ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে সংলাপে সংখ্যালঘু নির্যাতনের তথ্য সংগ্রহে সহযোগিতা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

প্রকাশিতঃ 11:21 pm | December 05, 2024

কালের আলো রিপোর্ট:

সংখ্যালঘুদের সমস্যার বিষয়ে অবাধ ও সত্য তথ্য পেতে ধর্মীয় নেতাদের পরামর্শ চেয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘কীভাবে নিরাপদে তথ্য সংগ্রহ করবো, যে তথ্য দিচ্ছে সে যেন বিব্রত না করে, তাও নিশ্চিত হতে হবে।’ বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) বিকালে ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের শুরুতে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। শত পার্থক্য থাকা সত্ত্বে আমরা পরস্পরের শত্রু নই বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সংলাপে মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নেতারা যোগ দেন। সংলাপে সূচনা বক্তৃতায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তথ্য সরবরাহকারীরা যেন সমস্যায় না পড়েন সেজন্য কীভাবে নিরাপদে তথ্য সংগ্রহ করা যায় তা জানতে আজকের সংলাপে আসার আহ্বান জানিয়েছি। জুলাই বিপ্লবের পর ৮ আগস্ট বিদেশ থেকে ঢাকা বিমানবন্দরে পৌঁছে ড. ইউনূস বলেছিলেন, মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও আমরা সবাই একটি পরিবার এবং আমরা একই পরিবারের সদস্য। আমরা একে অপরের শত্রু নই। আমরা সবাই বাংলাদেশি।

পরে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের বিষয়টি উঠেছিল, যা আমাকে দুঃখ দিয়েছে। দুর্গাপূজা উপলক্ষে ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গাপূজা উদযাপিত হয় এবং সর্বস্তরের মানুষ এতে যোগ দিয়ে দুর্গাপূজাকে জাতীয় উৎসবে পরিণত করে।

এখন সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয়টি আবারও উঠে এসেছে এবং বিদেশি গণমাধ্যম এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করছে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, বাস্তবতা ও বিদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের মধ্যে তথ্যের ফারাক রয়েছে। তিনি বলেন, দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার কোনো ঘটনা ঘটলে অবিলম্বে এ ধরনের ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনা হবে। প্রধান উপদেষ্টা এ ধরনের ঘটনা রোধে একটি পরিবেশ সৃষ্টির ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ক্ষতিগ্রস্তদের তাৎক্ষণিক প্রতিকার নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি আরও বলেন, আমার মনে হয় আমি যা বলেছি, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ তাতে একমত।

সামনে বৃহত্তর পরিসরে ছাত্র সংগঠনের নেতাদের সঙ্গেও প্রধান উপদেষ্টা সংলাপ
সামনে বৃহত্তর পরিসরে ছাত্র সংগঠনের নেতাদের সঙ্গেও প্রধান উপদেষ্টা সংলাপ করবেন বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। ধর্মীয় নেতাদের বক্তব্য প্রধান উপদেষ্টা শুনেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে বিশ্বে বাংলাদেশের পক্ষে ও বিপক্ষে যেসব শক্তি রয়েছে তাদের একটা বার্তা সরকার দিতে চেয়েছে। সেটা হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ সম্প্রদায়গত দিক থেকে একটা পয়েন্টে আছে, এক জায়গায় মিলিত হয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সরকার যেকোনও মূল্যে, যেকোনও ষড়যন্ত্র রুখতে প্রোঅ্যাক্টিভ কাজ করবে। হঠকারী কাজ এ সরকার আশ্রয় ও প্রশ্রয় দেবে না। বরং আমার জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির দিকে এগোবো। বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে সংলাপ শেষে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন মাহফুজ আলম।

তিনি বলেন, আমাদের দেশের সংহতির শক্তি বৃদ্ধি করবো। বাইরে যতই ষড়যন্ত্র হোক না কেন, আমরা যদি দেশের মধ্যে রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িকভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকি, আরও অন্যান্য ক্ষেত্রবিশেষে ঐক্যবদ্ধ থাকি তাহলে বাইরে যতই অপপ্রচার চলুক, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। এটাই প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন।

মাহফুজ আলম বলেন, এখানে হিন্দুসহ অন্য সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে কোনও নিপীড়ন হয়ে থাকলে আমরা বলি না যে নিপীড়ন হয় না, অলআউট বলাটা অসত্য। কিন্তু হয়ে থাকলে সেটার বিপরীতে সরকারের ব্যবস্থা আপনারা প্রচার করবেন। সুনামগঞ্জের ঘটনায় সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে বলেও জানান মাহফুজ আলম। সেটা গণমাধ্যমকে প্রচার করার অনুরোধ করেন তিনি। মাহফুজ বলেন, তাহলে তারা ট্রাস্ট পাবেন। এ দেশটা তাদের, সকল নাগরিকের। প্রধান উপদেষ্টা শেষমেশ বলেছেন, সম্প্রীতি দরকার। সেটার সঙ্গে ভয় যাতে জড়িয়ে না যায়। বরং নাগরিকরা নির্ভয়ে চলাফেরা করতে পারে, সবার মধ্যে মেলবন্ধন খুব স্বাভাবিকভাবে হয়। শুধু আমরা ঠেকায় পড়ছি– তাই হিন্দু, বৌদ্ধদের ডাকতেছি তা যেন না হয়। এটা সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি, যেন ঐক্য ও সম্প্রীতি বজায় থাকে। জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী যে পথে রওনা দিয়েছে, এ পথে যাতে অনেক দূর যেতে পারি। বাংলাদেশের সকল দল, মত, পথ ও ধর্মের মানুষ একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক মঞ্চে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশকে বিশ্বমঞ্চে দাঁড় করাতে পারি। এ জন্য ধর্মীয় নেতাদের সমর্থন চেয়েছি। তারা অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছেন। আমরা আশা করি, বাংলাদেশ যে গতিতে এগোচ্ছে এবং বাংলাদেশের জাতীয় ঐক্য হচ্ছে—এটা ভবিষ্যতে অনেক দূরে এগিয়ে যাবে।

সাম্প্রদায়িক ইস্যুতে গণমাধ্যমকে সঠিক তথ্য তুলে ধরার আহ্বান জানান মাহফুজ আলম। তিনি বলেন, আমরা প্রেসনোট দিচ্ছি না। বরং বাংলাদেশের যেখানে এ ধরনের ঘটনা ঘটবে, সত্যতা তুলে ধরুন। আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবো। ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে গণহত্যা হয়েছে তার স্বীকৃতি ভারতকে দিতে হবে। এখানে যত ধরনের নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে সে বিষয়ে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চটুকু করবো। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের গণমাধ্যমের ভূমিকা, যখন তাদের বলার সুযোগ হয়েছে বলেছি। তাদের বিষয়গুলো দেখার অনুরোধ করেছি। অপপ্রচার দুই দেশের বন্ধুত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। আমরা আশা করি তাদের সুমতি হবে। বাংলাদেশের গণমাধ্যমের দায়িত্ব হচ্ছে সত্যটা তুলে ধরা। সত্যটাকে জয়ী করতে হবে। আমাদের গণঅভ্যুত্থান আমাদের রক্ষা করতে হবে।

আন্তর্জাতিক ধর্মীয় সম্প্রীতি সম্মেলনের প্রস্তাবের বিষয়ের সরকারের ভাবনার বিষয়ে মাহফুজ আলম বলেন, এটা প্রস্তাবনা। এ বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদ খতিয়ে দেখবে। দেশ ও জনগণের ভালোর জন্য যেকোনও উদ্যোগ নিতে রাজি আছি। সেটা করে যাবো। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইন দেখবে কে অপরাধী। সেখানে ধর্ম, বর্ণ, জাত দেখা হবে না। তিনি বলেন, ভারতীয় আগ্রাসনের চেয়েও বড় বিষয় হলো আমরা নিজেদের শক্তি কতটুকু বৃদ্ধি করতে পারলাম। আমাদের নিজেদের ভেতরে সংহতি আছে, কতটুকু প্রস্তুতি আছে। আগ্রাসনের কথা শুনতেই পারি। অনেক ধরনের আগ্রাসন অনেক দেশই করতে পারে। আমরা আমাদের জায়গা থেকে শক্তি বৃদ্ধি করবো, শক্তিশালী হবো এটাই দৃষ্টিভঙ্গি।

দেশবিরোধী অপপ্রচার রোধে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সরকার কাজ করবে জানিয়ে মাহফুজ আলম বলেন, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও কৌশলের বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদে আলোচনা করেছি। আশা করছি দ্রুত কিছু ফলপ্রসূ পদক্ষেপ দেখতে পাবেন। বিশেষ করে প্রেস উইং এ কাজটা করছে দীর্ঘদিন ধরে। আমরা মনে করি, দেশের জনগণ ও গণমাধ্যম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিপ্লব করে যাচ্ছে। এটা পুরো দুনিয়ায় তুলে ধরতে পারবো।

প্র্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ৯ ডিসেম্বর ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা। এর মধ্যে সাত বা আটটি দেশের দূতাবাস রয়েছে। তারা আমাদের বড় রফতানিকারক দেশ। দুইপক্ষের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কথা হবে।

কালের আলো/এমএসএএকে/এমকে