তারেকের ছকে তথ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘অপপ্রচার’, শেষ রক্ষা হচ্ছে না সাইবার দুর্বৃত্ত ব্ল্যাকমেলার সাকিবের

প্রকাশিতঃ 2:50 pm | June 19, 2023

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো

নিজের ‘বদ অভ্যাস’ হিসেবেই গুজব আর সাংবাদিকতাকে একত্রে গুলিয়ে ফেলেছেন।
নাজমুস সাকিব তাঁর নাম হলেও ‘গুজব গুরু’ হিসেবেও পরিচিত। কথিত এই সাংবাদিক আপাদমস্তক চাঁদাবাজ, প্রতারক এবং ঘৃণ্য রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধী। বিদেশে বসে একটি ইউটিউব চ্যানেলের নামে মানুষকে প্রতিনিয়ত ব্ল্যাকমেল করে। কুৎসিত, নোংরা ভাষায় সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রতিষ্ঠিত এবং সম্মানিত ব্যক্তিদের চরিত্র হনন ব্যবসা নিয়েছেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র ৬ মাস আগে লন্ডন সদর দপ্তরের কর্তা, বিএনপির পলাতক তারেক জিয়ার ছক বাস্তবায়নে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড.হাছান মাহমুদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে অপপ্রচার শুরু করেছেন দুর্গন্ধযুক্ত নর্দমা সাকিব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত ও রাজনীতির কঠিন দু:সময়ে আদর্শচ্যুত না হওয়া ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত এই রাজনীতিককে নিয়ে ওই স্বাধীনতা বিরোধী মহলের গোয়েবলস কায়দায় মিথ্যা, অসত্য ও বানোয়াট তথ্যে এমন মিথ্যাচার ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন দলটির নেতাকর্মী, দেশের বিবেকবান প্রতিটি মানুষ ও স্বাধীনতার স্বপক্ষের নেটিজেনরা।

তাঁরা বলছেন, এই চক্রটি বিদেশে বসে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে তারেকের নির্দেশেই এসব দেশবিরোধী মিথ্যাচার চালাচ্ছে। তারেকের আগ্রহেই চলছে ব্ল্যাকমেল, চাঁদাবাজি এবং চরিত্র হননের কদর্য এবং কুরুচিপূর্ণ অপতৎপরতা। তথ্যমন্ত্রী ড.হাছান মাহমুদের বিরুদ্ধে এমন ডাহা মিথ্যাচার ও দুরভিসন্ধিমূলক অপতৎপরতা চালানো ‘নাগরিক টিভি’ নামের ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেইজ মূলত তারেক জিয়ার নিয়ন্ত্রণে। দন্ডপ্রাপ্ত আসামি তারেকই তার মালিক এবং পৃষ্ঠপোষক।

জানা যায়, ড. হাছান মাহমুদ আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত পছন্দের এক রাজনীতিক। আওয়ামী লীগের কঠিন সময়ে ২০০১ সালে তিনি শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী হিসেবে কাজ করেন। বিশেষ করে ওয়ান-ইলেভেনের সময় তিনি ঝুঁকি নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার পাশে থেকেছেন। ওই সময় তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং কর্মসূচীতে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি হয়ে ওঠেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৬ আসন থেকে ঘৃণিত মানবতাবিরোধী অপরাধী কসাই রাজাকার সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর তিনি প্রথমে প্রতিমন্ত্রী এবং পরবর্তীতে মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালে তিনি মন্ত্রিসভায় না থাকলেও রাজনীতিতে বেশ সরব ছিলেন। এরপর ২০১৯ সালের মন্ত্রিসভায় তিনি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কাউন্সিলে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতার পুরস্কার হিসেবে তাকে দলের এক নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেন।

ড. হাছান মাহমুদ দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের মুখপাত্র। বিরোধী রাজনৈতিক দলের সমালোচনার ক্ষেত্রে তিনি সবচেয়ে বেশি সরব। তার যুক্তিনির্ভর বক্তব্য এবং সেন্স অব হিউমার রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত। যারপরেনাই আবার বিএনপির লন্ডন সদর দপ্তর ‘অগ্নিশর্মা’। এ কারণেই তাঁর সঙ্গে রাজনীতির ভাষায় কুলিয়ে উঠতে না পেরে মন্ত্রীর চরিত্র হননের অপচেষ্টায় মেতে উঠেছে দূষিত নিম্নমানের চাঁদাবাজ সাকিব গংরা। মন্ত্রী ড.হাছান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের টার্গেটের মাধ্যমে নিজেদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার অপপ্রয়াস শুরু করেছেন খোদ তারেক জিয়া। এসবের মাধ্যমে মূলত দেশে অস্থিতিশীল ও অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টির ‘খোয়াব’ দেখছে তারা।

চট্টগ্রামে ‘কথিত’ সাংবাদিক সাকিবসহ ৮ জনের নামে মামলা
কথিত ‘নাগরিক টিভি’ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও তার পরিবারের সদস্যদের জড়িয়ে, তাকে রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে হেয়প্রতিপন্ন করতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা, অসত্য ও বানোয়াট তথ্য সম্বলিত একটি ভিডিও ইউটিউব ও ফেসবুকে আপলোড করার দায়ে কানাডা প্রবাসী নাজমুস সাকিব নামে কথিত এক সাংবাদিক ও ইউটিউবারকে প্রধান আসামি করে ৮ জনের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৫(২)/২৬(২)/২৯(১)/৩৫ ধারায় চট্টগ্রামের চকবাজার থানায় একটি মামলা করেছেন মো. আরিফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। যারা ওই ভিডিওতে লাইক, কমেন্ট, শেয়ার করেছেন এবং ভবিষ্যতেও শেয়ার করবেন তাদেরকেও আসামি করা হবে বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। গত রোববার (১৮ জুন) এ মামলা করা হয়।

মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন, ‘আমার প্রিয় নেতা ড. হাছান মাহমুদ এমপিকে রাজনৈতিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়ভাবে, হেয়প্রতিপন্ন, মানহানী ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করার কু-মানসে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন পূর্বক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ষড়যন্ত্রমূলকভাবে “নাগরিক টিভি” নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজ থেকে প্রিয় নেতার ছবি সম্বলিত নাম উল্লেখ করে ১৩ মিনিট ১৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ক্লিপ আপলোড করে।’

প্রকৃতপক্ষে, উল্লেখিত ছবি সম্বলিত ভিডিওটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন, ষড়যন্ত্রমূলক, মানহানিকর ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। প্রকৃত অর্থে এটা কোন টিভি চ্যানেল নয়, এটি একটি ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেইজ মাত্র। তাদের উল্লেখিত কর্মকান্ডের কারণে বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত প্রকৃত নাগরিক টিভির কর্তৃপক্ষ আসামীদের দ্বারা পরিচালিত ভুয়া ও অবৈধ নামধারী নাগরিক টিভির সাথে কোন সম্পর্ক নেই মর্মে সতর্কীকরন বিজ্ঞপ্তি ইতোমধ্যে প্রচার করেছে।

জানতে চাইলে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মঞ্জুর কাদের মজুমদার দৈনিক সন্ধানী বার্তাকে জানান, ‘আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে মামলার বিষয়টি দেখছি। এই ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলটির এডমিন নাজমুস সাকিবের বিরুদ্ধে ইতোপূর্বেও এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ততা থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। খোঁজ পেয়েছি তার বিরুদ্ধে আরও মামলা এবং লন্ডনে বসে বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি চেষ্টাকারী একটি মহলের সাথে নিবিড়ভাবে যোগাযোগের অভিযোগ আছে। তার স্থায়ী ঠিকানা ঢাকার বাসাবোতে ও গ্রামের বাড়ি রংপুর। আমরা পুরো বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছি।’

কালের আলো/বিএএ/এমএইচ