মিয়ানমার থেকে কাপড়-আচার বিক্রির আড়ালে ‘আইস’ ব্যবসা
প্রকাশিতঃ 4:21 pm | October 16, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো:
মিয়ানমারের মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলছেন বাংলাদেশের মাদক ব্যবসায়ীরা। আর এই সুযোগে প্রতিবেশি দেশটির মাদক ব্যবসায়ীরাও তাদের প্রলুব্ধ করতে গ্রহণ করছে বিভিন্ন ধরনের ‘বিজনেস স্ট্র্যাটেজি’। যার মধ্যে একটি হলো- বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর হাতে কখনও ভয়ংকর মাদক আইসের চালান ধরা পড়লে তার মূল্য পরিশোধ করতে হতো না ব্যবসায়ীদের।
শনিবার (১৬ অক্টোবর) ভোরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে সাড়ে ৫ কেজি আইসসহ দুজনকে গ্রেফতার করে র্যাব। গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর এমন তথ্য পাওয়া গেছে। পরে দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মুঈন সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
এর আগে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে ভয়ংকর মাদক ক্রিস্টাল মেথ বা আইস সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা হোছেন ওরফে খোকন (৩৩) ও তার সহযোগী মোহাম্মদ রফিককে (৩২) গ্রেফতার করে র্যাব। এসময় তাদের কাছ থেকে পাঁচ কেজি ৫০ গ্রাম আইস জব্দ করা হয়, যার বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘বর্তমান সময়ে সবচেয়ে আলোচিত মাদক হলো আইস বা ক্রিস্টাল মেথ। মানবদেহে ইয়াবার চেয়েও বহুগুণ ক্ষতি করে এই আইস। এটি সেবনের ফলে অনিদ্রা, অতি উত্তেজনা, স্মৃতিভ্রম, মস্তিষ্ক বিকৃতি, স্ট্রোক, হৃদরোগ, কিডনি ও লিভার জটিলতা এবং মানসিক অবসাদ ও বিষন্নতার ফলে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।’
‘শারীরিক ও মানসিক উভয় ক্ষেত্রে এটির নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। এই মাদকের প্রচলনের ফলে তরুণ-তরুণীদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং অস্বাভাবিক আচরণ দেখা যায়। এই মাদকে আসক্ত হয়ে তরুণ-যুবকরা নানা অপরাধে জড়িত হয়ে পড়ছে’,-যোগ করেন খন্দকার আল মঈন।

গোয়েন্দা তথ্যের বরাত দিয়ে খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘সাম্প্রতিক টেকনাফকেন্দ্রিক কয়েকটি মাদক চক্র বেশ কিছুদিন ধরে পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে মাদক আইস বাংলাদেশে নিয়ে আসছে। ফলশ্রুতিতে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। সেই ধারাবাহিকতায় র্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা এবং র্যাব-১৫ এর একটি আভিযানিক দল আজ শনিবার ভোরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে টেকনাফ আইস সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা হোছেন ওরফে খোকন (৩৩) ও মোহাম্মদ রফিককে (৩২) আটক করেছে।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এ অভিযানে জব্দ করা হয় আলোচিত নতুন ভয়ংকর মাদক আইস, যার পরিমাণ প্রায় পাঁচ কেজি ৫০ গ্রাম। জব্দকৃত এই মাদকের বাজারমূল্য আনুমানিক সাড়ে ১২ কোটি টাকা। এ ছাড়া তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, পাঁচ রাউন্ড গোলাবারুদ, দুটি মোবাইল, তিনটি দেশি/বিদেশি সিমকার্ড এবং মাদক ব্যবসায় ব্যবহৃত ২০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।
আটকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘তারা টেকনাফকেন্দ্রিক মাদক সিন্ডিকেটের সদস্য। এই চক্রটি কয়েক বছর ধরে অবৈধ মাদক ইয়াবার কারবার করে আসছে। সিন্ডিকেটে আরও ২০ থেকে ২৫ জন সদস্য রয়েছে। সিন্ডিকেটের সদস্যরা সাধারণ নৌপথ ব্যবহার করে মাদকের চালান মিয়ানমার থেকে দেশে নিয়ে আসে। চক্রটি ইয়াবা কারবারের সঙ্গে জড়িত থেকে বিগত কয়েক মাস ধরে আইস পাচার করে নিয়ে আসছিল। ঢাকার উত্তরা, বনানী, গুলশান, ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় তাদের সিন্ডিকেট সদস্য রয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। তাদের বিরুদ্ধেও অভিযান চালানো হবে।’

জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মো. হোছেন ওরফে খোকন এই চক্রের অন্যতম মূল হোতা। তিনি কাপড় ও আচারের ব্যবসার আড়ালে মাদকের চালান দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাতেন। তার নামে বিভিন্ন থানায় অস্ত্র ও মাদকসহ অন্তত সাতটা মামলার তথ্য পেয়েছি আমরা।’
এ ছাড়া জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃত মোহাম্মদ রফিক এই চক্রের একজন সক্রিয় সদস্য এবং টেকনাফে অটোরিকশা চালকের ছদ্মবেশে মাদক পরিবহণ এবং স্থানান্তর করতেন তিনি।’
তাদের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

কালের আলো/এসবি/এমএইচএ