বেঙ্গির মায়ের ‘এক আন্ডার মসজিদ’

প্রকাশিতঃ 5:36 pm | February 18, 2022

কালের আলো সংবাদদাতা:

অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি! অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল হবিগঞ্জ জেলা থেকে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার দূরে নিভৃত পল্লীর এক মহীয়সী নারী। তিনি গড়ে তুলেছিলেন একটি মসজিদ; মাত্র একটি ডিম থেকে!

জানা গেছে, স্বামীর অঢেল সম্পদ থাকলেও তা ছুঁয়ে দেখেননি তিনি। নিয়ত (মানত) করেছিলেন নিজের আয়েই গড়ে তুলবেন একটি মসজিদ। ঘটনা আজ থেকে ১১৯ বছর আগের। ওই নারীকে সবাই বেঙ্গির মা নামে চেনে। তার নামেই মসজিদের নাম বেঙ্গির মায়ের মসজিদ। শত বছর পরও মসজিদে নামাজ পড়ছে মুসুল্লিরা। দেওয়ালে লেখা আছে- প্রজাতপুর ও লালাপুর জামে মসজিদ প্রতিষ্ঠাতা বেঙ্গির মা। শুধু নিয়ন বাতি কেন এলাকাবাসীর অন্তরে যা আজো তার নাম উজ্জ্বলতর তারকা হয়ে আছেন তিনি।

সবাইকে অবাক করে দিয়ে ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়েছেন তিনি। তাকে সবাই ‘বেঙ্গির মা’ বলে ডাকলেও একটি মহৎ উদ্যোগ নিয়ে একটি আন্ডা বা ডিম থেকে গড়ে তুলেছেন একটি মসজিদ। এলাকাবাসী নাম দিয়েছেন ‘এক আন্ডার মসজিদ’। মসজিদটির নাম এখন সবার মুখে মুখে।

এক আন্ডা থেকে কীভাবে এক মসজিদ, সে কথা শুনলে সবাই অবাক হন। মানুষের অসাধ্য কিছু নেই, মানুষ সাধনা করে আকাশে উড়েছে, পৌঁছেছে চাঁদের দেশে। তেমনি এক বেঙ্গির মা বাংলাদেশে জন্ম দিয়েছেন এক ইতিহাস। আর তার রেখে যাওয়া স্মৃতি দেখার জন্য প্রতিদিন শত শত মানুষ আসে বেঙ্গির মায়ের এক আন্ডা মসজিদ দেখতে।

জানা গেছে, হবিগঞ্জ জেলার প্রবাসী অধ্যুষিত নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের প্রজাতপুর গ্রামের তৎকালীন এক কৃষক সরফ উল্লার স্ত্রী বেঙ্গির মা ১৯০২ ইরেজি ও ১৩০৭ বাংলা সনে প্রজাতপুর ও লালাপুর দুটি গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন।

মসজিদ নির্মাণ শেষে এলাকাবাসীকে একত্র করে নামকরণ করেন ‘এক আন্ডার মসজিদ’। তখন মসজিদের নামকরণ নিয়ে জনতার মধ্যে প্রশ্ন জাগলে তিনি ঘটনাটি খুলে বলেন। বেঙ্গির মা এলাকাবাসীকে জানান, তিনি একটি মুরগির ডিম মসজিদের নামে মানত করে রাখেন। ওই ডিম মুরগির উতলে দিলে তা থেকে একটি বাচ্চার জন্ম হয়।

পরে ওই বাচ্চা বড় হলে তা থেকে আরও ৭টি ডিম হয়। এরপর ওই ৭ ডিম থেকে ৭টি বাচ্চার জন্ম হয়। এভাবে একপর্যায়ে মুরগির খামার গড়ে তোলেন তিনি। ওই খামারের মুরগি বিক্রি করে বেঙ্গির মা টাকা জমাতে থাকেন। সে সময়ে তিনি এক লাখ টাকা জমা করে মসজিদটি তার স্বামীর মাধ্যমে নির্মাণ করে দেন।

বেঙ্গির মা ছিলেন নিঃসন্তান। ঘটনা এলাকায় জানাজানি হওয়ার পর মসজিদটির নাম সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। মসজিদ নির্মাণের শত বছর অতিবাহিত হলেও এখন এ কাহিনী সবার মুখে মুখে। অনেকেই মনে করেন, একটি ডিম থেকে একটি মসজিদ নির্মাণের ঘটনা ইতিহাসে এই প্রথম। তাও আবার একজন মহিলা কর্তৃক মসজিদ নির্মাণ সবাইকে অবাক করেছে।

প্রজাতপুর ও লালপুর গ্রামবাসী ২০০৯ সালে মসজিদটির বর্ধিত অংশ সংস্কার করেছেন। কিন্তু বেঙ্গির মার মূল মসজিদটি এখনো বিদ্যমান রয়েছে। চলতি বছরে মসজিদটি নতুন করে রং করা হয়েছে।

বেঙ্গির মার এক উত্তরপুরুষ প্রজাতপুর গ্রামের রাকিল হোসেন বলেন, ‘আমার পূর্বপুরুষ নিঃসন্তান সরফ উল্লার স্ত্রী বেঙ্গির মা এই মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা। বাবার কাছ থেকেও শুনেছি বেঙ্গির মা একটি ডিম থেকেই এই মসজিদ নির্মাণের টাকা জমান।’

প্রজাতপুর গ্রামের নিয়মিত মুসুল্লি উলফর উল্লাহ বলেন, ‘আমাদের গ্রামের বেঙ্গির মা এমন একটি কাজ করেছেন, যা সারা জীবনে ভোলার মতো নয়। বেঙ্গির মা তার সেই খামারের একটি টাকাও সংসারের কাজে ব্যয় করেননি। পুরোটাই দিয়েছেন মসজিদের জন্য।’

মসজিদ পরিচালনা কমিটিতে রয়েছেন বেঙ্গির মার বংশধর রূপ উদ্দিন, লন্ডন প্রবাসী আবদুল হারিছ, ব্যবসায়ী হেলিম উদ্দিন, রাকিল হোসেন ও শামীনুর মিয়া। কমিটির একাধিক সদস্যের মতে, বেঙ্গির মার এক আন্ডার মসজিদটি পর্যটকদের জন্য একটি আশ্চর্যজনক স্থাপত্য। তারা আশা করছেন সরকার এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেবে।

কালের আলো/ডিএসবি/এমএম