আবরারের পথেই আজাদির লড়াই: কুষ্টিয়ায় নাহিদ ইসলাম

প্রকাশিতঃ 5:09 pm | July 08, 2025

কুষ্টিয়া প্রতিবেদক, কালের আলো:

‘গোলামী নয়, আমরা আজাদি চাই’—এই স্লোগান সামনে রেখে শহীদ আবরার ফাহাদের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রার কুষ্টিয়া পর্ব শুরু হয়েছে। এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘আমরা আবরার ফাহাদের উত্তরসূরি। তিনি যে বাংলাদেশ দেখতে চেয়েছিলেন, আমরা সেই বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রামে আছি।’

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দুপুরে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার রায়ডাঙ্গা গ্রামে শহীদ আবরারের কবর জিয়ারত করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। এরপর শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পথসভা ও পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।

আবরার ফাহাদ: প্রতিরোধের প্রতীক

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ে আবরার ফাহাদ একটি মাইলফলক হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তার রক্ত বৃথা যায়নি। ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মিছিল আবরারের মৃত্যুর পরই ‘দিল্লি না ঢাকা’ স্লোগানে গর্জে উঠেছিল। আজও সেই স্লোগান আমাদের পথ দেখায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আবরার ফাহাদ থেকে আবু সাঈদ-মুগ্ধ—তারা যে বাংলাদেশ চেয়েছিলেন, তা কোনো গোলামির বাংলাদেশ নয়। জাতীয় নাগরিক পার্টি সেই বাংলাদেশ গড়তে সংগ্রাম করে যাচ্ছে।’

বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে শত শত মানুষ

সকাল ৯টায় পদযাত্রা শুরুর কথা থাকলেও টানা বৃষ্টির কারণে কিছুটা বিলম্ব হয়। এরপর দুপুর ১টার দিকে আবরারের কবর জিয়ারত শেষে কুমারখালীর আলাউদ্দিন মোড়ে এক সংক্ষিপ্ত পথসভা অনুষ্ঠিত হয়।

সেখান থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে কুষ্টিয়া শহরের বড়বাজার হয়ে পাঁচ রাস্তার মোড়ে গিয়ে মূল পথসভায় পরিণত হয়। বৈরী আবহাওয়া সত্ত্বেও শত শত মানুষ এই পদযাত্রায় অংশ নেন।

‘আজাদির জন্য আন্দোলন অব্যাহত থাকবে’

পাঁচ রাস্তার মোড়ের প্রধান পথসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র, কিন্তু বহু নীতিনির্ধারণে আমরা আজও পরোক্ষভাবে ভারতীয় আধিপত্যে নির্ভরশীল। যারা সেই আধিপত্যবাদের পক্ষ নেয়, তারা দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও মর্যাদার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে।’

তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘যদি কোনো রাজনৈতিক দল বা পক্ষ ভবিষ্যতে সেই আধিপত্যবাদের গোলাম হয়, তাহলে এনসিপি দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।’

আবরারের পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ

আবরারের কবর জিয়ারতের সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন তার বাবা বরকতউল্লাহ ও মা রোকেয়া বেগম। এনসিপির নেতারা তাদের সঙ্গে কথা বলেন, সমবেদনা জানান এবং প্রতিশ্রুতি দেন—আবরারের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েই তারা লড়াই চালিয়ে যাবেন।

একটি জাতীয় প্রতিবাদধর্মী কর্মসূচি

গত ১ জুলাই রংপুর থেকে শুরু হওয়া এই পদযাত্রা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল অতিক্রম করে বর্তমানে দক্ষিণাঞ্চলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। পদযাত্রার প্রতিটি পর্বে শহীদদের স্মরণ, পথসভা, প্রতিবাদ কর্মসূচি ও স্থানীয় মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় চলছে।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এই পদযাত্রা কোনো ব্যক্তির নয়, এটি জাতির। যারা চায় স্বাধীনতা হোক টেকসই, আত্মমর্যাদা হোক প্রতিষ্ঠিত—এই পদযাত্রা তাদের জন্য। আমরা সেই বাংলাদেশ চাই, যেখানে কোনো আবরার আর নির্যাতনের শিকার হবে না।’

আবরার ফাহাদের মৃত্যুর পর থেকে যে স্বতঃস্ফূর্ত জনজাগরণ সৃষ্টি হয়েছিল, তা এখন একটি সংগঠিত রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনের রূপ নিচ্ছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ‘আজাদির’ নতুন অর্থ খুঁজে পাচ্ছে—যেখানে শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বাধীনতা নয়, বরং নীতিগত ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতাও অগ্রাধিকার পায়।

কালের আলো /এএএন