‘ভিক্ষুকমুক্ত’ সাতক্ষীরায় ভিক্ষুকের ছড়াছড়ি!

প্রকাশিতঃ 9:03 am | April 05, 2018

কালের আলো রিপোর্ট:

ভিক্ষুকমুক্ত সাতক্ষীরায় ওরা কারা? প্রতিদিন শতশত হাত সাহায্য পাওয়ার আশায় বাড়িয়ে দেয় ওরা। সরকারিভাবে সাতক্ষীরাকে ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা করা হলেও আদৌ ভিক্ষুকমুক্ত হয়নি। জেলা শহর, উপজেলা শহর থেকে শুরু করে গ্রাম গ্রামান্তরে দলে দলে ভিক্ষা করছে শতশত মানুষ।

সাতক্ষীরা জেলাসহ বিভিন্ন উপজেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এবং ইতোমধ্যে কয়েকটি উপজেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণাও করা হয়েছে। কিন্তু সেটা যেন ‘কাজীর গরু কিতাবে আছে, গোয়ালে নেই’-এমন অবস্থা।

ভিক্ষুকমুক্ত কলারোয়ায় ভিক্ষুকের সংখ্যা যেন আগের চেয়ে বেশি হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকায় ভিক্ষুকদের হরহামেশা দেখা যায়। আর শুক্রবার এলে তো কথাই নেই। প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার যেন ভিক্ষুকের হাট বসে যেখানে সেখানে। বাজারগুলোতে দোকানে দোকানে গিয়ে, বাসাবাড়িতে গিয়ে টাকা, চালসহ অন্যান্য ভাবে ভিক্ষা চায় বিভিন্ন বয়সী ভিক্ষুকরা। জুমার নামাজকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মসজিদে ভিক্ষুকদের জটলা বাঁধে।

জানা গেছে, সরকার ভিক্ষুকমুক্ত করতে বিভিন্ন কর্মসংস্থান ও এককালীন সহযোগিতা দিচ্ছে। নগদ টাকার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন উপকরণ দেয়া হচ্ছে অনেক ভিক্ষুককে। কিন্তু স্বভাব না বদলিয়ে বিভিন্ন বয়সী অনেক ভিক্ষুক হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে ভিক্ষার জন্য। অল্প বয়সী শিশু থেকে মধ্য বয়সী এমনকি ৭০/৮০ ঊর্ধ্ব বয়সী পুরুষ-মহিলা ভিক্ষাবৃত্তি চালিয়েই যাচ্ছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে শিশুদের সঙ্গে নিয়ে ভিক্ষা করার ফলে অল্প বয়স থেকেই ভিক্ষাবৃত্তিতে আগ্রহী হয়ে পড়ছে শিশু-কিশোররা।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় প্রতি বৃহস্পতিবার শহরের প্রতিটি অফিস, আদালত ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে ভিক্ষুকের লাইন পড়ে। ওই দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভিক্ষুকদের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠে ব্যবসায়ী ও অফিসা আদালতের কর্মকর্তা- কর্মচারীরা। এছাড়া শ্যামনগর, আশাশুনি, দেবহাটা উপজেলার চিত্র একই।

গত ৩০ মার্চ শুক্রবার কলারোয়া উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদ, কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, বাসস্ট্যান্ড জামে মসজিদসহ বিভিন্ন মসজিদের সামনে রীতিমত ভিক্ষুকের লাইন পড়ে যেতে দেখা যায়। উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তি, রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃত্বসহ সব শ্রেণির মানুষের সামনেই এমন চিত্র ফুটে উঠছে। তবে সেই আগের কথা ‘কাজীর গরু কিতাবে আছে, গোয়ালে নেই।’

অনেকে বলছেন, কলারোয়া উপজেলার পার্শ্ববর্তী সাতক্ষীরা সদর, শার্শা, ঝিকরগাছা উপজেলা ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা হওয়ার পর সেখানকার ভিক্ষুকের চাপ এখন কলারোয়ার ওপর পড়েছে।

তবে সাধারণ মানুষ অভিমত জানাচ্ছে, সত্যিকারে কি আমরা ভিক্ষুকমুক্ত হতে পেরেছি? পার্শ্ববর্তী এলাকার ভিক্ষুকের পাশাপাশি কলারোয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ভিক্ষুকও এখানে ভিক্ষা করছে প্রতিনিয়ত।

কয়েকজন দোকান ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, গড়ে প্রতিদিন ১২০-১৫০ জন ভিক্ষুককে ভিক্ষা দিতে হয়। কোনো কোনো ইউনিয়নে প্রচুরসংখ্যক ভিক্ষুককে ভিক্ষা করতে দেখা যায়।

কলারোয়াবাসী এ রকম দৃশ্য আর দেখতে চান না। উন্নয়নশীল মধ্যম আয়ের রাষ্ট্রের কলারোয়া উপজেলাকে ‘বাস্তবিক অর্থে’ ভিক্ষুকমুক্ত করতে প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তারা। তবে এ ব্যাপারে চেষ্টা করেও কর্তৃপক্ষের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

 

কালের আলো/এমএস

Print Friendly, PDF & Email