‘একটি মৃত্যু এবং কিছু বেদনাদায়ক স্মৃতি’

প্রকাশিতঃ 5:54 pm | December 08, 2021

জেনারেল (অব:) আজিজ আহমেদ :

আজ ০৭ ই ডিসেম্বর। আমার বাবা আব্দুল ওয়াদুদ এর ২৯ তম মৃত্যু বার্ষিকী। ১৯৯৩ সালের এই দিনে আমার বাবা আমাদের ছেড়ে পরলোকে চলে যান।কিছু মর্ম স্পর্শকাতর ঘটনা আজও আমাকে ব্যথিত করে যা চাকুরীতে থাকা অবস্থায় ব্যক্ত করিনি। অবসরে এসে তাই আজ আমার মনটিকে হাল্কা করার লক্ষ্যে এই পোস্ট।

বাবা জুনিয়র প্লানিং এবং প্রভিশনিং অফিসার হিসাবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স থেকে অবসর নেন। শ্বাস কস্ট এবং কিডনি সমস্যায় তিনি ভূগছিলেন।

০৫ ডিসেম্বর ১৯৯৩ আমি স্কুল অব আর্টিলারীর একজন প্রশিক্ষক (আইজি) এবং কোর্স ওয়াইসি হিসারে ছাত্র অফিসারদের নিয়ে আমি হাটহাজারী ফায়ারিং রেন্জে। সেখানেই খবর যায় আব্বা ভীষন অসুস্থ। আমি সেই রাতেই ঢাকা পৌছি এবং আব্বাকে দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাই। ভাই-বোনরা কয়েকটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তির চেস্টা করেছিল। কিন্তু আব্বার অবস্থা বেশী নাজুক দেখে কেউ ভর্তি করেনি। অবশেষে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। আমি আব্বার কাছে পৌছলে আমাকে একটি কথাই আব্বা বলেছিলেন- “বাবা, সম্ভব হলে আমাকে তোদের CMH এ নিয়ে চিকিৎসা করা”।

আমি আব্বাকে কথা দিয়েছিলাম, কিন্তু পারিনি। একজন চাকুরীরত মেজরের পিতাকে তার শেষ ইচ্ছানুযায়ী CMH এ ভর্তি করাতে পারিনি। সেদিন কেউ আমাকে ঢাকা CMH এ ভর্তির জন্য সাহায্য করেনি। আমি গিয়েছিলান CMH এর তদানিত্বন উপ-অধিনায়ক এবং অধিনায়ক (কর্নেল) এর নিকট। বেড নাই বলে আমাকে সামান্যতম গুরুত্বও দিলেন না। গিয়েছিলাম আমার এক কোর্সমেট এর কাছে যে তখন GSO- (Coord), PSO AFD। তাকে অনুরোধ করেছিলাম PSO AFD কে দিয়ে আব্বাকে CMH এ ভর্তির চেস্টা করতে। চেস্টা না করেই ফিরিয়ে দিল আমাকে ঐ কোর্সমেটটি।

গেলাম তখনকার DMI এক কাছে যিনি ছিলেন আর্টিলারী কোরের এবং নানান উপলক্ষে যার সাথে আমি ঘনিষ্ট ছিলাম। একবার CO CMH কে (তখন কর্নেল পদবীর ছিলেন) ফোনও দিলেন না আমার অনুরোধে। আমি লজ্জায় আর আব্বাকে দেখতে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে যাইনি। একজন চাকুরীরত মেজর হিসাবে আব্বাকে CMH এ ভর্তি না করার ব্যর্থতার জন্য। ঐ দিন ভোর রাতে আব্বা আমাদের ছেড়ে চলে যান। এই অসহায়ত্ব আমাকে অনেক অনেক কস্ট দিয়েছে।

আল্লাহর অশেষ মেহেরবানী এবং আমার অধ্যাবশায়, কঠোর পরিশ্রম এবং দৃঢ মনোবলের কারনে আমি চাকুরীতে ক্রমান্বয়ে উচ্চাসনে অধিষ্টিত হই। GOC থেকে শুরু করে DG BGB এবং সর্বশেষ CAS থাকাকালীন যে ই আমাকে তার বাবা-মার চিকিৎসার জন্য approach করেছে, আমি আমার বাবার মৃত্যুর পূর্বের মুহুর্কগুলি স্বরন করেছি এবং আমি চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছি BGB Hospital এবং CMH গুলিতে।

এমনও অনেকের বাবা মার চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছি যাদের আমি চিনিও না বা কোন রেফারেন্স ও ছিল না তাদের। হয়তো কারো নিকট থেকে আমার অফিসিয়াল ফোন নং সংগ্রহ করে আমাকে ফোন দিয়েছিল এবং তাদের বাবা / মা’র জন্য তাদের অসহায়ত্বের কথা আমাকে বলেছে।

তাদের কারো দোয়ায় আল্লাহ যেন আমার আব্বাকে জান্নাতবাসী করেন, সেটাই আজ প্রত্যাশা করছি। আমার আব্বার আত্বার মাগফেরাতের জন্য আপনারা দোয়া করবেন।

-এই লেখাটি সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব:) আজিজ আহমেদ গত ৭ ডিসেম্বর তার ফেসবুক পেইজে পোস্ট করেন।