উপজেলায় থাকতে না চাইলে চাকরি ছাড়ুন: চিকিৎসকদের প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিতঃ 11:43 pm | December 28, 2017

তৃণমূলে কাজ করতে না চাওয়া সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের চাকরি ছেড়ে দিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

উপজেলা পর্যায়ে নিয়োগ পাওয়া চিকিৎসকরা কর্মস্থলে না থেকে সপ্তাহের বেশির ভাগ ঢাকায় পার করেন বলে অভিযোগের মধ্যে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর বলেন, “এভাবে যদি কেউ চলে আসে, তাহলে তো তার চাকরি করার দরকার নাই। ঢাকায় বসে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করলেই তো অনেক টাকা পাবে। দয়া করে তারা বিদায় নিয়ে বাড়ি চলে যাক, আমরা নতুন নিয়োগ দেবো।”

সরকারি চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে উপজেলা পর্যায়ে কাজ করতে না চাওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। বিষয়টি নিয়ে সংসদে বহুবার সদস্যদের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অ্যাম্বুলেন্স বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন, সচিব সিরাজুল হক খান এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ উপস্থিত ছিলেন।

তাদের সবার উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “স্বাস্থ্যসেবা দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি। আপনাদের আরো সচেতন হতে হবে। আমাদের ডাক্তাররা যেন (কর্মস্থলে) থাকে।

এসময় জাপানি কোম্পানি টয়োটার তৈরি অত্যাধুনিক অ্যাম্বুলেন্সের চাবি দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রতিনিধিদের হাতে তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “যেই আমরা পাঠাচ্ছি উপজেলায়- সেখানে না থেকেই … সরকারি চাকরি হলেই এই সমস্যাটা হয়; যেই আমরা দিয়ে দিচ্ছি- অমনি যে কোনোভাবে কায়দা-টায়দা করে ঢাকায় চলে এসে বসে থাকবে।”

উপজেলায় আবাসন সমস্যার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “একটা সমস্যা আমি খুঁজে বের করেছি। সেটা হচ্ছে- তাদের আবাসিক সমস্যাটা। অনেক ইয়ং ডাক্তাররা যায়, এখন মেয়েরা যায়। কিন্তু গেলে পরে.. একটা উপজেলায় তাদের থাকার জায়গা নাই।”

এই সমস্যা সমাধানে উপজেলাগুলোতে বহুতল ভবন নির্মাণ করতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়ার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “প্রত্যেক উপজেলায় একটি করে মাল্টিস্টোরেড বিল্ডিং যদি করে দেয়.. অনেক সরকারি অফিসার তারা যেয়ে ওখানে ভাড়া নিয়ে থাকতে পারবে।”

প্রত্যেক জেলায় একটি করে মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা অনেক আগে থেকেই বলে আসছেন প্রধানমন্ত্রী।

মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষার মান যথাযথ রাখার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মেডিক্যাল কলেজগুলো আমরা করে দিচ্ছি, এটার মানটা আমাদের বজায় রাখতে হবে- যে কী চিকিৎসা হচ্ছে? রোগী মারা ডাক্তার হচ্ছে, না রোগী বাঁচানোর ডাক্তার হচ্ছে। এটা একটু ভালো করে দেখতে হবে।”

“অনেকগুলো মেডিক্যাল কলেজ আমরা দিয়েছি। আর যেখানে যেখানে ক্যান্টনমেন্ট আছে, সেখানে অলরেডি পাঁচটা মেডিক্যাল কলেজ করার পারমিশন আমরা দিয়েছি। বলেছি যে, সব জায়গায় আমরা দেব।”

স্বনামধন্য মেডিক্যাল কলেজের শ্রেণিকক্ষের পাঠ তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন জেলার মেডিক্যাল কলেজে দেখানোর কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।

এছাড়া বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দেশের মেডিক্যাল কলেজগুলোতে আসতে দেয়া উচিত বলেও প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, “বিদেশি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের এখানে আসতে দেয়া উচিত; মানে, পড়ানোর জন্য। এখানে লেকচার দিয়ে যায়, তাহলে আমাদের শিক্ষর্থীরা অভিজ্ঞতা সঞ্চার করতে পারে। আমাদের রোগীদের বিদেশে যেতে হয় না।”

স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারে নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “আজকে বাংলাদেশে যতগুলো ইনস্টিটিউট করা হচ্ছে… আমি অতো নাম বলব না। ৯৬ সাল থেকে ২০০১ পর্যন্ত প্রতিটি ইনস্টিটিউটের শুরুটা কিন্তু আমার হাত থেকে। আমাদের এত জনসংখ্যা, তাদের চিকিৎসা দিতে গেলে লোকবল তৈরি করা এবং বিশেষায়িত… বিশেষ করে বিশেষায়িত মানুষজনের প্রয়োজন খুব বেশি।”

প্রত্যেকটা বিভাগীয় শহরে একটি করে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা আরো বলেন, “বিশেষায়িত ইনস্টিটিউট করে দিচ্ছি, এতে বিশেষজ্ঞ থাকতে পারে এবং বিশেষজ্ঞ তৈরি হচ্ছে।”

গ্যাস্ট্রো অ্যান্ট্রোলজিতে পিছিয়ে থাকার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “একটা জায়গায় আমরা পিছিয়ে আছি, সেটা হল- গ্যাস্ট্রো অ্যান্ট্রোলজিস্ট… এটা আমাদের খুব কম। এ বিষয়ে আমাদের হাতে গোনা কয়েকজন ডাক্তার ছিল। এখন কিছু নতুন ডাক্তার এসেছে।”

পেটের পীড়াকে এই অঞ্চলের জনগণের একটি স্বাভাবিক সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অথচ, বাংলাদেশের মানুষ পেটের পীড়ায় সব থেকে বেশি ভোগে। এটা আমাদের পরিবেশের জন্য… আমাদের জলবায়ুটা এমন যে, এটা হবেই। এটা অস্বাভাবিক কিছু না।”

গ্যাস্ট্রো অ্যান্ট্রোলজি ইনস্টিটিউট তৈরির ভবিষ্যত নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “একটা গ্যাস্ট্রো অ্যান্ট্রোলজি ইনস্টিটিউট তো করার কথা। আমি জানি না সেটার ভাগ্য কোথায় ঝুলে আছে।”

স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির নির্দেশও দেন প্রধানমন্ত্রী।

১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ৭০ ভাগ সাফল্য অর্জন করেছিল বলে ভাষ্য প্রধানমন্ত্রীর।

তিনি বলেন, “কমিউনিটি ক্লিনিক সম্পূর্ণ আমার নিজস্ব ধারণা। সেভাবেই এটা তৈরি করা হয়েছিল। ১১ হাজার ক্লিনিক তৈরি করেছিলাম, চার হাজার আমরা চালু করেছিলাম। এক বছরের মধ্যে দেখা গিয়েছিল যে, প্রায় ৭০ ভাগ সাফল্য অর্জন করেছে।”

২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে তৎকালীন বিএনপি সরকার কমিউনিটি প্রকল্প বন্ধ করে দেয় বলে জানান বর্তমান সরকার প্রধান।

দ্বীপাঞ্চল ও হাওড় অঞ্চলে নৌ অ্যাম্বুলেন্সের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।

এবার বিভিন্ন হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৯৮টি অ্যাম্বুলেন্স দেয়া হবে। প্রথম পর্যায়ে ৬০টি এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ৩৮টি অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হবে।

জাপানের টয়োটার এই অত্যাধুনিক অ্যাম্বুলেন্সে সকল প্রাথমিক চিকিৎসার সুবিধা রয়েছে। ২০১৭ সালের এই প্রতিটি অ্যাম্বুলেন্সের মূল্য ৪১ লাখ টাকা।

বৃহস্পতিবার জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, বান্দরবান সদর হাসপাতাল এবং গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া, গাজীপুরের কালিয়াকৈর, খুলনার ফুলতলা, কুড়িগ্রামের রাজীবপুর, নেত্রকোনা কেন্দুয়া ‍উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রতিনিধিদের হাতে তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী এই অ্যাম্বুলেন্সগুলো রক্ষণাবেক্ষণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে আলাদা তহবিল গড়ে তুলতেও নির্দেশ দেন।

তিনি বলেন, “অ্যাম্বুলেন্সের একটা চাকা নষ্ট হলে, তা ঠিক করতে টাকার জন্য আবেদন করতে করতে চারটা চাকাই নষ্ট হয়ে যায়। না হয়, অ্যাম্বুলেন্স বসে যায়।”

এর আগে প্রধানমন্ত্রী পটুয়াখালী জেলা পরিষদের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান মোহনকে শপথ বাক্য পাঠ করান।