কাস্টমস অফিসার সেজে কোটি টাকা আত্মসাত
প্রকাশিতঃ 5:34 pm | January 10, 2019

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো:
চড়েন প্রাডো গাড়িতে। কখনো তিনি কাস্টমস কমিশনার আবার কখনো বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে নিজের পরিচয় দেন। পাতানো ফাঁদে পড়া গ্রাহকদের (ক্লাইন্ট) সঙ্গে নামিদামি অভিজাত হোটেলে চলে তার ভোজন-আলোচনা। সেই প্রতারক খন্দকার ফারুক ওরফে ওমর মবিনের (৫২) দু’জন পার্সোনাল সেক্রেটারি (পিএস)। এ চক্র ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। কাস্টমসে জব্দ স্বর্ণের বার নিলামে বিক্রির কথা বলে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন তিনজন।
বুধবার রাতে রাজধানীর রমনা থানাধীন বেইলি রোডের নবাবী ভোজ রেস্টুরেন্টের সামনে থেকে খন্দকার ফারুক ওরফে ওমর মবিনসহ চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করে সিআইডি।
গ্রেফতার অন্যরা হলেন- সহযোগী মোহাম্মদ ইলিয়াস ওরফে নুর ইসলাম সরকার (৩৮) ও মো. সাইফুল ইসলাম (৩০)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১৮টি ওমর মবিন নামের কাস্টমস সহকারী কমিশনারের ভিজিটিং কার্ড, ৪টি ব্যাংকের চেকের পাতা, ৭টি মোবাইল ও ১৩টি বিভিন্ন অপারেটর সিম কার্ড।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির সিরিয়াস অ্যান্ড হোমিসাইডাল স্কোয়াডের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) সৈয়দা জান্নাত আরা।
তিনি বলেন, ‘কাস্টমস হাউসের জব্দ স্বর্ণের বার নিলামের কথা বলে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ পেয়ে তদন্ত করা হয়। প্রতারকদের মধ্যে খন্দকার ফারুক ওরফে ওমর মবিন নিজেকে কাস্টমস কমিশনার বলে পরিচয় দিতেন আর তার দুই সহযোগী ইলিয়াস ও সাইফুল কমিশনারের পিএস হিসেবে পরিচয় দিতেন। তারা বিভিন্ন মানুষকে টার্গেট করে প্রথমে পিএসদের পাঠাতেন এবং কাস্টমস হাউসের জব্দ সোনার বার নিলামে দেয়ার কথা বলে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। ইতোমধ্যেই বেশ কজন ভুক্তভোগীর বক্তব্যও আমরা পেয়েছি। যারা মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েও স্বর্ণের দেখা পাননি।’
তিনি আরও বলেন, ‘গ্রেফতারের পর আসামি খন্দকার মো. ফারুকের মোবাইলে মৃণাল নামে এক ভুক্তভোগীর কল আসে। তিনি সিআইডি কার্যালয়ে এসে প্রতারকদের শনাক্ত করেন। ভুক্তভোগী মৃণালের কাছ থেকেও প্রতারক ওমর মবিন কাস্টমস হাউসের স্বর্ণ স্বল্প মূলে নিলামের মাধ্যমে দেয়ার কথা বলে ২৪ লাখ টাকা হাতিযে নেয়।’
ওমর মবিনের কাছ থেকে ৪০ কোটি টাকার ব্ল্যাঙ্ক চেক জব্দ করা হয়েছে উল্লেখ করে সিআইডির এ কর্মকর্তা বলেন, ‘ওমর মবিন গত ৫ বছর আগে জামালপুরের এক এমপির পিএস হিসেবে কাজ করতেন। সেখান থেকে চাকরি করার পর প্রতারণার মাধ্যমে মানুষের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তদন্তের স্বার্থে ওই এমপির নাম বলা যাচ্ছে না। আমরা এ বিষয়টি যাচাই করে দেখছি।’
সৈয়দা জান্নাত আরা আরও বলেন, ‘প্রতারক এ চক্রের আরও সদস্য রয়েছে, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। চক্রের সদস্যদের কাস্টমস হাউসের সিঅ্যান্ডএফ’র বিভিন্ন কাজের অভিজ্ঞতাও রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রতারক ওমর মবিন ভুক্তভোগীদের বলত, আমরা কাস্টমস কর্মকর্তা। বহুবার স্বর্ণ জব্দ করেছি, আমরা সব পারি। ক্ষমতা দাপট প্রমাণে কাস্টমস কমিশনার ওমর মবিন নাম ব্যবহৃত ভুক্তভোগীদের ভিজিটিং কার্ডও দিতেন।’
সৈয়দা জান্নাত আরা জানান, আসামিদের বিরুদ্ধে এ সংক্রান্ত রমনা থানায় একটি মামলা হয়েছে। যার নম্বর-১৮। তাদের ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সিআইডির সংবাদ সম্মেলনের পর ভুক্তভোগী মৃণাল বলেন, ‘প্রতারক ওমর মবিনের দুই পিএস আমার কাছে আসে, এবং কাস্টমস হাউসের জব্দ স্বর্ণের বার নিলামের মাধ্যমে স্বল্প মূল্যে দেয়ার কথা বলেন। এবং মবিনের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। এরপর গত ৬ জানুয়ারি তিনি আমার কাছ থেকে ২৪ লাখ টাকা নেয়। তিনি আমাকে কাস্টমসের বেশ কিছু কাগজও দিয়েছিল। পরে সিআইডি তাদের গ্রেফতার করে। পরে আমি সেখানে গিয়ে প্রতারকদের শনাক্ত করি।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের সিআইডির সিরিয়াস অ্যান্ড হোমিসাইডাল স্কোয়াডের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাজিব ফারহান, রুহুল আমিন এবং উপ-পরিদর্শক নিউটন কুমার দত্ত।
কালের আলো/ওএইচ