এমপি পুত্র হাসান যদি ‘মেয়র’ প্রার্থী হন!
প্রকাশিতঃ 3:57 pm | October 10, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
হঠাৎ করেই ত্রিশালের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের আভাস মিলেছে। আসন্ন ত্রিশাল পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরেই মূলত ভেতরে ভেতরে রাজনীতির নানামুখী সমীকরণ চলছে। এ সমীকরণে নতুন আলোচনা-গুঞ্জণ তৈরি হয়েছে স্থানীয় সংসদ সদস্য পুত্র হাসান মাহমুদকে ঘিরে।
এ পৌরসভার বর্তমান মেয়র এ বি এম আনিসুজ্জামানকে ‘কিক আউট’ করে এবার প্রার্থী হতে পারেন সংসদ সদস্য পুত্র। সরকার দলীয় একজন প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য তাকে সেই রকমেরই একটি ‘সবুজ সংকেত’ দিয়েছেন বলে বাতাসে গুঞ্জণ ছড়িয়েছে।
সূত্র মতে, ত্রিশাল পৌরসভার বর্তমান মেয়র এ বি এম আনিসুজ্জামান নানা কারণেই দলীয় পরিমন্ডলে বিতর্কিত। গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জুয়েল সরকারকে হারিয়ে কোনমতে নির্বাচনী বৈতরণী পাড়ি দেন আনিস। তবে এজন্য তাকে অনেক কাঠ-খড় পুড়াতে হয়েছে।
এরপর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় প্রার্থী ইকবাল হোসেনকে নানা কূটকৌশলে ভোটে পরাজিত করা হয় বলে অভিযোগ ছিল। ইকবাল স্থানীয় সংসদ সদস্য হাফেজ রুহুল আমিন মাদানীর ঘনিষ্ঠ।
সেই নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ ও সংসদ সদস্য আব্দুল মতিন সরকার নির্বাচিত হন।
সূত্র জানায়, সেই ভোটকে ঘিরে স্থানীয় সাবেক দুই সংসদ সদস্য রেজা আলী, আব্দুল মতিন সরকার ও
পৌর মেয়র এ বি এম আনিসুজ্জামান গাঁটছড়া বাঁধেন। এই তিন হাত একত্রিত করে দেন জেলা আওয়া লীগের সহ-সভাপতি ও বিশিষ্ট রাজনীতিক আলহাজ্ব আমিনুল হক শামীম।
এরপর নিজেদের প্রতিটি পদক্ষেপে স্থানীয় সংসদ সদস্য মাদানীর বিপরীতে এক স্রোতে শামিল হয়েছেন রেজা-মতিন-আনিস প্যানেল। এ পর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও আকস্মিকভাবে ত্রিশালের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের সূচনা হয়েছে।
সূত্র বলছে, সংসদ সদস্য মাদানী পুত্র হাসান অনেক আগে থেকেই গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ ও সংসদ সদস্য বাবেল গোলন্দাজের একনিষ্ঠ অনুসারী। সম্প্রতি সেই পুরনো সম্পর্ক আরও জোরদার হয়েছে। আর এই সম্পর্কের সূত্র ধরেই ত্রিশালের রাজনীতিতে নীরবেই নতুন মেরুকরণ ঘটতে পারে বলে বিশ্লেষক মহল মনে করছেন।
তারা বলছেন, জেলা আওয়ামী লীগ স্থানীয় সংসদ সদস্য মাদানী বিমুখ হলেও পুত্রের সম্পর্কের দৌলতেই দুই প্রভাবশালী প্রতিমন্ত্রী-এমপি তার অনুকূলে রয়েছেন। গত কয়েকদিন তাদের সঈে কক্সবাজারসহ বিভিন্ন এলাকা সফর করেছেন হাসান।
সেসব ছবি নিজের ফেসবুক ওয়ালেও শেয়ার করেছেন তিনি। এসব ছবিতে দেখা যায়, প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ ও সংসদ সদস্য ফাহমি গোলন্দাজ বাবেলের ঠিক পাশেই বসেছেন হাসান। এর মাধ্যমে হাসানের প্রতি তাদের প্রগাঢ় স্নেহও ফুটে উঠেছে।

আর এসব বিষয়াদিই স্থানীয় রাজনীতিতে হাফেজ রুহুল আমিন মাদানী ও তার ছেলে হাসানের জন্য ‘শাপে বর’ হবে।
এ সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে ত্রিশাল ছাত্রলীগের সভাপতি ও এমপি পুত্র হাসান মাহমুদ মেয়র পদে ভোটের জন্য মনস্থির করলে তার সঈে মেয়র আনিস শেষ পর্যন্ত কুলিয়ে উঠতে পারেন কিনা এ নিয়েও পর্যবেক্ষক মহলের মাঝে সন্দেহ-সংশয় রয়েছে।
কারণ, স্থানীয় রাজনীতিতে একটি কথা বহুল প্রচলিত, মেয়র আনিসের কোন ‘স্থায়ী’ বন্ধু নেই। গত নির্বাচনে তাকে ভোটের মাঠে জয়ী করতে দূর থেকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিলো সংসদ সদস্য ফাহমি গোলন্দাজের।
সেই সম্পর্কের অবনতির পাশাপাশি আনিসের পাশে তার দুর্দিনের বন্ধুদেরও কেউ নেই। বারবার ‘বৃত্ত’ বদলের জন্যই কেউই না কী আর আনিসকে ‘ভরসা’ করতে পারছেন না। ফলে সব মিলিয়ে এমপি পুত্র হাসান ‘মেয়র’ প্রার্থী হলে কপাল পুড়বে বর্তমান মেয়রেরই, এমন জোর আলোচনায় সরগরম ত্রিশালের রাজনীতি।
কালের আলো/এএম/এমবিএস