টং দোকানে রেলের টিকিট!

প্রকাশিতঃ 11:35 am | July 18, 2022

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

আরাম ও স্বস্তিদায়ক যাত্রার অন্যতম যোগাযোগব্যবস্থা হলো ট্রেন। দেশের অধিকাংশ মানুষই ট্রেনে ভ্রমণ করে থাকে। অনেকেই আবার বাসে চলাচল করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না, তাদের জন্য একমাত্র অবলম্বন হলো ট্রেন।

তবে স্বস্তির পরিবহনে অস্বস্তির বিষয় হলো, ট্রেনে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও সমস্যায় পড়তে হয় টিকিট নিয়ে। রেলস্টেশনে টিকেটের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও টিকেট মেলে না। অনলাইনে টিকেট পেতেও পোহাতে হয় ঝামেলা। তবে এসবের কিছুই প্রয়োজন নেই চট্টগ্রামে, কারন রেলস্টেশনের চারপাশে বসা টং দোকানে অতিরিক্ত টাকায় মেলে টিকেট! আর এসব টিকেটের ব্যবস্থা করে দেন খোদ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনএবি) সদস্যরা।

অভিযোগ রয়েছে, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য, রেলওয়ে পুলিশ ও কর্মকর্তাদের যৌথ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কালোবাজারে টিকেট বিক্রি হয় চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে। তাদের টিকেট পেতে সহযোগিতা করেন স্টেশনের বুকিং সহকারী, স্টেশন মাস্টার ও ম্যানেজার।

জানা গেছে, স্টেশনের আশপাশে বসা টং দোকান ও রিয়াজুদ্দিন বাজারের কয়েকটি দোকানে বাড়তি দামে বিক্রি করা হয় এসব টিকেট। এছাড়া আরএনবির সদস্যদের ডিউটিতে থাকা অবস্থায় স্টেশনের আশপাশে প্রকাশ্যে টিকেট বিক্রি করতে দেখা যায়। ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বাড়তি দিলেই টিকেটের ব্যবস্থা করে দেন তারা।

ঈদের আগে গত ৩ জুলাই টিকেট বিক্রির সময় রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর হাবিলদার মো. রবিউল হোসেন ও সিপাহি মো. ইমরান হোসেন ৯টি টিকেটসহ র‍্যাবের হাতে আটক হয়। তাদের রেলওয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। কিন্তু এ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে এখনও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

তথ্য মতে, চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে প্রতিদিন ৯টি আন্তঃনগর ও ৬টি মেইল ট্রেন ছেড়ে যায়। এই স্টেশনে প্রতিদিন ৫ হাজার টিকেট বিক্রি হয়। এর মধ্যে প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার টিকেট কালোবাজারিতে চলে যায়। প্রতিটি টিকেট থেকে গড়ে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে হলে প্রতিদিন প্রায় ৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় কালোবাজারিরা।

অভিযোগ রয়েছে, রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার রতন বড়ুয়া, প্রধান বুকিং সহকারী দেলোয়ার হোসেন, সহকারী স্টেশন মাস্টার শফিকুল ইসলাম ও বুকিং সহকারী মো. জসিম উদ্দিনসহ আরএনবি, রেলওয়ে পুলিশের কর্মকর্তারা টিকেট কালোবাজারিতে জড়িত বলে। তাদের সহযোগী হিসেবে রয়েছেন অস্থায়ী পিম্যান আবদুল হালিম আকাশ ও বুকিং ক্লার্ক মতিনুল ইসলামসহ আরও কয়েকজন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেল স্টেশনের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, টিকেট কেটে রাখার পর হঠাৎ বুকিং সহকারী ও টিকেট অপারেটররা ডিসপ্লে কম্পিউটারে টিকেট নেই শব্দটি জুড়ে দেন। তারপর কেটে রাখা টিকেটগুলো কালোবাজারিদের হাতে তুলে দেন তারা। স্টেশনে টিকেটের জন্য হাহাকার শুরু হলে নির্ধারিত ব্যক্তিদের কাছ থেকে বাড়তি দামে টিকেট কিনতে বাধ্য করেন তারা।

টিকেট প্রত্যাশীদের জানান, চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে সারা বছরই টিকেট কালোবাজারি চলে। তবে ঈদযাত্রাকে কেন্দ্র করে টিকেটের চাহিদা বেড়ে গেলে টিকেট কালোবাজারিরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। ঈদের টিকেট ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কালোবাজারিরা টিকেট কেটে নিজেরা রেখে দেয়। পরে সিন্ডিকেটের সদস্যদের মাধ্যমে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করে।

এবারও ঈদুল আজহার টিকেট কালোবাজারির হাতে চলে যাওয়ায় ভোররাত থেকে সারা দিন লাইনে দাঁড়িয়েও ট্রেনের টিকেট পাননি অনেকেই। অথচ কালোবাজারে টিকেট বিক্রির সময় ধরা পড়ে আরএনবির দুই সদস্য ও টং দোকানের এক কালোবাজারি।

টিকেট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার রতন বড়ুয়া বলেন, এ রকম অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। কালোবাজারির ঘটনা আগে থাকলেও এখন অনেকটা কমেছে। আর টিকেটসহ আটক আরএনবির দুই সদস্যকে স্টেশন থেকে বদলি করা হয়েছে।

কালের আলো/এসবি/এমএম