ইসির কার্যক্রমে লন্ডন বৈঠকের প্রতিফলন দেখছে না বিএনপি
প্রকাশিতঃ 5:06 pm | July 08, 2025

কালের আলো রিপোর্ট:
মাত্র এক মাসেরও কম সময় আগে গত ১৩ জুন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক শেষে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে একটি যৌথ ঘোষণা মিলেছিল। এর ফলে নির্বাচনের অনিশ্চয়তা কেটে গিয়েছিল বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হবে কিনা- এটা নিয়ে রাজনৈতিক দল এবং নাগরিক সমাজের মধ্যে নতুন করে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কার্যক্রমে আলোচিত লন্ডন বৈঠকের কোনো প্রতিফলন দেখছে না প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিও। দলটির নেতারা মনে করছেন, সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিসহ কিছু নতুন ইস্যু সামনে এনে জাতীয় নির্বাচনকে বিলম্বিত করার কৌশল নেওয়া হচ্ছে। বাস্তবে নির্বাচন নিয়ে কোনো অগ্রগতি দৃশ্যমান নয়। আবার, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার বিশেষ করে সিটি করপোরেশনগুলোর নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে কয়েকটি দল।
জানা যায়, গত ২৬ জুন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীনের ‘ওয়ান টু ওয়ান’ বৈঠকে রাজনৈতিক মহলে নতুন করে আলোচনা তৈরি করেছে। যদিও রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা আশা করেছিলেন, এই বৈঠকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত বা দিকনির্দেশনা আসবে, তবে সরকারি ভাষ্যে তা শুধুই ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’। এ বিষয়ে ইসিও কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেননি।
এখন পর্যন্ত নির্বাচনকেন্দ্রিক রোডম্যাপ বা স্পষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা না দেখা যাওয়ার মধ্যে কয়েকটি দলের পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি ক্রমশই রাজনীতির মাঠ ঘোলাটে করছে। এতে জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন রাজনীতিবিদসহ রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
সাধারণত পিআর পদ্ধতিতে মূলত আসনভিত্তিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকে না। ভোটাররা সরাসরি কোনো প্রার্থীকে নয়, ভোট দেন রাজনৈতিক দলকে। একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সেই অনুপাতে জাতীয় সংসদে তাদের আসন বরাদ্দ হয়। বিশ্বের প্রায় ৯১টি দেশে এ ধরনের পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দক্ষিণ এশিয়ার নেপাল ও শ্রীলঙ্কাও এই পদ্ধতি অনুসরণ করে। আবার কিছু দেশে সরাসরি ভোট ও অনুপাতিক পদ্ধতির সমন্বয়ে মিশ্র পদ্ধতি চালু রয়েছে।
এই পদ্ধতিতে ভোটের হারই নির্ধারণ করে আসনের সংখ্যা। যেমন, বাংলাদেশে যদি কোনো দল মোট গৃহীত ভোটের ১০ শতাংশ পায়, তাহলে সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে তাদের জন্য বরাদ্দ হবে ৩০টি আসন। ১ শতাংশ ভোট পেলে আসন পাবে ৩টি। এই বাস্তবতা নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে- বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় এই পদ্ধতি কতটা কার্যকর কিংবা গ্রহণযোগ্য?
বিএনপি ও সমমনা ছয়টি দল ও জোট এ পদ্ধতির বিরোধিতা করছে। অন্যদিকে, এ পদ্ধতিতে নির্বাচন ও আসন বণ্টনের দাবিতে সরব জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। যদিও এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ এবং এবি পার্টি সরাসরি এই পদ্ধতির পক্ষে অবস্থান নেয়নি, তবু এই দাবিকে তারা প্রকাশ্য সমর্থন জানিয়ে আসছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ মনে করেন, নির্বাচন বিলম্বিত বা না হওয়ার জন্য পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চাওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘পিআর পদ্ধতিতে যারা নির্বাচন আয়োজনের দাবি তুলছেন অথবা জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চাচ্ছেন, তাদের অবস্থান উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। হয় তারা জাতীয় নির্বাচন পেছাতে চাইছেন, নাহয় চাইছেনই না নির্বাচন হোক।’
সম্প্রতি ফেনীতে আয়োজিত জামায়াতের রুকন সম্মেলনে দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘ফ্যাসিজম তৈরির পথ বন্ধ করতে হলে পিআর পদ্ধতিকে বেছে নিতে হবে।’ তবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসেই জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করবে অন্তর্বর্তী সরকার, এমন প্রত্যাশা তার।
কালের আলো/এমএএইচএন