শিক্ষার্থীদের ট্র্যাকিং কার্ড: প্রকল্পের ব্যয় ৩২৯ কোটি টাকা
প্রকাশিতঃ 2:55 am | December 24, 2017
কালের আলো ডেস্ক: শিক্ষার্থীদের ট্র্যাকিং আইডি কার্ড দেয়া হচ্ছে। এ জন্য একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই কার্ডের শিক্ষার্থীদের সব তথ্য সংরক্ষণ থাকার পাশাপাশি তার সর্বশেষ অবস্থান জানা যাবে। পরীক্ষা হলে নকলসহ অসদুপায়
অবলম্বন করলেও ধরা পড়বে এই কার্ডের মাধ্যমে। ৩২৯ কোটি টাকার এ প্রকল্পের মধ্যে সব শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষাসহ সব ধরনের কার্যক্রম আধুনিকায়ন করা হবে। এতে সব বোর্ডের পরীক্ষার ফল প্রকাশ ও তথ্য সংরক্ষণে তৃতীয় পক্ষের ওপর নির্ভরশীলতা চলে যাবে। শিক্ষক- শিক্ষার্থীর তথ্য বাইরে প্রকাশের ঝুঁকি কমবে, তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণের একটি একক ও নিরাপদ প্ল্যাটফরম তৈরি হবে। নির্ভুল, দ্রুত, সাশ্রয়ী এবং অধিকতর নিরাপদে তথ্য দ্রুত প্রক্রিয়া ও বিশ্লেষণ করে সরবরাহ করা যাবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) এ প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী সংস্থা। এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য ধরা হয়েছে সমন্বিত শিক্ষা তথ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির আওতায় কেন্দ্রীয় তথ্য ভাণ্ডার তৈরি করা। আর ব্যানবেইস হবে সব সংস্থার ও বোর্ডের তথ্য আদান-প্রদানের একক উৎস।
ব্যানবেইসের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনার (ডিপিপি) ওপর গত ১৩ই ডিসেম্বর পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা হয়েছে। সভায় কর্মকর্তারা আরো বেশকিছু সংযোজন বিয়োজনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। সেই প্রস্তাবগুলো আসার পরই প্রকল্পটি একনেকে উঠানো হবে। ২০১৭ থেকে ২০২০ এই তিন অর্থবছরে এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। সারা দেশের ৪৯০টি উপজেলা ও সিটি করপোরেশন, থানা এলাকা এ প্রকল্পের আওতাভুক্ত থাকবে। প্রকল্পের খরচ হিসেবে কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বেতন, জ্বালানি, বৈদেশিক ও স্থানীয় প্রশিক্ষণ, পরামর্শক ভাতা, যানবাহন, কম্পিউটার হার্ডওয়্যার সফটওয়্যার ও আইসিটি অবকাঠামো নির্মাণ, যন্ত্রপাতি, হারারিং চার্জ, প্রিন্টিং ও বাইন্ডিং, আনুষঙ্গিক ব্যয়, সেমিনার আপ্যায়নসহ আরো কয়েকটি খাতের ব্যয় ধরা হয়েছে।
ডিপিপি সূত্রে জানা গেছে, পার্শ্ববর্তী উপজেলার প্রতিটি প্রতিষ্ঠান থেকে ২ জন করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রোফাইল এবং অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ ও সফটওয়্যারের মাধ্যমে ডাটা ইনপুট দেবে। এর আগে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। আইসিটি ল্যাব ও সাইবার সেন্টারের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রোফাইল ও শিক্ষার্থীদের প্রোফাইল তথ্য এন্ট্রি করবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চাহিদার আলোকে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে একক পরিচিতি নম্বরসহ আইডি কার্ড দেয়া হবে।
সমন্বিত সেন্টাল ডাটাবেজ হওয়ার পর সারা দেশের শিক্ষার্থীদের ভর্তি, উপবৃত্তি, শিক্ষা সমাপনী এবং ঝরে পড়া বিশ্লেষণ ও বিন্যাসের মাধ্যমে বৃত্তি শিক্ষা উপকরণ ও অন্যান্য সুবিধা স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যাবে। পরীক্ষা সংক্রান্ত প্রশ্নমালা প্রণয়ন, পরীক্ষা সংক্রান্ত সব ধরনের মনিটরিং, পরীক্ষার সেন্টারের মানোন্নয়ন পুরোপুরি অনলাইনে চলে আসবে। শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন সব প্রতিষ্ঠানের বর্তমান ওয়েব পোর্টাল নির্মাণ এবং ডাটা মাইগ্রেশন আরো সহজ হবে।
ডিপিপি সূত্রে জানা গেছে, এই প্রকল্পের আওতায় সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব তথ্য সংগ্রহের জন্য উন্নতমানের একটি সেন্টার ডাটাবেজ তৈরি করা হবে। এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ, মাদরাসা, কারিগরি ও ভোকেশনাল প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য প্রাথমিকোত্তর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কন্ডোরসেট ইন্টারনেট ভোটিং সার্ভিস (সিআইভিএস) আলোকে সব তথ্য সংরক্ষণ করা হবে। সেন্টাল ডাটাবেজ তৈরি করে শিক্ষার্থীদের একক আইডি কার্ড দেয়া হবে। এই কার্ডের মাধ্যমে তাদের ট্রাকিং করা যাবে। এছাড়াও সিস্টেমে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর আইডি কার্ডের মধ্যে শিক্ষার সব তথ্য ব্যবহার করা নিশ্চিত করা।
কর্মকর্তারা জানান, এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভর্তি পদ্ধতি, অভ্যন্তরীণ হিসাব ও বাজেট, পারসোনাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, স্টোর ম্যানেজমেন্ট ও আর্থিক হিসাবের অটোমেশন হয়ে যাবে। পাবলিক পরীক্ষার পরিচালনা সংক্রান্ত সব কার্যক্রম (বিজি প্রেস প্রশ্নমালা বিকুইজিশন, পরীক্ষা পরিবীক্ষণ, পরীক্ষা কেন্দ্রের বণ্টন ইত্যাদি আরো সহজীকরণ হবে। সব শিক্ষাবোর্ডের বর্তমান ওয়েবসাইটে হালনাগাদ, সব বোর্ডের আওতাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডাটা হালনাগাদ ও মাইগ্রেশনের মাধ্যমে ওয়েব পোর্টালগুলো একটি সংবলিত কাঠামোতে আনা হবে। সব শিক্ষাবোর্ডের ১৯৯৪ সালের প্রচলিত পদ্ধতি পরিবর্তন করে রিলেশনাল ডাটাবেইস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের (আরডিবিএমএস) নামে নতুন সফটওয়্যারের মাধ্যমে সব পরীক্ষার ফল প্রক্রিয়ার আরো সহজীকরণ, পদ্ধতি পরিবর্তন, রেজিস্ট্রেশন কার্ড, ট্রান্সফার সার্টিফিকেট, মাইগ্রেশন, নাম বয়স সংশোধন, পরীক্ষার ফল, একাডেমিক সব তথ্য সংরক্ষণ করা হবে। এছাড়াও ই-এসআইএফ এবং ই-এফএফ সংক্রান্ত তথ্য, শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতির অনলাইনে বাস্তবায়ন, সব পরীক্ষার অনলাইনে ফরম পূরণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ইআইআইএন প্রদান, মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ, মাদরাসা কারিগরি প্রতিষ্ঠানে অনলাইনে জরিপ ফরম পূরণ, আবেদন গ্রহণ, প্রক্রিয়াকরণ এবং এ সংক্রান্ত সব তথ্য সংশ্লিষ্ট বোর্ডে পাঠানো হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক অনুমতি, স্বীকৃতি, অনলাইন আবেদন গ্রহণ ও প্রক্রিয়াকরণ, জেএসএস, জেডিসি, এসএসসি এইচএসসি, দাখিল আলিম পরীক্ষার ফল প্রক্রিয়াকরণে বর্তমানে প্রচলিত পদ্ধতি ১ বছরের জন্য অক্ষুণ্ন রেখে প্রস্তাবিত পদ্ধতির মাধ্যমে ফলাফল প্রক্রিয়া করা হবে। পরীক্ষার ফলাফল, ডাটা মাইগ্রেশন এবং একক ডাটাবেজ প্রস্তুত করা হবে।
কর্মকর্তারা বলছেন, শিক্ষাবোর্ডগুলো ১৯৯৪ সালের পর থেকে যে প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের তথ্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে তা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। বর্তমান প্রচলিত আরডিবিএমএস সফটওয়্যারের মাধ্যমে সিস্টেম উন্নয়ন ও বাস্তবায়ন করা হলে তা নিরাপদ হবে। এ ব্যাপারে ব্যানবেইসের পরিচালক ফসিউল্লাহ মানবজমিনকে বলেন, প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সারা দেশে সব শিক্ষার্থী ও প্রতিষ্ঠানের তথ্য আদান-প্রদানে জটিলতা কমে আসবে। শিক্ষাবোর্ডগুলোতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে।
সূত্র: মানবজমিন
রিপোর্ট: নূর মোহাম্মদ