শেখ হাসিনার চার দশক : অনন্য উচ্চতায় বাংলাদেশ
প্রকাশিতঃ 9:10 am | May 17, 2021

এনামুল হক শামীম :
আজ ১৭ মে। বাংলাদেশের মানুষের আশার বাতিঘর বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘ ছয় বছর নির্বাসিত জীবন শেষে দেশে ফেরার চার দশক আজ। অর্থাৎ ৪০ বছর আগে বঙ্গবন্ধুবিহীন এবং তার স্বপ্নের সোনার বাংলায় আলোর মশাল হাতে কাণ্ডারি হয়ে এসেছিলেন জাতির পিতার জ্যেষ্ঠা কন্যা শেখ হাসিনা। এশিয়া মহাদেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর দায়িত্বেও চার দশক। সরকারপ্রধান হিসেবে প্রথম মেয়াদের পাঁচ বছর এবং পরপর তৃতীয় মেয়াদের প্রায় সাড়ে ১২ বছর অতিক্রান্ত। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশ্বে বাংলাদেশের এক অনন্য পরিচিতি লাভ করেছে। বঙ্গবন্ধুকন্যার যোগ্য নেতৃত্ব, দক্ষতা, সততায় আজকে দেশের এ অবস্থান।
কিসিঞ্জারের সেই ‘বটমলেস বাস্কেট’-এর দেশ এখন বিশ্বে ‘উন্নয়নের রোলমডেল’ই শুধু নয়, মানবতার অনন্য উদাহরণ। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর একাধিক গণতান্ত্রিক সরকার ও স্বৈরশাসক দেশ পরিচালনার দায়িত্বে এলেও বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নে কাজ করেননি। নিজেদের আখের গোছাতেই ব্যস্ত ছিলেন। আওয়ামী লীগের প্রথম মেয়াদ (১৯৯৬-২০০১) ও ২০০৮ থেকে টানা তিন মেয়াদে দেশের অর্থনৈতিক মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করায় বিজয়ের ৫০ বছরে অর্থ ও বাণিজ্যের বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের অর্জন বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। দারিদ্র্য দূরীকরণ, অর্থনৈতিক মুক্তি, রিজার্ভ, প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয়ে উন্নত দেশগুলোকেও টেক্কা দিচ্ছে বাংলাদেশ।
চলতি মাসেই দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৫ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বৃদ্ধির অর্থ হলো, অর্থনীতির শক্তিশালী হচ্ছে। ১৯৭১ সালে ১২৯ ডলার মাথাপিছু আয়ে শুরু করা, বাংলাদেশের বর্তমান মাথাপিছু আয় দুই হাজার ৬৪ ডলার। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে যেখানে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করত ৮০ শতাংশ মানুষ, আজ সেই সংখ্যা মাত্র ২০ দশমিক ৫ শতাংশ। বাংলাদেশের প্রথম অর্থবছরে (১৯৭২-৭৩) দেশের বাজেটের আকার ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা। ৫০ বছরের মাথায় এসে বাজেটের আকার দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা।
গ্রামাঞ্চলে এখন ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ। বার্ষিক মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সর্বশেষ পরিমাণ ২৪ হাজার মেগাওয়াট। খাদ্যশস্যের উৎপাদন ৪৫১ লাখ টন। স্বাধীনতার আগে এর পরিমাণ ছিল অনেক কম। স্বাধীনতা-পরবর্তী ৩৪৮ দশমিক ৩৩ মিলিয়ন ডলারের রফতানি আয় বেড়ে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৫৮৬ কোটি ডলার। শিক্ষা, গড় আয়ু, আমদানি, রফতানি, রিজার্ভ, ডলারের মান, জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার এবং মাথাপিছু আয়ের মতো প্রতিটি সূচকে এখন বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়ে অনেক এগিয়ে। অনেক সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ এখন ভারত থেকেও এগিয়ে। বিস্ময়কর উত্থানের কারণ খুঁজছে ভারতও। স্বাধীনতার পরপর আমাদের ১০০ টাকা দিয়ে ভারতীয় ৩৫-৪০ রুপি পাওয়া যেত। আর এখন পাওয়া যায় ৮৫-৯০ রুপি। সব কিছু সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের হাল ধরেছিলেন বলেই। তিনি আজকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেই করোনার মহামারীতেও দেশের মানুষের জীবন ও জীবিকা সচল।
বিশ্বের অনেক প্রভাবশালী রাষ্ট্রনায়কও রীতিমতো ক্লান্ত। তারা যখন প্রকৃতির কাছে আত্মসমর্পণ করছেন, তখন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার অসীম সাহসিকতা আর মানবিকতা দিয়েই জয় করছেন সব কিছু। করোনাযুদ্ধে একজন দক্ষ রাষ্ট্রনায়কই নন, ইতিহাসে নাম লেখাচ্ছেন যুদ্ধজয়ের বীরত্বগাথার গৌরবে। করোনার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সামনে থেকে প্রশংসনীয় সফল ও দৃঢ়চেতা নেতৃত্ব দিয়েছেন জনগণকে। মানুষের জীবন-জীবিকার চাকা সচল রাখতে একের পর এক সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছেন সরকার প্রধান। বড়, মাঝারি, ক্ষুদ্র শিল্প বাঁচাতে বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ দেয়াসহ সাহস ও উদ্দীপনা জুগিয়েছেন। বেকার ও কর্মহীন মানুষের জন্য বরাদ্দ করেছেন মানবিক সহায়তা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী ও যুগান্তকারী পদক্ষেপের ফলেই বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের টিকা আনা সম্ভব হয়েছে। বিশ্বের অনেক ধনী দেশও যখন এ টিকা পায়নি, তখন দেশের মানুষের জন্য বিনামূল্যে টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। অতি সম্প্রতি ভারত করোনা টিকা রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় ভ্যাকসিন নিয়ে বাংলাদেশে সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী কয়েক দিন আগে এক অনুষ্ঠানে ঘোষণা দিয়েছেন, ‘যত টাকা লাগুক, টিকা আনবই’। সরকারের তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘মানুষের কল্যাণে এবং ইশতেহার বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে’। অর্থাৎ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ যে ভিশন দেয়, তা বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। গত বছর শুরু হয়েছে ‘মুজিব শতবর্ষ’। গত বছর মুজিববর্ষ শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন- একটি পরিবারও ভূমিহীন থাকবে না। ঠিক সেই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ৭০ হাজার গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারকে পাকা ঘর দেয়া হয়েছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় আরো ৫৫ হাজার ঘর আগামী জুন মাসে হস্তান্তর করা হবে, যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিলেন, তার কন্যা শেখ হাসিনা সেই অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করছেন। চার দশক আগে তিনি যদি ফিরে এসে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাল না ধরতেন, তা হলে এমন বাংলাদেশ সৃষ্টি হতো না।
বিদেশে থাকাকালেই ১৯৮১ সালের ১৬-১৮ ফেব্রুয়ারি কাউন্সিল অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শেখ হাসিনাকে দলের সভানেত্রী নির্বাচিত করেছিলেন। দেশে প্রত্যাবর্তনের পর তার হাতে তুলে দেন দেশের মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী সর্ববৃহৎ ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের পতাকা। লাখো মানুষের প্রাণঢালা উষ্ণ সম্ভাষণ এবং গোটা জাতির ভালোবাসা মাথায় নিয়ে প্রিয় স্বদেশ ভূমিতে ফিরে এসেছিলেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুকন্যার আগমনে সে দিন গগনবিদারী মেঘ গর্জন, ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ প্রকৃতি যেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার বদলা নেয়ার লক্ষ্যে গর্জে উঠেছিল, আর অবিরাম মুষলধারে বারিবর্ষণে যেন ধুয়ে-মুছে যাচ্ছিল পিতৃ হত্যার জমাট বাঁধা পাপ আর কলঙ্কের চিহ্ন।
১৯৮১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের লাখো মানুষের সাথে স্কুলপড়া একজন ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে ঢাকার কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে উপস্থিত হওয়ার সৌভাগ্য আমারও হয়েছিল। ঝড়-বাদল আর জনতার আনন্দাশ্রুতে অবগাহন করে শেরেবাংলা নগরে লাখ লাখ মানুষের সংবর্ধনা ও হৃদয় নিংড়ানো শ্রদ্ধা-ভালোবাসার জবাবে বাবা-মা-ভাইসহ স্বজন হারানোর বেদনায় কাতর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেছিলেন- ‘সব কিছু হারিয়ে আপনাদের মাঝে এসেছি। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তার আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির জনকের হত্যার বিচার করতে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই। বাংলার দুঃখী মানুষের সেবায় আমার এ জীবন দান করতে চাই। আমার আর হারানোর কিছুই নেই। বাবা-মা, ভাই সবাইকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি, আপনাদের মাঝেই তাদের ফিরে পেতে চাই। আপনাদের নিয়েই আমি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তা বাস্তবায়ন করে বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই, বাঙালি জাতির আর্থসামাজিক সার্বিক মুক্তি ছিনিয়ে আনতে চাই।’ শেখ হাসিনা সে দিন জনগণকে দেয়া সেই অঙ্গীকার পূরণে ৩৬ বছর ধরে প্রতিনিয়ত মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে জনগণের ভাগ্যবদলে নিরলস প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন।
১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে স্র্রোতের বিপরীতে উজানে নাও বাওয়া শুরু করেছিলেন- জাতির জীবনে সাফল্যের পালক পরিয়েই তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন। তাকে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছে কুড়িবারের বেশি। যারা স্বপ্ন দেখেছিলেন, বঙ্গবন্ধুহীন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ আর কখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না, তাদের সব হিসাব-নিকাশ যেন মুহূর্তের মধ্যে পাল্টে গেল। দেশের মাটিতে নেমেই অন্ধকার দুঃসময়ে আলোর প্রদীপ জ্বালিয়ে তিনি নামলেন গণতন্ত্রের সংগ্রামে। গণমানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ে নিরন্তর সংগ্রামে এক অবিস্মরণীয় গণজাগরণই শুধু ঘটালেন না; মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন করে দেশের জনগণকে সুসংগঠিত করে ঐক্যের রাজনীতির শুভ সূচনা করলেন। তারই হাত ধরে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাঁসি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মধ্য দিয়ে দেশ দায়মুক্ত, কলঙ্কমুক্ত হতে পেরেছে। তারই বলিষ্ঠ ও সাহসী নেতৃত্বগুণে বাংলাদেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। স্বপ্ন দেখছে উন্নত বিশ্বের কাতারে পৌঁছার। অর্থনীতি, রাজনীতি, শিক্ষা থেকে শুরু করে সর্বত্রই আজ উন্নয়নের জোয়ার।
আমরা যারা বঙ্গবন্ধুর স্নেহসান্নিধ্য পাইনি, তারা তার যোগ্য উত্তরসূরি শেখ হাসিনার স্নেহসান্নিধ্যে ধন্য হলাম। আমরা তার স্নেহচ্ছায়ায় কাছে থেকে দেখলাম, দুঃখী বাংলার মানুষের প্রতি তার গভীর ভালোবাসা ও আস্থা এবং দেশের মাটি ও মানুষের প্রতি কমিটমেন্ট। তার সাহসী সংগ্রামের একজন নিবেদিত কর্মী হিসেবে বিস্ময়ের সাথে দেখেছি তিনি কিভাবে একের পর এক প্রাণনাশের আঘাত, হামলা, নির্যাতনের মুখে অমিত সাহসিকতার সাথে নেতৃত্বই দিলেন না, আমাদের বুকে প্রতিবাদ-প্রতিরোধের আগুনও জ্বালিয়ে দিলেন। তার নেতৃত্বে পরিচালিত আন্দোলনের বাঁকে বাঁকে কত ষড়যন্ত্রের জাল ফেলা হয়েছে! এসব ছিন্ন করেই অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে শুভ ও কল্যাণের বাতি জ্বালিয়ে দ্বিধাহীন চিত্তে বৈরী স্র্রোতের বিরুদ্ধে তার সংগ্রামকে অভীষ্ট লক্ষ্যে নিয়ে গেছেন। তার স্নেহচ্ছায়ায় জাকসু ভিপি থেকে ছাত্রলীগের সভাপতি, আওয়ামী লীগের তিন মেয়াদে সদস্য, এক মেয়াদে সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলাম। এখন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। জাতির পিতার আদর্শের একজন কর্মী হয়ে রাজনীতির পথপরিক্রমায় খুব কাছে থেকে দেখার চেষ্টা করেছি জননেত্রী শেখ হাসিনাকে।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা রাজনীতির দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ নামের ঐতিহ্যবাহী দলটিকে ব্যালট বিপ্লবে ক্ষমতায় এনে প্রচলিত আইনে সাধারণ মানুষের কাতারে দাঁড়িয়েই বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার করেছেন। গোটা বিশ্ব তার এই উদার দৃষ্টিভঙ্গি দেখে অভিভূত হয়েছে। সংসদীয় গণতন্ত্রে সংসদকে সব কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু করতে তিনি ‘প্রাইম মিনিস্টার আওয়ার্স’ চালু করে প্রতি সপ্তাহে সংসদ সদস্যদের প্রশ্নের জবাব দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন। বঙ্গবন্ধুর রক্ত যার ধমনিতে, কোনো ভয়-ডর তাকে দমাতে পারে না। তা তিনি ফের প্রমাণ করেছেন। ওয়ান-ইলেভেনে প্রাসাদ ষড়যন্ত্র ও দেশী-বিদেশী চক্রান্তের বিরুদ্ধে তিনিই প্রথম এর সাহসী প্রতিবাদী চরিত্র উন্মোচন করে গণতন্ত্র ও ব্যালটের পথে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলেছেন। সব বাধা অতিক্রম করে দেশে ফেরার মধ্য দিয়ে আবারো প্রমাণ করেছেন, এই দেশ ও মানুষের জন্য জীবন দিতেও তিনি কার্পণ্য করবেন না। তিনি সবসময় বলেন, দেশের জনগণের কল্যাণে প্রয়োজনে নিজের জীবন উৎসর্গ করবেন। সংগ্রামমুখর জীবনের পরতে পরতে তিনি তা প্রমাণ করেছেন। আমরা যারা তার কর্মী তাদের জীবনকে তিনি মহিমান্বিত করেছেন। ‘মাইনাস ফর্মুলা’র ষড়যন্ত্র, কারা নির্যাতন তাকে দমাতে পারেনি।
শুধু জনগণের ওপর ভর করা এই সাহসী নেত্রী ফের বিজয়ী হয়ে জনরায় নিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। এই মানবিক হৃদয়ের অসীম সাহসী দেশরতœ শেখ হাসিনাকে কাছে থেকে দেখতে দেখতে অভিভূত হতে হয়। মানুষ ও কর্মীর জন্য তার দরদ, গরিবের জন্য ভালোবাসা উপলব্ধি করা যায়, বোঝানো যায় না। তাহাজ্জুদের নামাজ দিয়ে রাত শেষ হয়; ফজরের নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত ও সংবাদপত্র পড়ে তার দিন শুরু হয়। খাওয়া-দাওয়ায় একেবারেই সাদামাটা। তিনি নিজে রান্না করতে পছন্দ করেন, তার চেয়ে বেশি আতিথেয়তার সাথে খাওয়াতে পছন্দ করেন। বিশ্বে এমন কজন রাষ্ট্রনায়ক আছেন, যারা নিজ হাতে রান্না করে কর্মী ও সন্তানদের খাওয়ান? সাধারণের মতোই জীবনযাপনে অভ্যস্ত আমাদের মহান নেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের গৌরব। একজন সম্ভ্রান্ত পরহেজগার মুমিন মুসলমান এবং তার চিন্তা ও চেতনাজুড়েই অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাজনীতি জায়গা নিয়েছে। সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলতে তিনি দ্বিধা করেন না। খোলা বইয়ের মতো তার রাজনীতি ও জীবন মানুষের সামনে উন্মুক্ত করেই তিনি পথ হাঁটেন। তার সারল্য শিশুর মতো। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল তার হাতের কাছেই শোভা পায়। অবসরে বইয়ের মধ্যে ডুবে থাকতে দেখেছি তাকে। তিনি নিজে যেমন পড়াশোনায় মগ্ন থাকেন, তেমনি আমাদেরও পড়াশোনার তাগিদ দেন। সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করলেও ক্ষমতার কাছে ভিড়তে দেননি। জননেত্রী শেখ হাসিনা হচ্ছেন স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, পতাকা ও মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র রক্ষক। নিজে রাজনীতি করার পাশাপাশি তার দুই সন্তানকেও সুশিক্ষিত করে তুলেছেন। ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় আজ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন তথ্যপ্রযুক্তিবিদ। যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তথ্যপ্রযুক্তিতে তিনি উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছেন। মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অটিজম বিশেষজ্ঞ হিসেবে জাতিসঙ্ঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় সুনামের সাথে কাজ করে যাচ্ছেন।
জননেত্রী শেখ হাসিনা এমন একজন নেত্রী যিনি কর্মীদের ভালোবাসেন নিজ সন্তানের মতোই। মায়ের স্নেহ-মমত্ববোধ থেকে সন্তানদের বঞ্চিত করে তা কর্মীদের নির্দ্বিধায় দেন। অসহায় বিপন্ন মানুষের কাছে ব্যাকুল চিত্তে তিনি ছুটে যান মানবিক হৃদয় নিয়ে, মায়ের ভূমিকায় পাশে দাঁড়ান। তার মতো স্নেহশীল মা, কর্মীবান্ধব সভানেত্রী, প্রাজ্ঞ দৃঢ়চেতা দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক নেত্রী যেভাবে দেশ ও মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নিরন্তর পথ চলছেন, দেশের স্বার্থে যেভাবে আপসহীন দৃঢ়তা দেখিয়ে এসেছেন, তা ইতিহাসে তাকে অমরত্ব দেবে। বিশ্ববরেণ্য নেতারা শেখ হাসিনা সম্পর্কে বলেছেন, ‘মেধা, যোগ্যতা, সততা আর দক্ষতায় শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ায়ই নয়, সমগ্র বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে পারেন।’ ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িটিও তিনি জনগণকে দিয়েছেন। লোভ, মোহের ঊর্ধ্বের পথচলা বিশ্ববরেণ্য নেত্রী আমাদের জননেত্রী শেখ হাসিনা যত দিন বেঁচে থাকবেন, আমাদের রাজনীতিতে নেতৃত্ব দেবেন, তত দিন দেশ উন্নয়নের সিঁড়িপথেই হাঁটবে, তত দিন গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি বিকশিত হতেই থাকবে, তত দিন গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হতে থাকবে। দেশ হবে তার স্বপ্নের দারিদ্র্যমুক্ত বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ। আজ তার এই দেশে ফেরার শুভ দিনে মহান আল্লাহর কাছে তার সুস্থ, কর্মঠ ও দীর্ঘজীবন প্রত্যাশা করি। এই দেশ ও মানুষের ভাগ্য জড়িয়ে আছে এই মহান নেত্রীর ভাগ্যের সাথে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের মনের দোয়া কবুল করুন। শেখ হাসিনা দীর্ঘজীবী হোন।
লেখক : উপমন্ত্রী, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সরকার। সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আওয়ামী লীগ। সাবেক সভাপতি ছাত্রলীগ; জাকসুর সাবেক ভিপি