ভেবেছিলাম বেঁচে ফিরবো না: সুফিউল আনাম

প্রকাশিতঃ 12:12 am | August 10, 2023

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

ইয়েমেনে অপহরণের শিকার বাংলাদেশি নাগরিক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) এ কে এম সুফিউল আনামকে উদ্ধারের পর দেশে ফিরেয়ে আনা হয়েছে।

বুধবার (৯ আগস্ট) শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন।

সুফিউল আনাম বলেন, মনে হয়েছিল, আমরা বেঁচে ফিরতে পারবো না, বা বাঁচবো না। যেকোনও বিপদসংকুল মুহূর্তে তারা আমাদেরকে হত্যা করতে পারে। অথবা কোনও অপারেশন বা উদ্ধার অভিযানে যদি বাঁচানোর চেষ্টা করা হয় তাহলে হয়তো তারা আমাদের হত্যা করবে।

নির্মম অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে সুফিউল আনাম বলেন, আমাকে গত দেড় বছর পাহাড়ে-মরুভূমিতে ১০টি স্থানে অন্তত ১৮ বার মুভ করানো হয়েছে। সেসব স্থান সম্পর্কে আমার ধারণা নেই। কারণ আমার চোখ বেঁধে রাখা হয়েছিল। দেড় বছর পর কালই প্রথম আমার পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে পেরেছি।

অপহরণের সময়ের অভিজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, এটা সিনেমায়, অ্যাকশন মুভিতে দেখা যায়, আমি আসলে কী অবস্থায় ছিলাম। আমি ছিলাম পাহাড়ে, মরুভূমির মধ্যে। আমি আকাশ-বাতাস দেখতে পারিনি মাসের পর মাস৷ আমি যখন পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে ফিরছিলাম তখন আমার সঙ্গে দুটো গাড়ি ছিল, দুজন ড্রাইভারসহ ৬ জন লোকও ছিল। রাস্তায় একটা চেকপোস্টে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করা হয়। সেখান থেকে আমাদেরকে নিয়ে একটি পাহাড়ের শেল্টারে নিয়ে রাখে। আমাদের ভাগ্য ভালো যে, সেখানে আমাদেরকে নিয়ে কোনও ধরণের নির্যাতন বা দুর্ব্যবহার করা হয়নি। আমাদের চোখ বেঁধে রাখা হয়েছিল। সেখানে যতদিন সম্ভব তারা রেখেছে। এরপর তারা সেখান থেকে আমাদের অন্য একটি মরুভূমিতে নিয়ে রেখে দেয়। এভাবে আমরা গত দেড় বছর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছি। গত দুই বছর আমাদেরকে মোট ১০টি জায়গায় অন্তত ১৮ বার মুভ করানো হয়েছে।

সুফিউল আনাম বলেন, আপনারা জানেন আমি একটা ভয়ংকর সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাতে অপহৃত হয়েছিলাম। এবং বিষয়টা ছিল খুবই স্পর্শকাতর। আমি নিরাপত্তার স্বার্থে এ বিষয়ে বিশদ বর্ণনা করতে অপারগ।

তিনি আরও বলেন, আমি যখন সুদানে কাজ করি তখন জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তাকে অপহরণ করা হয়েছিল। তখন তার উদ্ধারের ব্যবস্থাপনায় আমিও ছিলাম। সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের সক্রিয় হস্তক্ষেপে আমরা তাকে উদ্ধার করতে পেরেছিলাম।

জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা-এনএসআই পরিচালক ইমরুল মাহমুদ বলেন, অপহরণের পর থেকে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় ছিল। উদ্ধারের ব্যাপারটি একদিনে হয়নি। অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং ও দুরূহ ছিল আল-কায়েদার মতো জঙ্গি গোষ্ঠীর হাত থেকে এমন মানুষকে উদ্ধার করা। এই উদ্ধার কাজে কিছু বন্ধুপ্রতীম দেশ, সংস্থা ও আরও অনেকের সহযোগিতা আমরা পেয়েছি, তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা।

কালের আলো/এমএএইচইউ