ঢাবি ছাত্রের মৃত্যুর তদন্তে গিয়ে পাওয়া গেলো এলএসডি মাদক, গ্রেপ্তার ৩
প্রকাশিতঃ 11:20 pm | May 27, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো:
ডাব বিক্রেতার দা দিয়ে নিজ গলায় আঘাত করে হাফিজুর রহমান নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে দেশে প্রথমবারের মতো এলএসডি মাদকের (লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইথ্যালামাইড) সন্ধান পেয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ ঘটনায় তিন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর ছাত্র সাদমান সাকিব ওরফে রূপল ও আসহাব ওয়াদুদ ওরফে তূর্য এবং আদিব আশরাফ।
বুধবার (২৬ মে) রাজধানীর ধানমন্ডি ও লালমাটিয়া এলাকা অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। সাদমান সাকিব ওরফে রূপলই এই মাদকের মূল আমদানিকারক বলে জানায় ডিবি।
বৃহস্পতিবার (২৭ মে) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত যুগ্ম কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার। গ্রেপ্তারের সময় এই তিনজনের কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা মূল্যের ২০০ ব্লট (চুষে সেবনের টুকরো) এলএসডি মাদক উদ্ধার করা হয়। দেশে এলএসডি জব্দের ঘটনা এটাই প্রথম বলে জানিয়েছে ডিবি।
হাফিজ আক্তার বলেন, অভিযান চালিয়ে তাদের বাসা থেকে ২০০টি ব্লট এলএসডি উদ্ধার করা হয়েছে। প্রতিটি ব্লট এলএসডি ৩ থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি। এই মাদকটি খুবই ছোট আকারের। এটি অল্প মাত্রায় থাকে। এটি গ্রহণের পর সেবনকারী চিন্তা শক্তি অতিমাত্রায় বেড়ে যায়। হ্যালুসিনেশন হয়ে মানুষ কল্পরাজ্যে চলে যায়। এই মাদকটি গ্রহণের পর ৮ থেকে ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত এর প্রভাব থাকে। এই মাদক বেশি মাত্রায় গ্রহণের ফলে হিংস্রতা বেড়ে যায়। অনেক সময় গ্রহণকারীর অতীত মনে পড়ে যায়, কখনো কখনো নিজেকে অতিমাত্রায় শক্তিশালী মনে করে। এটি সেবন করলে চোখের মনি বিকৃতি ঘটে, রক্ত চাপ ও শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং ডিপ্রেশন বেড়ে যায়। এই মাদককে বিশ্বের উন্নত দেশে নিষিদ্ধ মাদক হিসেবে ধরা হয়।
তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তার তিন তরুণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহার করে মাদক বিক্রি করতো। তারা ‘আপনের আব্বা’ ও গ্রেট ব্রাইনি এন্ড বিয়ন। এই দুটির মাধ্যমে মাদক বিক্রির কার্যক্রম পরিচালনা করা হতো। এগুলোর মাধ্যমে তারা এলএসডি ও গাজার নির্যাস দিয়ে তৈরি এক ধরনের গাজার কেক বিক্রি করতো। এই ‘গাজার কেক’ নতুন উদ্ভাবনী বলে দাবি তাদের। ফেসবুক গ্রুপটি ধরে আমরা তদন্ত করছি।
গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, সাদমান জানিয়েছে, সে নেদারল্যান্ড থেকে টেলিগ্রাফ অ্যাপসে যোগাযোগ করে অনলাইন মুদ্রা বিনিময় মাধ্যম পে-পাল দিয়ে টাকা পাঠায়। পরবর্তীতে তারা টাকা পাঠিয়ে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে মাদকটি ৮০০ থেকে ১০০০ টাকায় এক একটি ব্লট কিনে থাকে। সে এক বছর ধরে এই মাদক বিক্রির সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছে।
এ কর্মকর্তা আরও বলেন, এই মাদকগুলোর ছদ্মনাম MDMA, N, M-Dimethyltryptania, psilocybin mushroom সহ LSD-25, Acid, Delysid ইত্যাদি নামের হয়ে থাকে। সাধারণত এই মাদকের ভয়াবহতার কারণে এই মাদককে LSD (Last State of Drug) বলা হয় ।
ডিবি সূত্র বলছে, ১৫ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্র হাফিজুর রহমানকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল এলাকায় তার তিন বন্ধু এলএসডি সেবন করান। এর প্রতিক্রিয়া শুরু হলে তিনি শুধু একটি শর্টস পরে সেখান থেকে বেরিয়ে যান। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে এক ডাব বিক্রেতার ভ্যানে রাখা দা নিয়ে তিনি নিজের গলায় আঘাত করেন। সুরতহাল প্রতিবেদন অনুযায়ী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৯টা ৪০ মিনিটে অজ্ঞাতনামা হিসেবে তার মৃত্যু হয়। এর আট দিন পর ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে হাফিজুরের ভাই তার লাশ শনাক্ত করেন।
তবে, এই মাদক উদ্ধারের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার প্রমাণ পাওয়া গেছে কি না জানতে চাইলে হাফিজ আক্তার বলেন, আমরা তদন্ত করছি। ফরেন্সিক এবং ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর এ বিষয়ে আমার বিস্তারিত জানাবো।
কালের আলো/ডিএসবি/এমএম