সুখবর দিলেন বেবিচক চেয়ারম্যান, পহেলা জুন থেকে ডমেস্টিক ফ্লাইট

প্রকাশিতঃ 7:55 pm | May 28, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট চলাচল শুরু হতে পারে, মাত্র একদিন আগে এমন সবুজ সংকতেই দিয়েছিলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।

প্রাণঘাতী করোনার ভয়ঙ্কর থাবায় দীর্ঘ সময় অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটের নিয়মিত সব ফ্লাইট বন্ধ থাকায় সীমিত পরিসরেই ফ্লাইট চালুর প্রক্রিয়াই শুরু করেছিল বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

মন্ত্রীর ঘোষণার একদিন পরেই এ সম্পর্কিত সুখবর দিয়েছেন বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান। কালের আলো’র সঙ্গে আলাপে তিনি জানিয়েছেন, অভ্যন্তরীণ রুটে আগামী ১ জুন থেকে ফ্লাইট চালু হবে। ইতোমধ্যেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

আপাতত স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে ডমেস্টিক ফ্লাইট চালুর বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) এই চেয়ারম্যান আরও জানান, ‘প্রাথমিকভাবে শুধুমাত্র ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিমানবন্দরে অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইট চলবে। সৈয়দপুর বিমানবন্দরেও ফ্লাইট চলাচল চালুর চিন্তা-ভাবনা রয়েছে।’

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গত ২৪ মার্চ থেকে চীন ছাড়া সব দেশে যাত্রীবাহী ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করে বেবিচক।

বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, আপাতত স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে ডমেস্টিক ফ্লাইট চলাচল শুরু হবে। রাজশাহী, যশোর, বরিশাল, কক্সবাজার বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচলের বিষয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেন, ‘১ সপ্তাহ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে পরে অন্যান্য সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হবে।

এছাড়া সপ্তাহখানেকের মধ্যে যদি এই চারটি বিমানবন্দর স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী ও ফ্লাইটের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধাগুলো নিশ্চিত করতে পারে তাহলে সেসব বন্দরগুলোকেও ফ্লাইট চলাচলের অনুমতি দেয়া হবে।’

বেবিচক সূত্র জানায়, দেশে চারটি এয়ারলাইন্স কোম্পানিই অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। অভ্যন্তরীণ আকাশপথে চট্টগ্রাম, সিলেট, কক্সবাজার, যশোর, সৈয়দপুর, রাজশাহী ও বরিশাল রুটে প্রতিদিন ১৪০টির মতো ফ্লাইট চলাচল করত।

তবে ২০ মার্চ থেকে তিন মাসের জন্য ফ্লাইট চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে রিজেন্ট এয়ারওয়েজ। এক্ষেত্রে শুধু বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, নভোএয়ার এবং ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সই ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারবে।

নিষেধাজ্ঞা বেড়েছে আন্তর্জাতিক রুটে
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ থাকার কথা জানিয়েছে। এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তারা বলেছেন, আন্তর্জাতিক রুটে শিডিউল পেসেঞ্জার ফ্লাইটে যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে প্লেন চলাচল নিষেধাজ্ঞা আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

এ নিষেধাজ্ঞা আগের ন্যায় বাহরাইন, ভুটান, হংকং, ভারত, কুয়েত, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, ওমান, কাতার, সৌদি আরব, শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বিদ্যমান প্লেন চলাচল রুটের ক্ষেত্রে কার্যকর হবে।

তবে কার্গো, ত্রাণ-সাহায্য, এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, জরুরি অবতরণ ও স্পেশাল ফ্লাইট পরিচালনার কার্যক্রম এ নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবে।

মানতে হবে যেসব শর্ত

জুনের প্রথমদিন থেকে দেশের কয়েকটি বিমানবন্দরে অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইট চলাচলের অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে ফ্লাইট চলাচলের ক্ষেত্রে কিছু শর্তও জুড়ে দিয়েছে তারা।

বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেন, ‘ইতিমধ্যে এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠান ও বিমানবন্দরসমূহকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত এসব নির্দেশনা মেনেই ফ্লাইট পরিচালনা করতে হবে।’

শর্তগুলো হলো-
১. প্রতিটি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট সংখ্যা নিয়মিত সংখ্যার চেয়ে কম হবে।

২. প্রতিটি ফ্লাইটের ভেতরে পাশাপাশি দুই সিটে যাত্রী বসতে পারবেন না। যদি প্লেনটির প্রতি সারিতে ৩টি করে মোট ৬টি সিট থাকে। তাহলে প্রতি সারির মাঝের সিটটি ফাঁকা রাখতে হবে। আর যদি প্রতি সারিতে দুইটি করে ৪টি সিট থাকে তাহলে একটি সিটে যাত্রী থাকবে অপরটি থাকবে ফাঁকা।

৩. ফ্লাইটের ধারণক্ষমতার সর্বোচ্চ ৭৫ শতাংশ যাত্রী নেয়া যাবে।

৪. প্রতিটি ফ্লাইটের আগে প্লেন ডিসইনফেক্টেড বা জীবাণুনাশক দিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে, প্রতিটি যাত্রীকে নতুন হ্যান্ড গ্লাভস ও মাস্ক দিতে হবে।

৫. বিমানবন্দরগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে জীবাণুনাশক ছিটাতে হবে।

৬. ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩টি ফ্লাইট ছাড়ার অনুমতি দিতে হবে। ফ্লাইট উড্ডয়নের আগে ও অবতরণের পর প্লেনকে প্রত্যেকবার একে জীবাণুনাশক দিয়ে ডিসইনফেক্টেড বা জীবাণুমুক্ত করতে হবে। প্রতিবার জীবাণুমুক্ত করার পর বেবিচকের প্রতিনিধিরা এই প্রক্রিয়াটি দেখে সার্টিফাইড করবেন, এরপরই ফ্লাইটটি ছাড়বে।

৭. প্লেনের প্রতিটি জানালা সিট, সিটের হাতলে জীবাণুনাশক দিতে হবে।

৮. চেক-ইনের সময় কাউন্টার ও আশপাশের সহযোগীদের সার্বক্ষণিক মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস ও ডিস্পোজেবল ক্যাপ পরতে হবে। এছাড়াও কাউন্টারের পাশে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে।

৯. সামাজিক দূরত্ব মেনে যাত্রীকে চেক-ইনের লাইনে দাঁড়াতে হবে। চেক-ইনের আগে যাত্রীর শরীরের তামপাত্রা মাপা হবে। তাপমাত্রা ৯৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট হলে তাকে বোর্ডিং পাস বা বিমানে ওঠার অনুমতি দেয়া যাবে না।

১০. ফ্লাইটে খাবার পরিবেশন করা যাবে না। তবে ডায়াবেটিকের রোগীদের জন্য সীমিত আকারে পানি ও জুস থাকবে যা আগে থেকেই ইন্টেক্ট রাখতে হবে। ফ্লাইটের ক্রুদের সার্জিক্যাল বা এন-৯৫ মাস্ক, চশমা, রাবারের হ্যান্ড গ্লাভস ও ফেসিয়াল মাস্ক পরতে হবে। হ্যান্ড গ্লোভস ও মাস্ক প্রতি ৪ ঘণ্টা অন্তর পরিবর্তন করতে হবে। ক্রুদের ককপিটে প্রবেশ যতদূর সম্ভব কমাতে হবে, ইন্টারকমে যোগাযোগ বাড়াতে হবে।

কালের আলো/এনএল