পোস্ট কোভিড-১৯ সিনড্রোমে বাংলাদেশের অবস্থান
প্রকাশিতঃ 10:46 am | November 07, 2020

ডা. শামীম তালুকদার:
করোনাকে একটা সময় স্বল্পমেয়াদি রোগ বলে মনে করা হলেও সেই কথা থেকে এখন সরে এসেছেন গবেষকরা। কারণ বর্তমানে মানুষের শরীরে করোনার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব আমরা দেখতে পাচ্ছি। এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের হাতে করোনা সংক্রান্ত যে সীমিত তথ্য ছিল তার ওপর ভিত্তি করে বলেছিল, মৃদু লক্ষণযুক্ত রোগীদের করোনা থেকে সেরে উঠতে দুই সপ্তাহ এবং গুরুতর রোগীদের ক্ষেত্রে করোনা থেকে সেরে উঠতে তিন থেকে ছয় সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। কিন্তু বর্তমানে কিছু গবেষণা বলছে, করোনাভাইরাস একজন মানুষের শরীরে মাসের পর মাস অবস্থান করতে পারে, এমনকি এটি একেবারে কখনও নাও সারতে পারে। অন্যান্য ফ্লু ভাইরাসের ন্যায় এটিও মানুষকে বারবার আক্রান্ত করতে পারে।
৬০% রোগীর ক্ষেত্রে দেখা গেছে যারা করোনার গুরুতর পর্যায়ের সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে এসেছেন তাদের ক্ষেত্রে তিন থেকে চার মাস পরেও করোনার প্রভাব থেকে যায়। এছাড়া যারা একবার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে ফুসফুস, হার্ট, ব্রেন, কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ব্যাপক আশঙ্কা রয়েছে। অনেকের শরীরে করোনার পরে বিভিন্ন রকম নতুন রোগের উপসর্গও দেখা দিয়েছে। আসন্ন শীত মৌসুমে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ আসতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা এবং এ পরিস্থিতিতে তারা আরও মনে করছেন, বাংলাদেশে পোস্ট কোভিড-১৯ সিনড্রোম নিরাময়ে এখনই উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। করোনা পরবর্তী শারীরিক সমস্যার গতি প্রকৃতি (পোস্ট কোভিড-১৯ সিনড্রোম) নিয়ে দেশে এখনও কোনও গবেষণা হয়নি। ফলে এর কোনও পরিসংখ্যানও নেই।
করোনায় আক্রান্তদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে রিপোর্ট নেগেটিভ আসার পরও রোগীরা বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। এর মধ্যে অধিকাংশ রোগীই ভুগছেন দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক দুর্বলতায়। তাছাড়া জ্বর ছাড়াই শরীর গরম থাকা; ফুসফুস সমস্যা, হাড় জয়েন্ট পিঠ ঘাড় কোমর হাতের কব্জি তালু গিরা আঙুল কনুই ও পায়ে ব্যথা; মাথাব্যথা, গলাব্যথা, শ্বাসকষ্ট, চুল পড়া; কিডনি সমস্যা, নতুন করে ডায়াবেটিস দেখা দেওয়া, উচ্চ রক্তচাপ সমস্যা; সিঁড়ি দিয়ে উঠলে, বেশিক্ষণ হাঁটলে, পরিশ্রম করলে বা ব্যায়াম করলে হাঁপানো; কিছু দিন পর পর সর্দি, কাশি, নাকবন্ধ, গলা চুলকানো, পেটের সমস্যা দেখা দেওয়া; চোখ ওঠা-চুলকানো ঘুমের সমস্যা হওয়া, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়া, স্বাদ-গন্ধ ফিরে আসতে দেরি হওয়া, স্মৃতিভ্রম সমস্যা ও হাত-পায়ের নখ কালো হওয়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশে বয়স্কদের মধ্যে অনেকেরই ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগসহ নানা ধরনের জটিল রোগ থাকে। বয়স্কদের ক্ষেত্রে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি। আর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরে বা করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার পরে বয়স্কদের আগে থেকে যে রোগ ছিল সেগুলো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে কিংবা নতুন করে বিভিন্ন রোগ বা রোগের উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
বিভিন্ন কেস স্টাডি থেকে দেখা গেছে, অনেক বয়স্ক ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরে তাদের ডায়াবেটিস বেড়ে যেতে দেখা গেছে এবং নতুন রোগ হিসেবে তাদের প্রেসারের সমস্যা দেখা দিয়েছে। আবার যারা প্রেসারের রোগী ছিলেন তাদের ক্ষেত্রে মাথা ঘোরা, শারীরিক দুর্বলতা দেখা দিয়েছে, যেটি বিভিন্ন প্রোটিন বা পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ কিংবা বিশ্রাম নিয়েও দূর করা যাচ্ছে না। অনেকের ক্ষেত্রে কয়েক মাস ধরে শারীরিক দুর্বলতা থেকে যাচ্ছে। কারও কারও ক্ষেত্রে ঘুম না হওয়া, শরীরের তাপমাত্রার তারতম্য হওয়া, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিয়েছে। হৃদরোগীদের ক্ষেত্রে করোনা পরবর্তী সময়ে বুকে ব্যথা, বুক ধড়ফড় করা, অবসাদগ্রস্ত হওয়ার সমস্যা অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে। কখনও কখনও হৃদস্পন্দন কমে যাচ্ছে।
করোনায় হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ:
আমেরিকান কলেজ অব কার্ডিওলজির রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, সাধারণ কোভিড রোগীদের মধ্যে যেখানে মৃত্যুহার ২.৩%, হৃদরোগ আছে এমন কোভিড আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে তা পৌঁছে যায় ১০.৫%-এ। ‘জার্নাল অব আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন, কার্ডিওলজি’-তে প্রকাশিত প্রবন্ধে বিজ্ঞানীরা জানান, রেসপিরেটরি ভাইরাস বলে করোনা ফুসফুসের ওপরই বেশি আক্রমণ করবে বলে ভাবা হয়েছিল, কিন্তু যত দিন গেলো, বোঝা গেলো, রোগ জটিল হতে শুরু করলে তার প্রভাব পড়ে শরীরের সব গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যঙ্গেই। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে ফুসফুসে জটিলতা দেখা দেওয়ার আগেই হার্ট আক্রান্ত হয়। আগে থেকে হৃদরোগ থাকলে সমস্যা হয় বেশি। কারণ হার্ট ও ফুসফুস শরীরে তাদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে একে অপরের ওপর নির্ভরশীল বলে একজনের ক্ষতি হলে তার প্রভাব পড়ে অন্যের ওপর। যাদের হার্ট দুর্বল, তাদের হার্টের ক্ষতি বেশি হয়। দুর্বল ফুসফুসের প্রভাবও হার্টে গিয়ে পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে হার্ট ফেইলরের আশঙ্কাও থাকে।
হৃদরোগীদের ক্ষেত্রে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুঝুঁকি কেমন হতে পারে এ নিয়ে বাংলাদেশেও বেসরকারি পর্যায়ে একটি গবেষণা হয়েছে। সম্প্রতি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিভাগ ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংখ্যা বিজ্ঞান বিভাগ সারাবিশ্বে পরিচালিত উল্লেখযোগ্য ৪১টি গবেষণাপত্রকে বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে এ প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টা করে। এতে দেখা গেছে, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগে ভুগছেন এমন ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হলে তার মৃত্যুঝুঁকি সাধারণ আক্রান্তদের চেয়ে প্রায় তিন থেকে চারগুণ বেশি।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমানোর জন্য রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। সাধারণত ৩০ বছর বয়স থেকে প্রত্যেকের নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা শুরু করা উচিত। রক্তচাপজনিত সমস্যা থেকেই পরবর্তীতে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ রক্তচাপজনিত অসুখ বা হাই ব্লাড প্রেসারের সমস্যায় ভুগছেন, এ সমস্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে লিঙ্গ, বয়স নির্বিশেষে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকটাই বেশি। এই সমস্ত রোগীর ক্ষেত্রে ঝুঁকি কেন বেশি, এই নিয়ে ক্লিনিক্যাল মেডিসিন জার্নালের রিসার্চ বলছে, উচ্চ রক্তচাপ মানেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। তাই ভাইরাস যুদ্ধে জয়ের সম্ভাবনাও কম। কিছুদিন আগেই ইউরোপের একটি জার্নালে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, করোনায় তাদের মৃত্যুহার সবচেয়ে বেশি, সংখ্যাটা প্রায় দ্বিগুণ। অনেকেই আছেন যাদের উচ্চ রক্তচাপ থাকলেও তারা কোনোরকম ওষুধ খান না বা অনেকেই আছেন তিনি নিজে জানেনও না যে তার হাই ব্লাড প্রেসার আছে। এক্ষেত্রে ঝুঁকি আরও কয়েক গুণ বেড়ে যায়।
করোনায় ডায়াবেটিস:
কোভিডে আক্রান্ত রোগীর দীর্ঘমেয়াদি জটিলতাগুলোর মধ্যে ডায়াবেটিস অন্যতম। ডায়াবেটিস রোগীর যেকোনও সংক্রমণ হলে স্ট্রেস হরমোন বেড়ে যায়। ফলে রক্তে গ্লুকোজ বৃদ্ধি পায় ও স্নায়বিক নিয়ন্ত্রণ কমে যায়। একইভাবে সংক্রমণের জটিলতার কারণে ইনসুলিনও অল্পমাত্রায় ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজসহ চারটি প্রতিষ্ঠানের একটি যৌথ গবেষণায় সম্প্রতি পাওয়া গেছে, চট্টগ্রামে কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হওয়ার পর প্রতি ১০০ জনে একজন (১%) ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছেন। আবার করোনায় আক্রান্ত প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন আগে থেকেই ডায়াবেটিস রোগী। কোভিড-পরবর্তী প্রতিক্রিয়া সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে। শুধু চট্টগ্রামে বা বাংলাদেশে নয়, কোভিড থেকে সেরে ওঠার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন। নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন-এ সম্প্রতি এক গবেষণা প্রবন্ধে দেখা যায়, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, ইতালি ও সিঙ্গাপুরে ০.২% থেকে ২.০% রোগী করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে কোভিডে আক্রান্তদের মধ্যে ২০%, ইতালিতে ১৭%, যুক্তরাষ্ট্রে ১১%, স্পেনে ১০% ও চীনে ১০% করোনা রোগীর আগে ডায়াবেটিস ছিল।
করোনায় কিডনি রোগ:
করোনার কারণে ঝুঁকিতে রয়েছেন কিডনি সমস্যায় আক্রান্ত রোগীরাও। বাংলাদেশে দুই কোটিরও বেশি মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত। কোভিড-১৯ এ গুরুতর আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরে অনেক সময় রক্ত জমাট বেঁধে রক্তনালি বন্ধ হয়ে যায়। এটার কারণেও অনেক সময় কিডনিতে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে এ অঙ্গটি অকেজো হয়ে পড়তে পারে। এছাড়া কোভিড-১৯ আক্রান্ত অনেকের শরীরে মারাত্মক নিউমোনিয়ার লক্ষণ থাকে এবং ভেন্টিলেশনের প্রয়োজন হয়। ফুসফুসে জমা তরল বের করতে ওই রোগীদের যে ওষুধ দেওয়া হয় তাতে তাদের পুরো শরীর থেকে তরল বের হয়ে যায়। ফলে কিডনিতে রক্ত সরবরাহ কমে যায় এবং কিডনি ঠিকমতো কাজ করতে না পেরে অকেজো হয়ে পড়ে। যেসব কিডনি রোগী ইমিউনোসাপ্রেসেন্ট ওষুধ ও স্টেরয়েড ব্যবহার করছেন, যাদের কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ এ ধরনের রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে।
কিডনি রোগীদের সংক্রমণ বেশি হয়, তাদের শারীরিক জটিলতাও বেশি। কারণ কিডনি আমাদের শরীরে ছাঁকনির কাজ করে। বিভিন্ন শরীরবৃত্তীয় কাজের ফলে রক্তে যে সমস্ত দূষিত পদার্থ জমা হয়, সেসব ছেঁকে বের করে শরীরকে সুস্থ রাখে কিডনি। শরীরে জল ও উপকারী লবণের ভারসাম্য বজায় রাখাও এই অঙ্গটির কাজ। কোনও কারণে কিডনির কার্যকারিতা কমে গেলে শরীরে দূষিত পদার্থ জমতে থাকে। ফলে শরীর এতই অসুস্থ হয়ে পড়ে যে, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায়। এর ফলে সংক্রমণজনিত অসুখ-বিসুখের আশঙ্কা বাড়ে। কাজেই কোভিডের এই পরিস্থিতিতে কিডনি রোগীদের বিশেষভাবে সাবধান থাকা দরকার। যারা ডায়ালাইসিস নিচ্ছেন, তাদের চিকিৎসক নির্দেশিত নিয়মে ডায়ালাইসিস অব্যাহত রাখতে হবে। যেকোনও অসুস্থতা, জ্বর-কাশি, গলাব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসককে দ্রুত অবহিত করতে হবে এবং পরীক্ষা করাতে হবে।
করোনায় মানসিক সমস্যা:
করোনায় আক্রান্ত রোগীরা অনেকাংশে মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। অনেক রোগীর মনে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরে মৃত্যু ভীতি তৈরি হয়েছে। তারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। অনেক রোগী ঠিকমতো ঘুমাতে পারছেন না। বিশেষ করে যে সকল রোগী আইসিইউতে চিকিৎসা নিয়েছিলেন তাদের মধ্যে মৃত্যু ভীতি বেশি। আইসিইউ’র ৭২% ও সাধারণ ওয়ার্ডের ৬০% ব্যক্তিই অবসাদগ্রস্ততায় ভুগছেন। যারা নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) থেকেছেন, তাদের শ্বাসক্রিয়া স্বাভাবিক হতে বেশ সময় লেগে যাচ্ছে। তাছাড়া মনোযোগ ও চিন্তাশক্তির সমস্যা, স্মৃতি হারানো, বিষণ্নতার মতো সমস্যা দেখা দিচ্ছে অনেকের। করোনা আক্রান্ত যেকোনও ব্যক্তিকে অন্য সুস্থ মানুষের থেকে আলাদা রাখা হয়। বাড়িতে থাকলে কার্যত ‘একঘরে’ করে রাখা হয় তাকে। হাসপাতালে ভর্তি হলে নার্স, চিকিৎসকরা আসা যাওয়া করেন ঠিকই, তবে পিপিই কিট পরে থাকার ফলে তাদের মুখই দেখা সম্ভব হয় না। একে পরিজনদের সঙ্গে দূরত্ব তার ওপর আবার রোগের দাপট। সব মিলিয়ে মানসিকভাবে ঠিক কীরকম পরিস্থিতি তৈরি হয় তা একজন করোনা রোগী বুঝতে পারেন। এ অবস্থায় করোনা রোগীদের অনেকের ক্ষেত্রে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হতে পারে।
উপসর্গহীন করোনা আক্রান্তদের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক প্রভাব:
করোনার দীর্ঘমেয়াদি প্রতিক্রিয়া নিয়ে এখনও গবেষণা হয়নি। কিন্তু চিকিৎসকরা বলছেন, করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়া অনেক মানুষ তাদের শরীরে নানা জটিলতা নিয়ে আবার হাসপাতালে যাচ্ছেন। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগের মতো সমস্যা যাদের আছে, করোনাভাইরাসের প্রভাবে তারাই বেশি নতুন নতুন জটিলতার মুখোমুখি হচ্ছেন। তবে প্রশ্ন হচ্ছে যাদের উপসর্গ নেই তাদের কি দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থ হওয়ার ভয় নেই? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উপসর্গ নেই বা আছে এবং বয়সের বিবেচনা কোনোটাই খাটছে না দীর্ঘ সময়ের নেতিবাচক প্রভাবের ক্ষেত্রে। তারা বলছেন, করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর উপসর্গ কম, মাঝারি এবং বেশি যাই থাকুক না কেন, তাদের সুস্থ হওয়ার পর কয়েক সপ্তাহ চিকিৎসকের পরামর্শে থাকা উচিত। তাহলে এর প্রভাব সম্পর্কে একটা ধারণা তৈরি করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
লেখক: জনস্বাস্থ্য গবেষক, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, এমিনেন্স বাংলাদেশ
(গবেষণা সহায়ক: মো. আজিজুল হক)