অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে মোগল স্থাপত্য

প্রকাশিতঃ 11:39 am | June 09, 2021

ভ্রাম্যমাণ সংবাদদাতা, কালের আলো:

মসজিদের অক্ষত দেয়ালের পরতে পরতে এখনও প্রাচীন ঐতিহ্যের স্পষ্ট ছাপ। নান্দনিক নকশা ও সুনিপুণ নির্মাণশৈলী বলে দেয় মুসলিম ইতিহাসের নান্দনিকতার কথা।

কিন্তু প্রাচীন এই মসজিদের শৈল্পিক অবকাঠামোর কথা অনেকেই জানেন না। অযত্নে-অবহেলায় কালের গর্ভে হারিয়ে যেতে বসেছে নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার ভাবিচা ইউনিয়নের ধর্মপুর গ্রামে অবস্থিত ধর্মপুর ভাঙ্গা মসজিদ।

স্থানীয় অধিবাসীরা বলছেন, অনেক আগে প্রাচীন এ মসজিদটির আশপাশে মুসলিম জনবসতি গড়ে উঠেছিল। মসজিদের পাশে ছিল বিশাল পুকুর।

তবে স্থাপত্যকলা, শিল্প-সৌন্দর্যের আধার ধর্মপুরের এ মসজিদ ঠিক কত বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছিল, এর সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

৯ গম্বুজ বিশিষ্ট বর্গাকৃতির মসজিদটির ভেতরে রয়েছে চারটি সুদৃঢ় খিলান। দরজা রয়েছে মাত্র একটি। দ্বিতল ভবনের ভেতরে মেহরাব ও দেয়ালে আঁকা রয়েছে বিভিন্ন কারুকাজের ফুলদানি ও ফুল। মসজিদের দেয়ালের গাঁথুনি চার ফুট প্রস্থ, যা চুন ও সুরকি দিয়ে গাঁথা।
প্রাচীন স্থাপত্যকলার সুদৃশ্য মসজিদটি চিকন ইট, চুন-চুরকি নির্মিত দেয়ালে এখনও নকশার করা কারুকাজ রয়েছে। চারটি পিলারের ওপর দাঁড়িয়ে নয় গম্বুজবিশিষ্ট এ মসজিদের নির্মাণশৈলী মনোমুগ্ধকর। তবে এর আয়তনের সঠিক তথ্য জানাতে পারেননি স্থানীয় কোনো প্রবীণ ব্যক্তিও।

সরেজমিনে দেখা যায়, মসজিদটি সিঁড়িসহ প্রবেশপথ, খোলা চত্বর ও মূল ভবন বা নামাজঘর তিনটি অংশে বিভক্ত। বিভিন্ন তথ্য ও নির্মাণ স্থাপত্যের উপর ভিত্তি করে স্থানীয় মানুষজনের ধারণা, মসজিদটির সম্ভাব্য বয়স হতে পারে ৪শ’ বছর।

কিন্তু অযত্ন-অবহেলায় ঐতিহ্য ও গর্বের এই মসজিদ আশির দশক থেকে ধীরে ধীরে ধ্বংস হতে শুরু করে। দেয়ালে গাছপালা জেগে উঠেছে। দেখা দিয়েছে বড় ফাটল। নামাজ পড়ার অনুপযুক্ত হওয়ার কারণে একই স্থানে এলাকাবাসীর উদ্যোগে আরও একটি মসজিদ স্থাপন করা হয়।

৯০ বছর বয়সী স্থানীয় মুসল্লি আবদুল হাকিম বলেন, আমার নিজের চোখে দেখা মসজিদটি ২০ বছর আগেও অনেক সুন্দর ছিল। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসতেন প্রাচীন মসজিদটি দেখতে। এখানে দুই ঈদের নামাজ হতো। শেষ ঈদের জামাত ২০০০ সালে অনুষ্ঠিত হয়। বাপ-দাদার মুখ থেকে শুনেছি, ১৯২০ সালের মহাভূমিকম্পে ৯টি গম্বুজসহ মসজিদের কিছু অংশ ভেঙে যায়।

‘এরপর থেকেই এটি ভাঙ্গা মসজিদ নামে পরিচিতি লাভ করে। মসজিদটির একটি দরজার ওপর মূল্যবান কষ্টি পাথরে খোদাই করে আরবি ভাষায় কোরানের আয়াত লেখা ছিল। মূল্যবান পাথর ৩০/৩৫ বছর আগে কে বা কারা চুরি করে নিয়ে যায়।’

স্থানীয় বাসিন্দা কাবুল হোসেন বলেন, এই প্রাচীন মসজিদ আমার ধারণা ৩শ’ বছরের পুরনো। আমার বাপ-দাদারাও সঠিক কবে নির্মাণ হয়েছিল, তা বলে যেতে পারেননি। গত বছর সরকারের প্রত্মতত্ত্ব অধিদফতরের কিছু লোক এসে গ্রামবাসীকে সঙ্গে নিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেছিলেন।

‘পরে আর কেউ খোঁজ নেয়নি। এই মসজিদে আমি নামাজ পড়েছি। মসজিদটি পুনরায় সংস্কার চাই আমরা। পাশাপাশি দেশের ঐতিহ্যও রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ করছি।’

নিয়ামতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়া মারিয়া পেরেরা বলেন, মসজিদটি সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে দেওয়া চিঠিটি প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তরে পাঠিয়েছি। শিগগির মসজিদটি প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তরের সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের আওতায় নেওয়া হবে।

বগুড়া প্রত্মতত্ত্ব অধিদফতরের আঞ্চলিক পরিচালক মোছা. নাহিদ সুলতানা বলেন, আনুমানিক ১৭শ’’ খ্রিস্টাব্দের ৯ গুম্বুজবিশিষ্ট ৪টি পিলার ও পশ্চিম দিকে মেহেরাবের এই মসজিদটির সন্ধান পাওয়া গেছে। যা দেখে মনে হয়, এটি মোগল আমলের একটি মসজিদের ভিত্তি।

‘আমরা মসজিদ এলাকা ঘুরে দেখেছি। প্রত্মসম্পদ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী এটি সংরক্ষণযোগ্য। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে,’ যোগ করেন তিনি।

কালের আলো/ডিএস/এমএম

Print Friendly, PDF & Email