বাস কন্ট্রাক্টর থেকে কোটি টাকার মালিক শাহীরুল
প্রকাশিতঃ 8:33 pm | October 23, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো:
শাহীরুল ইসলাম সিকদার। এইচএসসি পাসের পর একটি পরিবহনে বাসের কনডাক্টর হিসেবে চাকরি শুরু করেন। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০৩ পর্যন্ত এই চাকরি করেন। পরবর্তীতে ‘সিকিউরিটি গার্ড’ সরবরাহ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এভাবে চাকরির নামে হাতিয়ে নেন বিপুল অর্থ। পরবর্তীতে সেই অফিস বন্ধ করে শুরু করেন ফ্ল্যাট ও জমির ব্যবসা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যমতে প্রতারণা করে শাহীরুল ৫০ কোটি টাকার মতো মালিক হলেও তার সম্পদের পরিমাণ আরও বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শুক্রবার (২২ অক্টোবর) দিবাগত রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত রাজধানীর রামপুরা বনশ্রী এলাকায় অভিযান চালিয়ে শাহীরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তার ব্যাপারে বিস্তারিত জানাতে শনিবার (২৩ অক্টোবর) বিকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয় এলিট ফোর্সটির পক্ষ থেকে। সেখানে শাহীরুলের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানান র্যাব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক।
র্যাব জানিয়েছে, ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত সৌখিন পরিবহনে বাসের কন্ট্রাক্টর হিসেবে কাজ শুরু করেন,পরে প্রতারণার জন্য সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগ দেয়ার প্রতিষ্ঠানে গড়ে তোলেন। এরপর এসব প্রতিষ্ঠানে চাকরির চটকাদার বিজ্ঞাপন দিত। দেশের শিক্ষিত বেকার তরুণ-তরুণীরা বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে আবেদন করলে তাদেরকে কৌশলে ভুল বুঝিয়ে তার পরিচালিত কোম্পানীর মাধ্যমে নিয়োগ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতি চাকুরী প্রার্থীর কাছ থেকে ১৫-২৫ হাজার টাকা জামানত হিসেবে গ্রহন করতো।
আবার সরকারী প্রতিষ্ঠানের চাকরির ক্ষেত্রে ৫-১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতো। নিজেকে কখনও সরকারি ঊচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আবার কখনো মানবাধিকার সংস্থার চেয়ারম্যান হিসেবেও পরিচয় দিতেন প্রতারক শাহীরুল। প্রতারাণার মাধ্যমে একাধিক ফ্ল্যাট ও জমিসহ দৃশ্যমান প্রায় ৫০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক বনে গেছেন শাহীরুল।

ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, শাহীরুল ইসলামের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী আমাদের কাছে অভিযোগ দেয়। তাদের অভিযোগের পর র্যাবের গোয়েন্দারা ছায়া তদন্ত শুরু করে। পরে আমরা জানতে পারি শাহীরুল নিজেকে একটি কথিত মানবাধিকার সংস্থার চেয়ারম্যান এবং ‘হোমল্যান্ড সিকিউরিটি এন্ড গার্ড সার্ভিস লিমিটেড’ নামক ভুয়া প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে পরিচয় দেন।
তিনি বলেন, চাকরি দেওয়ার নামে মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেছে এমন অভিযোগে রাজধানীর রামপুরার বনশ্রী এলাকায় শাহীরুলের নিজের বাসা ও প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারের সময় শাহীরুলের কাছ থেকে তিনটি বিদেশি পিস্তল, একটি শর্টগান, একটি এয়ারগান, একটি এয়ার রাইফেল, ২৩৭ রাউন্ড গুলি, পাঁচটি ম্যাগাজিন, পাঁচটি খালি খোসা, ২২টি কার্তুজ, চারটি চাকু, তিনটি ডামি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া হোমল্যান্ড সিকিউরিটি এন্ড গার্ড সার্ভিস লিমিটেডের চাকরির আবেদন ফরম, চুক্তিপত্র, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই, ব্যানার, প্যাড, স্ট্যাম্প, ল্যাপটপ, ডেক্সটপ, গোপন ক্যামেরা, পাসপোর্ট, ভিজিটিং কার্ড, আইডি কার্ড, নেইম প্লেট, বিভিন্ন নামীদামী ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে তোলা ছবি, বুলেট প্রুফ জ্যাকেট, পাসপোর্ট, মানি রিসিভ বই, বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম কার্ড, মোবাইল ফোন উদ্ধার করে র্যাব।

কালের আলো/এমবি/এমএম