হতাশা ‘ভাইরাস’ রোধ করতে পারে পরিবারই!

প্রকাশিতঃ 7:20 pm | September 17, 2018

ফারজানা জুঁই (অগ্নিকন্যা) :
আমাদের সবার মনে খুব সুন্দর করেই কম বেশি জায়গা করে নিয়েছে হতাশা। আমরা কেউই মনের দিক দিয়ে শান্তি অনুভব করতে পারিনা। আজকাল শুধু মনে হয় আরো কেন সুখী হলাম না আরো ভালো কিছু কেন পেলাম না? অভিযোগ এর শেষ নেই। আমাদের সবচেয়ে আপন মানুষকেও তাই আমরা এক সময় হারিয়ে ফেলি। বেশির ভাগ মানুষই তার মনের জটিলতা থেকে কাছের মানুষের সাথে দূরত্ব তৈরি করে ফেলে এর কারণ কি?

আমরা আশা করি বেশি কিন্তু আশা করার মত মানুষ কিনা সে তা একবার কি ভেবে দেখি? বারবার কেন আশা করতে হবে এমন কারো থেকে যে আপনার হতাশার কারণ হবে একটু কি নিজেকে ভালোবাসা যায়না? আজ থেকে আশা করা কমিয়ে দিন দেখবেন হতাশা আপনার থেকে কমতে শুরু করেছে। আমরা খুব সহজে কারো কথা মেনে নিতে চাইনা। মনের ভেতর শুধু নেগেটিভ চিন্তা আর মনে হয় আমি কারো কথা কেন শুনবো? আমি আমার মত চলব তবে কেন আশা করেন সেই মানুষ আপনার কথা শুনবে? এই ভাবেই অন্যের কাছে এক সময় আমরা আমাদের সম্মান হারিয়ে ফেলি।

একা হয়ে যাই মন এর সাথে যুদ্ধ করে এক সময় আর পেরে উঠি না তখন অনেক দূরের মনে হয় আপন মানুষদেরও মাঝেও তখন বাসা বাধে হতাশার। মা বাবা ও আশা করে তার ছেলে মেয়ের কাছে কিন্তু এই যুগের ক’জন সন্তান তার অভিভাবক এর কথা শুনে? সারা রাত জেগে থাকা এই প্রজন্মের ফ্যাশন হয়ে গেছে। মা বাবার হাজার আপত্তি থাকলেও তা শোনার মত সময় তাদের হয় না।

এক সময় তারা অনলাইনে বেশি সময় দেয় আর পরিবার থেকে দূরত্ব তৈরি হয়। এই প্রথম ধাপ থেকেই তাদের এলোমেলো জীবন যাপন থেকে কাজের প্রতি তৈরি হয় অনীহা। এক সময় লেখাপড়া ও ভালো লাগেনা এভাবে ভালো ফলাফল ও হাতছাড়া হয়ে যায় হতাশা তৈরি হয়। এরপর এই হতাশা তাদের কর্মজীবনের উপরেও পড়ে!

অনেকে এই হতাশার জন্য বেকার হয়ে যায়। কিছুই ভালো লাগেনা কোনো কাজে মন বসেনা! আজ থেকে আমরা সচেতন হই সন্তানকে সময় দেই। তার সাথে কাউকে তুলনা করে তার হতাশা তৈরি না করে তাকে আরো অনুপ্রেরণা দেই, অবশ্যই তুমি সফল হবে আল্লাহর উপর ভরসা রাখো আর চেষ্টা করতে থাকো।

অভিভাবক যদি বন্ধুর মত তাদের সব সময় পাশে থাকে তাদের চাওয়া পাওয়ার মূল্য দেয় কখনো অন্যের সাথে নিজের সন্তানকে তুলনা না করে তবে এই হতাশা তৈরি হবে না। গ্যারান্টি দিয়ে আমি বলতে পারি আর আপনার সন্তানও তখন আপনাকে সম্মান দিবে খুব কঠিন কিছুই না সমাধান বের করা। কিন্তু আমরা কখনো নিজের ভুল খুজে পাইনা তাই

সমাধান ও আর খুঁজে পাইনা। কেন এত আশা করতে হবে আপনার সন্তানের থেকে যেখানে তাকে ছোট করে অন্যের সাথে তুলনা করতে হবে?এইভাবে আপনি আপনার সন্তানের ক্ষতি করছেন তা কী ভেবে দেখেছেন? কখনো না ভাবলে আজ থেকেই ভাবতে শুরু করে দিন আপনার জন্য তার ভবিষ্যতটা হতাশায় শেষ হয়ে গেলে সবচেয়ে খারাপ আপনার ই লাগবে। তাই সন্তানকে সময় দিন! পরিবারই পারে একমাত্র হতাশা নামের ভাইরাসকে রোধ করতে।

আপনার সামান্য অবহেলা আপনার সন্তানের জন্য অভিশাপ এনে দিতে পারে পাশাপাশি তার ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও। তাই আজ থেকেই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সন্তানকে হতাশা থেকে বের করতে সাহায্য করুন নয়তো খুব বেশি দিন নেই আপনি নিজেই হতাশায় ভুগবেন। আপনার প্রিয় সন্তানের মানসিক অবস্থা দেখে। আর হতাশায় থাকা মানুষগলো আজ থেকে পরিবর্তন করুন আপনাকে।

একা থেকে নয় পরিবারের সাথে বেশি সময় দিন। ঘুরতে বের হন। আপনার ইচ্ছাগুলো আপনি আপনার মত করে সাজান রং তুলিতে, ভালবাসা, আন্তরিকতা আর দায়িত্বশীল হয়ে উঠুন পরিবারের কাছে। এক সময় আপনার প্রিয়জন ও আপনাকে গুরুত্ব দিবে। শুধু তাই নয়, সম্মান করবে। দুরত্ব কমবে এবং আপনাকে ভরসা করবে।

মন দিয়ে কথা শুনুন প্রিয় জনের তার চাওয়া পাওয়ার মূল্য দিন। নিজেকে ব্যস্ত রাখতে চেষ্টা করবেন এমন কাজে আনন্দ পাবেন গান শুনুন, মুভি দেখুন পরিবারকে নিয়ে। একা থাকা মাঝে মাঝে সবার ই ভালো লাগে তবে সেই সময় কারো দূরত্বের কারণ যেন না হয় লক্ষ রাখবেন। আশা করি আপনি সফল হবেন আজ থেকেই হতাশা থেকে বের হবার চেষ্টা শুরু করুন আল্লাহ’র উপর ভরসা রেখে দেখবেন আপনার জীবনটা বদলে যায় কিনা। হতাশা আর নয়। সফলতা করবো জয়, এই হোক আমাদের প্রতিজ্ঞা।

লেখক : ইনকাম ট্যাক্স কনসালটেন্ট, ঢাকা ট্যাক্সেস বার এসোসিয়েশন।

Print Friendly, PDF & Email