উন্নয়নের ধারা বাধাগ্রস্ত করার যেকোন অপচেষ্টা প্রতিহত করতে সেনাবাহিনী প্রতিজ্ঞাবদ্ধ

প্রকাশিতঃ 8:05 pm | December 03, 2020

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়েই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আধুনিকায়ন করে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে দেশের পবিত্র সংবিধান ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধভাবে অভ্যন্তরীণ বা বহির্বিশ্বের হুমকি মোকাবিলায় সেনাবাহিনীকে সব সময় প্রস্তুত থাকতে আহ্বানও জানিয়েছেন বঙ্গকন্যা।

প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা প্রতিপালনে বদ্ধপরিকর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে চলমান  উন্নয়নের ধারা বাধাগ্রস্ত করার যেকোন অপচেষ্টা প্রতিহত করতে সেনাবাহিনী প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। 

পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক যে কোনও হুমকি মোকাবিলায় সদা প্রস্তুত থাকতে নিজ বাহিনীর সদস্যদের প্রতি কঠোর বার্তাও দিয়েছেন সেনাপ্রধান। কর্মদক্ষতা, কঠোর পরিশ্রম ও কর্তব্য নিষ্ঠার স্বীকৃতিস্বরূপ প্রাপ্ত জাতীয় পতাকার মর্যাদা রক্ষা এবং দেশমাতৃকার যেকোনো প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে সব ইউনিটকে প্রস্তুত থাকতেও দিয়েছেন নির্দেশনা জেনারেল আজিজ আহমেদ।

বৃহস্পতিবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুর ১২ টার দিকে কক্সবাজারের রামু ১০ পদাতিক ডিভিশন সেনানিবাসে নবগঠিত চারটি ইউনিটের পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সেনাপ্রধান অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় প্রচেষ্টার কথাও উপস্থাপন করেন।

সেনাপ্রধান নিজের বক্তব্যের শুরুতেই সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করেন ইতিহাসের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ এ দুটি একে অপরের সমার্থক।’

করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিজ বাহিনীর সদস্যদের পেশাদারিত্ব, সততা ও মানবিকতার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন সেনাপ্রধান। তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে বিশ্বের কাছে প্রশংসিত হয়েছে। এ সফলতার কারণে সেনাপ্রধান হিসেবে আমি গর্বিত।’

জাতির পিতার সোনার বাংলার স্বপ্ন আজ বাস্তবতা, এমনটি উল্লেখ করে জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, ‘মহান জাতির পিতার স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটেছে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে। উন্নয়নের এ ধারা অব্যহত থাকলে অচিরেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবে। আর এটি নিশ্চিত করতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করে যেতে হবে।’

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলাসহ দেশের আর্থ-সামাজিক এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে, অমিত দৃঢ়তায় উচ্চারণ করেন সেনাপ্রধান।

করোনার মতো মহামারি মোকাবিলায় সেনাবাহিনীর বিভিন্ন কর্মতৎপরতার বিশদ বিবরণ তুলে ধরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেনাবাহিনী নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ৩ লাখ ২৪ হাজার ৭০০ পরিবারকে খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি ২৯ হাজার ৬১ জন কৃষককে মৌসুমি ফসল বীজ বিনামূল্যে সরবরাহ করেছে। পোশাক দিয়েছে ২৯ হাজার ২৮৯টি দুস্থ পরিবারকে। এছাড়া সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সারাদেশে ৭৪ হাজার ২৩৫টি টহল পরিচালনা করেছেন সেনা সদস্যরা।’

সেনাবাহিনীর চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জীনবাজি রাখার প্রশংসা করে জেনারেল আজিজ আহমেদ আরও বলেন, ‘করোনার কারণে যখন সাধারণ মানুষের চিকিৎসাসেবা পেতে সমস্যা হচ্ছিল, তখন সেনাবাহিনীর চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী ক্যাম্প পরিচালনা করে ৫০ হাজার ৮৩১ জনকে চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন।

পাশাপাশি ১৪ হাজার ৬৪৭ জন গর্ভবতী মায়েদের দেয়া হয়েছে বিশেষ চিকিৎসাসেবা। দেশের বিভিন্ন স্থানে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার স্থাপন ও পরিচালনায় সেনাবাহিনী নির্ভরতা ও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে।

১০ পদাতিক ডিভিশন রামু সেনানিবাসে উপস্থিত সেনা সদস্যদের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের প্রতি আস্থা, পারস্পারিক বিশ্বাস, সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রেখে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সুশৃঙ্খল, দক্ষ ও যোগ্য সেনাসদস্য হিসেবে গড়ে ওঠার নির্দেশ দেন সেনাপ্রধান।

করোনাকালে সেবার মানদণ্ডে সেনাবাহিনীর চিকিৎসা ব্যবস্থা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বের কাছে রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলেও মনে করেন জেনারেল আজিজ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমাদের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রম, ত্যাগ ও সেবার মানসিকতা এ অর্জনের পেছনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।’

এর আগে সেনাপ্রধান অনুষ্ঠানে উপস্থিত হলে ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও এরিয়া কমান্ডার, কক্সবাজার এরিয়া মেজর জেনারেল আহমদ তাবরেজ শামস চৌধুরী তাকে অভ্যর্থনা জানান। পরে প্যারেড কমান্ডার মেজর রিফাত উদ্দিন ভূঁইয়ার নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একটি সম্মিলিত চৌকষ দল কুচকাওয়াজ প্রদর্শন এবং সেনাবাহিনী প্রধানকে জেনারেল সালাম প্রদান করেন।

অনুষ্ঠানে ন্যাশনাল কমান্ড কলেজের (এনডিসি) কমান্ড্যান্ট লেফটেন্যান্ট জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান, অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল (এজি) মেজর জেনারেল মো.এনায়েত উল্লাহসহ উর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, ১০ পদাতিক ডিভিশন ও কক্সবাজার অঞ্চলের চারটি ইউনিটের নবযাত্রার মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী উন্নয়ন রূপকল্প ফোর্সেস গোল ২০৩০-এর বাস্তবায়নের পথে আরেকটি মাইলফলক সংযোজিত হলো। এ ডিভিশন সকল প্রশিক্ষণ ও প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের নিরাপত্তা এবং ত্রাণ বিতরণের দায়িত্বে সফলভাবে নিয়োজিত রয়েছেন।

কালের আলো/এমএএএমকে

Print Friendly, PDF & Email