্চ) উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমআইএসটি’র কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ মনে করেন, ‘উদ্ভাবন ও নেতৃত্বই একটি উন্নত ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারে। প্রকৃত সাফল্য নির্ভর করে নতুন কিছু আবিষ্কার ও পরিবর্তনকে গ্রহণ করার মানসিকতার ওপর।’ স্বভাবতই তথ্যপ্রযুক্তি অগ্রগতির ধারবাহক। তথ্যপ্রযুক্তির পালাবদলের ধারার সঙ্গে তাল মিলিয়ে যারা সেরা প্রস্তুতি নিতে পারবে, তারাই টিকে থাকবে। এগিয়ে যাবে অগ্রগতির নতুন সোপানের দিকে। নিত্যনতুন প্রযুক্তি নিয়ে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে উদ্যমী তারুণ্য। তাদের স্বাভাবিক প্রাণশক্তি, উদ্ভাবনী ক্ষমতা এবং নতুনত্বের প্রতি, প্রাণশক্তির বাধাহীন প্রকাশের প্রতি, পরিবর্তনের প্রতি সহজাত সমর্থন ও নিষ্ঠার বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে। মেধাবীরা বিশেষজ্ঞদের সান্নিধ্যে এসে এমন অনন্য আয়োজনের মধ্যে দিয়ে হাতে কলমে জ্ঞান লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অগ্রযাত্রায় এমআইএসটি’র এই উদ্যোগ দেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক উন্নতির বড় হাতিয়ারের ভূমিকা পালন করবে এমন অভিমত বিশ্লেষকদের।
এমআইএসটি ইনোভেশন ক্লাবের (এমআইসি) উদ্যোগে এবং গবেষণা ও উন্নয়ন শাখা’র তত্ত্বাবধানে আয়োজিত এই উৎসবের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযুক্তিপ্রেমী শিক্ষার্থীরা নিজেদের সৃজনশীলতা প্রকাশের সুযোগ পেয়েছেন। দু’দিনের এই আয়োজন তাদের মাঝে ভবিষ্যতের বিশ্বমঞ্চে প্রতিযোগিতার স্বাক্ষর রেখেছে। তরুণ প্রজন্মের উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা এবং প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জন্য এক আশাব্যঞ্জক ভবিষ্যতের ইঙ্গিত মিলেছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ বিশ্বে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকার জন্য এসব দক্ষ তরুণ জনশক্তি নিজ নিজ প্রতিভা ও হাতের নাগালে থাকা প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের সদ্ব্যবহার করে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হবে বলে মনে করেন আয়োজকরা।
কঠোর পরিশ্রম ও নিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখার আহ্বান কমান্ড্যান্ট’র
দেশের ইতিহাসে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে প্রাণ উৎসর্গ করেছেন এমআইএসটি’র শিক্ষার্থী শহীদ ইয়ামিন ও শহীদ রাকিব। তাঁরা তরুণ প্রজন্মের সংগ্রামের প্রতীক। তথ্যপ্রযুক্তি খাতের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের উদ্ভাবনী শক্তি সমাজে যে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে তাঁরা যেন সম্ভাবনাময় এই ভবিষ্যতের কাণ্ডারি। সমাপনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ তাঁর বক্তব্যে নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দু’মেধাবী মুখ শহীদ ইয়ামিন ও রাকিবের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি তরুণদের প্রতি তাঁদের আদর্শ ও আত্মত্যাগ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে কঠোর পরিশ্রম ও নিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
মেজর জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ বিচারক, আয়োজক, স্পন্সর ও স্বেচ্ছাসেবকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এই উৎসবকে স্বার্থক ও সাফল্যমণ্ডিত করে তুলতে তাঁদের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি এমআইএসটি’র গবেষণা ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে ইনভেনশিয়াস আরও উদ্দীপনামূলক ও সমৃদ্ধ হবে। এই আয়োজন শুধু তরুণ উদ্ভাবকদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ তৈরি করেনি, বরং গবেষণা, সৃজনশীলতা ও সমস্যা সমাধানের সংস্কৃতি গড়ে তুলে জাতীয় প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে, যা বৈশ্বিক উন্নয়নের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।’
অংশগ্রহণকারীদের অসাধারণ সৃজনশীলতা, প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং কৌশলগত চিন্তাধারার ঐকান্তিক প্রয়াস
আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, উৎসবে চারটি প্রধান প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এগুলো হচ্ছে- হ্যাকাথন, লিড দ্য ফিউচার, ইউজার ইন্টারফেস ডিজাইন প্রতিযোগিতা এবং প্রকল্প প্রদর্শনী। এসব প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীরা অসাধারণ সৃজনশীলতা, প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং কৌশলগত চিন্তাধারার প্রতিফলন ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন। হ্যাকাথনে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ‘আইইউটি’ আর রানারআপ হয় ‘বিএআইইউএসটি’। লিড দ্য ফিউচার প্রতিযোগিতায় ‘এনএসইউ’ চ্যাম্পিয়ন হয় এবং ‘এমআইএসটি’ রানারআপ হয়। ইউজার ইন্টারফেস ডিজাইন প্রতিযোগিতায় ‘মো. রোহান, ইউআইইউ’ শীর্ষস্থান অধিকার করে। আর ‘নুফসাত ফারুকী, আইইউটি’ রানারআপ হয়। প্রকল্প প্রদর্শনীতে ‘আইইউটি’ চ্যাম্পিয়ন হয় এবং ‘এমআইএসটি’ রানারআপ হয়েছে। এছাড়াও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আইআরআইআইসি’র পরিচালক অধ্যাপক ড. খন্দকার আবদুল্লাহ আল মামুন ও এটুআই প্রকল্পের ‘ডিভাইস ইনোভেশন এক্সপার্ট’ তৌফিকুর রহমান। তাঁরা প্রযুক্তির উন্নয়নে তরুণ প্রজন্মের উদ্ভাবনী গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
কালের আলো/এমএএএমকে