সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিতে বিনিয়োগের নামে শত কোটি টাকা আত্মসাৎ, গ্রেপ্তার ১

প্রকাশিতঃ 5:07 pm | April 12, 2022

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো

২০০৯ সালে প্রবাসে থাকতেই শুরু টাইলস ব্যবসায় হাতেখড়ি। ২০১৪ সালে ফোসান সিরামিক ও হাইটেক সিরামিক লিমিটেড নামে আমদানিতে অধিক মূল্য দেখিয়ে ২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশের প্রায় ৫০ কোটি টাকা পাচার করেছেন। ৪টি ব্র্যান্ডের সিরামিকস বা টয়লেট সামগ্রির ব্যবসার আড়ালে প্রতারিত করেছেন শত শত মানুষকে।

এখানেই শেষ নয়, প্রতারণার অর্থ হতে প্রায় ১৩০ বিঘা জমি ক্রয় করেছেন। সেটি দেখিয়ে আবার বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নিয়েছেন তিনশত কোটি টাকার ঋণ। দেশে বিভিন্ন ব্যাংকে ৩৯টি অ্যাকাউন্ট ও বিদেশে ৩টি ব্যাংকে অ্যাকাউন্টও রয়েছে।

এমন অভিযোগে সোমবার (১১ এপ্রিল) সন্ধ্যায় রাজধানীর উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জিয়াউদ্দীন জামানকে।

মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) সকাল ১১টায় কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সস্মেলনে র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার আল মঈন এসব তথ্য জানান।

র‌্যাব বলছে, বিভিন্ন থানায় প্রতারণাসহ বিভিন্ন অপরাধে রয়েছে ১৮টির বেশি মামলা। আটক জিয়া উদ্দিন নিজেকে ১২টি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান বা এমডি হিসেবে দাবি করেন। এ ধরনের তথ্য সম্বলিত ভিজিটিং কার্ডও তৈরি করেছেন। এছাড়াও তার অস্ট্রেলিয়া, চায়না, হংকং, ওমান ও দুবাইয়ে নানাবিধ ব্যবসা রয়েছে বলে ভূয়া প্রচারণা চালান। তিনি বিভিন্ন ব্যক্তিকে কৌশলে প্রলুব্ধ করে ব্যবসায়িক পার্টনার বানানোর নামে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

গ্রেপ্তারের সময় বিভিন্ন ব্যাংকের ৩৭টি চেক বই, ছয় বোতল বিদেশি মদ, ৯৯ হাজার টাকার জালনোট, ৬ হাজার জাল ইউএস ডলার, প্রতারণামূলক কার্যকলাপের জন্য ফোসান সিরামিক প্ল্যান্ট এবং জিয়া টাওয়ারের কাঠামোগত ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, ওমানে অর্থ পাচারের তথ্য, প্রতারণামূলক কার্যকলাপের জন্য ‘জাপানে তৈরি’ স্টিকার, ৫ ধরনের আইডি এবং বিজনেস কার্ড, নগদ ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা এবং ২০০ কোটি টাকা নেওয়ার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সংক্রান্ত নথিপত্র জব্দ করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জিয়াউদ্দীন জামান বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে প্রতারিত করার বিভিন্ন বিষয় ও কৌশল সম্পর্কে র‌্যাবের কাছে তথ্য দিয়েছে।

গ্রেফতার জিয়া উদ্দিন ১২টি প্রতিষ্ঠানের মালিক অর্থাৎ চেয়ারম্যান বা এমডি হিসেবে দাবি করে থাকেন। তিনি নিজেকে জাহির করার লক্ষ্যে এ ধরনের তথ্য সম্বলিত ভিজিটিং কার্ড তৈরি করেছেন বলে জানায়। এছাড়াও তার অস্ট্রেলিয়া, চীন, হংকং, ওমান ও দুবাইয়ে নানাবিধ ব্যবসা রয়েছে বলে বিভিন্ন মহলে ভুয়া প্রচারণা চালায়। তিনি বিভিন্ন ব্যক্তিকে কৌশলে প্রলুব্ধ করে ব্যবসায়িক পার্টনার বানানোর নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়া প্রায় শতাধিক ব্যক্তিকে নানাভাবে প্রতারিত করার বিষয়ে জানা যায়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জিয়াউদ্দীন জানায়, তিনি ২০১৪ সালে ফোসান সিরামিক লিমিটেড স্যানিটারি প্যাড, হাইলেডি স্যানিটারি ন্যাপকিনসহ নানাবিধ পণ্যের আকর্ষনীয় টিভিসির মাধ্যমে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করেন। ব্যবসায়িক অংশীদার বানানোর লোভ দেখিয়ে বিভিন্ন ভুক্তভোগীর কাছে কয়েক শতকোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। এইভাবে ব্যবাসায়িক অংশীদারের প্রস্তাব দিয়ে তিনি আনুমানিক শতাধিক ভুক্তভোগীর নিকট থেকে প্রায় ১৭০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। মূলত ভুয়া আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন, ভুয়া কোম্পানি ওয়েবসাইট, বিদেশে ভুয়া সাজানো ফ্যাক্টরি এবং অফিস পরিদর্শন, সাজানো বিপনন কেন্দ্র এবং ভুয়া কৃষি খামার ইত্যাদিতে আকৃষ্ট হয়ে জিয়া উদ্দীনকে সরলভাবে বিশ্বাস করে ব্যবসায়ীরা তার প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করে প্রতারিত হয়েছেন। তিনি বেশ কয়েকটি ব্যাংক থেকে তার নাম সর্বস্ব ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে প্রায় ৩০০ শত কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করে তার উল্লেখযোগ্য অংশ মানি লন্ডারিং করে বিদেশে পাচার করেছেন।

র‌্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১ এর অভিযানে রাজধানীর উত্তরা হতে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে জিয়াউদ্দিন ওরফে জামান (৫৫) আটক করা হয়।

অভিযানে উদ্ধার করা হয় বিভিন্ন ব্যাংকের ৩৭টি চেক বই, ৬ বোতল বিদেশি মদ, ৯৯ হাজার টাকার জালনোট, ৬ হাজার জাল ইউএস ডলার, প্রতারণামূলক কার্যকলাপের জন্য ফোসান সিরামিক প্ল্যান্ট এবং জিয়া টাওয়ারের কাঠামোগত ভবিষ্যত পরিকল্পনা, ওমানে অর্থ পাচারের তথ্যাদি, প্রতারণামূলক কার্যকলাপের জন্য ‘জাপানে তৈরি’ স্টিকার, ৫ ধরনের আইডি এবং বিজনেস কার্ড, নগদ ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা এবং ২০০ কোটি টাকা নেওয়ার ভবিষ্যত পরিকল্পনা সংক্রান্ত নথিপত্র।

খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক জিয়া ব্যবসায়িক প্রতারণা ও বিভিন্ন বিষয়াদি ও কৌশল সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার আল মঈন বলেন, তার বাবা একটি প্রতিষ্ঠানে সাধারণ চাকরি করতেন। পারিবারিকভাবে খুব অর্থবিত্ত ছিল না। মূলত তিনি ২০০৪ সাল অস্ট্রেলিয়ায় যান ডিপ্লোমা করতে। মূলত সেখানেই তার প্রতারণার হাতেখড়ি।

জাল টাকা ও ডলার সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রতারণার কাজে তিনি জাল টাকা ও ডলার ব্যবহার করতেন। তিনি জাল টাকা তৈরি করতো কিনা সেটা তদন্ত সাপেক্ষ। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার তদন্তকারীরা নিশ্চেই বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।

অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশে বিভিন্ন ব্যাংকে ৩৯টি অ্যাকাউন্ট ও বিদেশে ৩টি ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এছাড়াও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে ৬০-৭০টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এসব তিনিই ম্যানেজ করতেন। আমরা তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং এর ফুটপ্রিন্ট পেয়েছি। আমরা যে মামলা করবো সেটিতে মানি লন্ডারিং এর বিষয় থাকবে। মানি লন্ডারিং এর মামলা সিআইডি করে। তারা নিশ্চই তদন্ত করবেন। তখন কেউ ব্যাংক লোন পাইয়ে দিতে ও অর্থ পাচারে সহযোগিতা করেছেন কিনা তা উঠে আসবে।

জিয়াউদ্দীন জামানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় প্রতারণাসহ বিভিন্ন অপরাধে ১৮-২০টি মামলা রয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

কালের আলো/ডিএসবি/এমএম