আল-আমান বাহেলা খাতুন জামে মসজিদের আদ্যোপান্ত
প্রকাশিতঃ 4:55 pm | May 06, 2021

কালের আলো সংবাদদাতা:
দৃষ্টিনন্দন নির্মাণশৈলী দ্বারা নির্মিত আল-আমান বাহেলা খাতুন জামে মসজিদ। সিরাজগঞ্জ-এনায়েতপুর সড়কের বেলকুচি পৌরসদরে অবস্থিত। মসজিদ ভবনটি যে কেউ প্রথম দেখলেই মনের অনুভূতি হবে, এ যেন সৃষ্টির সঙ্গে স্রষ্টার এক অপূর্ব মেলবন্ধন।
মসজিদটিতে একসঙ্গে প্রায় ৭ হাজার মানুষ নামাজ পড়তে পারেন। শুধু বিশাল আয়তনই নয়, মসজিদটি দৃষ্টিনন্দন নির্মাণশৈলীর মাধ্যমে সিরাজগঞ্জবাসীর মনোযোগ আকৃষ্ট করেছে। অনেকেই ধারণা করছেন— নির্মাণশৈলীর দিক থেকে এটি দেশের অন্যতম সেরা মসজিদ হবে।
মসজিদের ছাদের মাঝে বিশাল আকৃতির গম্বুজের পাশাপাশি ছোট ছোট আরও আটটি গম্বুজ সহ দুপাশে রয়েছে ১১০ ফিট উচ্চতার দুটি মিনার রয়েছে। মার্বেল পাথরের পিলার,কারুকাজ করা টাইলস ও অন্যান্য উপকরণগুলোও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সংগ্রহ করা। দীর্ঘ ৯ বছর ধরে দেশী-বিদেশী নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে নির্মিত হয় দৃষ্টিনন্দন এ মসজিদ।
মসজিদের ভেতরে বাহিরে ভারত, ইতালি ও তুরস্ক থেকে আনা মার্বেল পাথর ও গ্রানাইট পাথরে মোড়ানো। এছাড়া চীন থেকে আনা হয়েছে বড় বড় ঝাড়বাতি, যা দিয়ে সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুন।
মসজিদ সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কাজ শুরু হয়ে দীর্ঘ ৯ বছরে নির্মাণ করা হয় এই মসজিদটি। বেলকুচি উপজেলার ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী সরকারে ব্যক্তিগত অর্থায়নে এক একর জমির ওপর তার ছেলে আল-আমান ও মা বাহেলা খাতুনের নামে ‘আল-আমান বাহেলা খাতুন জামে মসজিদ’ নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি। কিন্তু ২০২০ সালের ২ আগস্ট মসজিদটি উদ্বোধনের আগেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পরে তার ছেলেরা নির্মাণকাজ শেষ করেন।
মোহাম্মদ আলী সরকারের ছেলে বলেন, ৯ বছর সময় লেগেছে কাজ শেষ করতে। এখনও পুরাপুরি শেষ হয় নাই, আরও অনেক কাজ বাকি আছে। বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন ধরনের টাইলসগুলো আনা হয়েছে। আমরা এখন পর্যন্ত যা দেখছি, করোনার জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন আসতে পারছে না। তারপরও সারা বাংলাদেশ থেকে বিশেষ করে আমাদের দক্ষিনবঙ্গ থেকে লোকজন আসছে। এটা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না এটা আমাদের কি ধরনের আনন্দ।

মুসল্লিদের অজু করার জন্য আধুনিক অজুখানা রয়েছে এখানে। মসজিদের প্রধান ফটকের সামনে সিঁড়ির দু’পাশে রয়েছে পানি রাখার বড় বড় ২টি পাত্র। স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফিল্টার হয়ে সেখানে পানি জমা হয়। পরিমাণে কমে গেলে আপনা আপনিই ভরে যায় পাত্রগুলো।
মসজিদে নামাজ পড়তে আসা একজন মুসল্লি বলেন, মসজিদের মালিক পশ্চিমা বিশ্বের সাথে মিল রেখে আধুনিক টেকনোলোজি ব্যবহার করে একদম ডিজিটাল পানির ফিল্টারাইস করে একটি অজুর পানি রিজার্ভ থাকে এমন একটি ব্যবস্থা করেছে। এটা পান যোগ্য এবং ১০০% ফিল্টারাইস।
মসজিদটিতে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের নামাজ আদায়ের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রতিদিন অনেকেই আসে এখানে নামাজ আদায় করতে।
স্থানীয় একজন জানালেন, আমাদের এখানে একটা মসজিদ হয়েছে এটা আমাদের গর্বের বিষয়। এলাকার সব মানুষ এখানে এসে নামাজ আদায় করে। বাহির থেকেও অনেক মানুষ আসে নামাজ পড়তে দেখে যায়।

রাজশাহী থেকে আসা এক মুসল্লি বললেন, মোবাইল মাধ্যমে দেখছি যে, আমান বাহেলা খাতুন মসজিদটি সুন্দর দেখতে। আমরা তিন জন মিলে রাজশাহী থেকে সকালে রওনা দিয়েছিলাম নামাজ পড়ার জন্য। এখানে প্রচুর মুসল্লি হয়। মহিলাদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ব্যবস্থা আছে। পর্দার ব্যবস্থা আছে তারাও নামাজ পরতে পাড়বে। যারা নামাজ পড়তে ইচ্ছুক তারা অবশ্যই আসবেন।
মসজিদটি পরিচালনা রয়েছে ২ জন ইমাম ও ৬ জন খাদেম। সৌন্দর্যবর্ধন আর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য চুক্তি ভিক্তিক শ্রমিকেরা কাজ করেন।
শুধু দিনের আলোতেই নয়, রাতের বেলাতেও সৌন্দর্যের কমতি নেই। ঝাড়বাতি ও অনন্যা উৎসের রঙ্গের আলোকছটা। মসজিদের সৌন্দের্য উপভোগের পাশাপাশি এখানে নামাজ আদায় করতে পেরে প্রশান্তির কথা জানান দর্শনার্থীরা।
স্থানীয় এক যুবক বললেন, বিভিন্ন রকম চিন্তা করে অবশেষে সে তার মতো করে বানানোর জন্য বিভিন্ন দেশে থেকে বিভিন্ন রকম টাইলস, লাইট,ফ্যান আলোকশয্যা কাকে বলে এতটুকু কমতি নাই এ মসজিদে।

মসজিদের স্থানীয় মুসল্লি বলেন, মসজিদে যে কারুকার্য তথা আমাদের বেলকুচির মধ্যে ভালো একটা মসজিদ তথা সিরাজগঞ্জ তথা উওরবঙ্গের মাঝে একটা দৃষ্টিনন্দন মসজিদ এখানে। এখানে যে ডিজাইন সেখানে প্রত্যেকটিতে আধুনিকতার ছোঁয়া। এখানে পানি ও ওজু করার ব্যবস্থা সব দিক দিয়ে মসজিদটা ডিজিটালাইজ।
মসজিদের অন্যতম খাদেম আবদুল মান্নান ও মুসল্লি সুজন মাহমুদ বলেন, এ মসজিদে ছাই রঙের বিশালাকৃতির মনোরম একটি গম্বুজ রয়েছে। এ ছাড়া মেঝেতে সাদা রঙের ঝকঝকে-তকতকে টাইলস এবং পিলারগুলো মার্বেল পাথর জড়ানো রয়েছে।
তৃতীয় তলায় গম্বুজের সঙ্গে লাগানো ছাড়াও অন্যান্য স্থানে চায়না থেকে আনা বেশ কয়েকটি আলো ঝলমল ঝাড়বাতি লাগানো হয়েছে। দুই পাশে নির্মাণাধীন ১১ তলা সমতুল্য (১১০ ফিট) উচ্চতার মিনার থেকে আজানের ধ্বনি জমিনে ছড়িয়ে পড়ছে।

প্রয়াত আলহাজ মোহাম্মদ আলী সরকারের পরিবারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট একজন বলেন, আল্লাহর ঘর নির্মাণে আমরা কাজ করেছি। নিজেদের এখানে আমরা কোনো প্রচার চাই না।
মানুষ শান্তিতে নামাজ পড়বে তাতেই আমাদের শান্তি। তবে মসজিদ নির্মাণের স্বপ্নদ্রষ্টা মোহাম্মদ আলী সরকার বেঁচে থাকলে এবং তিনি এখানে নামাজ পড়তে পারলে আরও বেশি ভালো লাগতো। এটিই আমাদের অপূর্ণতা রয়ে গেল। সবাই দোয়া করবেন আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতবাসী করেন।
চলতি বছরের ২ এপ্রিল জুমার নামাজের মধ্য দিয়ে মসজিদটির উদ্বোধন করা হয়।

কালের আলো/এসবি/এমএম