পুলিশে সিনিয়র কর্মকর্তা পদে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পরিবর্তনের চিন্তা চলছে : আইজিপি

প্রকাশিতঃ 5:11 pm | March 22, 2021

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

পুলিশে সিনিয়র কর্মকর্তা পদে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পরিবর্তনের চিন্তা চলছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম(বার)।

তিনি বলেছেন, গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় পুলিশের ওপর নির্ভরতা অনেক বেশি। জেন্ডার পুলিশিংয়ের ক্ষেত্রে গত ১০-১২ বছরে অনেক পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে যে সিভিল সার্ভিস সিস্টেম তাতে এ যুগের পুলিশিংয়ের চাহিদা পূরণ করা কঠিন। তাই পুলিশে সিনিয়র কর্মকর্তা পদে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পরিবর্তনের চিন্তা চলছে।

সোমবার (২২ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটরিয়ামে ‘জেন্ডার রেসপন্সিবল পুলিশিং : অ্যান অ্যাপ্রোচ অব বাংলাদেশ পুলিশ’ শীর্ষক বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্ক (বিপিডব্লিউএন) আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন বিপিডব্লিওএন’র সভাপতি ও এসবির ডিআইজি আমেনা বেগম।

ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ এখন রোল মডেল। বিশেষ করে গত ১২ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে বিস্ময়কর উন্নয়ন হয়েছে। আমরা এগিয়েছি অনেক দূর। তবে এখনও যেতে হবে বহুদূর। আমরা অর্থনৈতিকভাবে উন্নতি করছি। কারণ নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে অর্থনীতিতে।

তিনি বলেন, জাতি হিসেবে আমরা অনেক দূর এসেছি, আমাদের যেতে হবে বহুদূর। আমাদের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেছে। ২০০০ সালের পরে যাদের জন্ম তারা এদেশের অনেক ইতিহাস চোখে দেখিনি।

‘দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় বাস্তবায়নে নারী-পুরুষ সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বে ১৮ কোটি মানুষের ৩৬ কোটি হাতের সম্মিলিত প্রয়াসে আমাদের উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেছে। ২০৪১ সালে ধনী দেশে পরিণত হওয়ার মধ্য দিয়ে আমাদেরকে ‘সোনার বাংলার’ গর্বিত বন্দরে উপনীত হতে হবে।’

বাংলাদেশ পুলিশে উইমেন পুলিশিং বাড়ছে উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, জাপান পুলিশে মাত্র ৭ শতাংশ নারী। আমাদের ৭.৯ শতাংশ। আমরা টার্গেট করেছিলাম ২০১৫ সালের মধ্যে ১৫ শতাংশে পৌছবো। সেটা পারিনি। আমি বিডিডব্লিওএনকে পরামর্শ দিয়েছি স্কুল-কলেজে গিয়ে পুলিশে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রেজেন্টেশন দিতে।

নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে একেক সময় একেক ধারণার প্রচার পেয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগে স্কুল বা ব্যাংকে নারীরা কাজ করতো। এমন ধারণা ভাংতে শুরু করেছে। এখন কোথায় নেই পুলিশ। বাংলাদেশ পুলিশ এক্ষেত্রে পাইওনিয়র। অনেকে মনে করেন পুলিশ সিকিউরড জব নয়, এই ধারণা আমাদের ভাঙতে হবে।

পুলিশ প্রধান বলেন, পুলিশিং কিভাবে আধুনিক, মানবিক করা যায় সেটা নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। তবে সমাজের পরিবর্তনের সাথে সাথেই পুলিশকে এগিয়ে নিতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা অন্য কোনো দেশ থেকে পুলিশিং সিস্টেম কাট কপি করতে চাই না। কারণ আমাদের দেশের অবস্থা, সমাজব্যবস্থা, ঐতিহ্য সম্পূর্ণ আলাদা। যেখানে অনেক তাপ সেখানে অনেক আলো আছে। লাইট বাড়াতে হলে তাপ বাড়াতে হবে। আগে বিমানবন্দরে গেলেই হয়রানি হতে হতো। সেখানকার চিত্র বদলে গেছে। সেখানে পুলিশ আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে খুব ভালো কাজ করছে। জেন্ডার পুলিশিংয়ের ক্ষেত্রে গত ১০-১২ বছরে অনেক পরিবর্তন এসেছে। আমরা অনেক আগেই উইমেন সাপোর্ট সেন্টার চালু করেছি। ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার চালু করেছি। শুধু ভিকটিম নারী না তাদের বাচ্চাদেরও দেখভাল করছে পুলিশ।

‘কোয়ালিটি পুলিশিংয়ের ক্ষেত্রে সংখ্যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দরকার কোয়ালিটি পুলিশিং। আমরা চেষ্টা করবো ৭ শতাংশ থেকে পুলিশে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য। আমরা পুলিশে যোগদানের পলিসি পরিবর্তনের চেষ্টা করছি। সেটা সম্ভব হলে অনেক পরিবর্তন আসবে।’

অনুষ্ঠানে পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন ও অপারেশন্স) ড. মোঃ মইনুর রহমান চৌধুরী, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) উপ-আবাসিক প্রতিনিধি ভ্যান নুয়্যান, বিসিএস নারী নেটওয়ার্ক এর মহাসচিব ও যুগ্ম সচিব স্থানীয় সরকার ও সমবায় মন্ত্রণালয় শায়লা ফারজানা উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় দেশের ৬৪ জেলার নারী পুলিশ অফিসাররা ভার্চুয়ালি এই অনুষ্ঠানের সাথে যুক্ত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, মুজিব বর্ষ উপলক্ষে ৩ টি ক্যাটাগরিতে রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে বিপিডব্লিউএন। ৩টি ক্যাটাগরিতে ৮ জন বিজয়ীকে পুরস্কৃত করেন আইজিপি। পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন- পুলিশ সুপার লালমনিরহাট আবিদা সুলতানা বিপিএম, পিপিএম, ময়মনসিংহ জেলার বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়িতা শিল্পী, নওগাঁ জেলার বিশেষ শাখার পুলিশ পরিদর্শক নন্দীতা সরকার, দিনাজপুর জেলার কোতয়ালী থানার নারী এসআই বিপ্লবী বেগম, ডিএমপির কনস্টেবল আফরিন সুলতানা, কনস্টেবল নাজনীন নাহার, কনস্টেবল সুমনা ইসলাম ও ঝালকাঠি জেলার কনস্টেবল সুখী দে।

কালের আলো/ডিএসবি/এমআরকে