রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী: এইচআরডব্লিউ
প্রকাশিতঃ 6:08 pm | November 16, 2017
কালের আলোঃ রাখাইন রাজ্যে অগণিত রোহিঙ্গা নারীদের সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সদস্যরা। ১৬ নভেম্বর বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায় যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিও)।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা যৌন নির্যাতন ছাড়াও যেসব নৃশংসতা চালিয়েছে, তা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ।
ধর্ষণের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারীদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে ওই প্রতিবেদনটি তৈরি করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। এতে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে কর্মরত স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গেও কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে সংগঠনটি। প্রতিবেদনে জানা গেছে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নারীদের ঘিরে ফেলে সংঘবদ্ধ হয়ে ধর্ষণের ঘটনাও ঘটিয়েছে দেশটির সেনারা।
ওই প্রতিবেদনের গবেষক স্কাই হুইলার বলেন, মিয়ানমারের সেনারা জাতিগত নিধনের জন্য ধর্ষণকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। সেনাসদস্যদের এই বর্ববর আচরণ অগণিত রোহিঙ্গা নারীকে নিষ্ঠুরতার শিকারে পরিণত করেছে। অনেকেই মানসিক আঘাত পেয়েছেন।
প্রতিবেদনটি তৈরিতে ধর্ষণের শিকার ২৯ জন নারীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। তাদের মধ্যে একজন ছিল, যাকে সংঘবদ্ধভাবে দুইয়ের অধিক সেনাসদস্য ধর্ষণ করেছে। আর আট জন বলেছেন, তাদের পাঁচ জনেরও বেশি সেনা মিলে ধর্ষণ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এ সব নারী দেখেছেন শিশু, যুবক, দম্পত্তি ও বাবা-মায়েরা মরে পড়ে আছেন। অনেক ধর্ষণের শিকার নারী জানিয়েছেন, ছিড়ে যাওয়া অঙ্গ আর অব্যাহত রক্তপাত নিয়ে টানা কয়েকদিনের পথ পাড়ি দিয়ে তারা বাংলাদেশে পৌঁছেছেন।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ছয়টি ঘটনা নথিভুক্ত করতে পেরেছেন। এ সব ঘটনায় সেনাসদস্যরা নারীদের এক জায়গায় জড়ো করে মারধরের পর সংঘবদ্ধ হয়ে ধর্ষণে লিপ্ত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
মমতাজ ইউনুস নামে ৩৩ বছরের এক নারী হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-কে বলেছেন, গ্রাম ছেড়ে পালানোর পর এক পাহাড়ের পাদদেশে তাকেসহ ২০ জন নারীকে আটকে ফেলে সেনারা। আর সবার সামনেই তাদের ধর্ষণ করা হয়।
ধর্ষণের শিকার ২৯ জন ছাড়াও প্রতিবেদন তৈরিতে মোট ৫২ জনের সাক্ষাৎকার নেয় হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। রাখাইনের ১৯টি ভিন্ন ভিন্ন গ্রাম থেকে আসা এ সব নারীদের মধ্যে তিন জনের বয়স ছিল ১৮ বছরের নিচে।
গত আগস্টে সেনা অভিযান শুরুর পর ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। দেশটির সেনা কর্তৃপক্ষের দাবি, রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের নির্মূলে অভিযান চালিয়েছে তারা। তবে জাতিসংঘ এই সহিংসতাকে ‘জাতিগত নিধন’ বলে আখ্যা দিয়েছে।