পরিবারের বাইরেও মেয়র আতিকের ‘পরিবার’

প্রকাশিতঃ 3:06 am | August 13, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

কোরবানির পশুর বর্জ্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে অপসারণের ওপর জোর দিয়েছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। যত দ্রুত সম্ভব পশুর হাটের আবর্জনা ও কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ করবেন বলে কথা দিয়েছিলেন নগরবাসীকে।

আরও পড়ুন: ঈদের দিনেও কর্মব্যস্ত নগরপিতা আতিকুল ইসলাম, ছুটলেন হাসপাতালে

সোমবার (১২ আগস্ট) দুপুর থেকে রাজধানীর আমিনবাজার ল্যান্ডফিলে বর্জ্য ডাম্পিং করার জন্য নিজেদের ২ হাজার ৪০০ এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ হাজার ৪৩৫ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী কাজ করেছেন। আরও ১ হাজার ১০০ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী এবং বাসা-বাড়ি থেকে ভ্যান সার্ভিসের মাধ্যমে বর্জ্য সংগ্রহ করার জন্য প্রায় ৪ হাজার ৫০০ জন শ্রমিক কোরবানির বর্জ্য অপসারণে নিয়োজিত আছেন।

সবমিলিয়ে বর্জ্য অপসারণে দুপুর থেকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করেছেন প্রায় সাড়ে ৯ হাজার পরিচ্ছন্নতা কর্মী। ডেঙ্গুর প্রকোপ ঠেকাতে পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করতে পুরো বিষয়টিকে প্রথম থেকেই চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়েছিলেন মেয়র। ইতোমধ্যেই শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৫ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন বর্জ্য ডাম্পিং করেছে উত্তরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ।

তবে নিজে চ্যালেঞ্জে জেতার পাশাপাশি নগরবাসীকে পরিচ্ছন্ন নগর উপহার দিতেই নিজেও যেন ঈদ আনন্দই ‘বিসর্জন’ দিয়েছেন এ নগর পিতা। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে খেটে পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হচ্ছেন সেখানে নগর পিতা নিজেও সিদ্ধান্ত নিলেন তাদের সঙ্গেই মাঠে থাকার।

উত্তর সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজের পরিবারের সদস্য মনে করেই দায়িত্ব ও কর্তব্য থেকেই ঈদের দিনেও তাদের পাশেই ছিলেন পরিবেশ বান্ধব ও গতিময় ঢাকা গড়ার এ স্বাপ্নিক।

সোমবার (১২ আগস্ট) সন্ধ্যার পর পরই যখন রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অপসারণ অভিযান দেখতে যাচ্ছিলেন ঠিক তখনই কাকতালীয়ভাবে ফোনালাপ হলো এ নগর সেবকের সঙ্গে। কালের আলো’র প্রশ্নের জবাবে মেয়র আতিকুল ইসলাম বললেন, ‘এ সিটি করপোরেশনই আমার পরিবার।

এজন্য আমি পরিবারের সঙ্গে সময় না কাটিয়ে নগরবাসীকে দেওয়া কথা রাখতেই বিভিন্ন এলাকায় ছুটছি। এর মাধ্যমে সাড়ে ৯ হাজার পরিচ্ছন্নতা কর্মীকে একটি বার্তা দিচ্ছি তোমরা একা নও, আমিও তোমাদের সাথে আছি, পাশে রয়েছি।’

ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম সোজা-সাপ্টা কথা বলেন। ডেঙ্গু মোকাবেলায় নিজেদের অভিজ্ঞতার অভাব থাকার কথা অবলীলায় উচ্চারণ করেছিলেন। নির্মোহ সত্য বলাতেও পারঙ্গম উত্তরের মেয়র কাজের প্রতি নিজের আন্তরিকতা ও মানবিকতা দিয়েই নগরবাসীর মন জয় করছেন।

দিন পাঁচেক আগে নগর ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারানো পরিবারের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন। যেখানে অন্যরা ক্ষমা বা ভুল স্বীকার করতে নারাজ সেখানেও ব্যতিক্রম প্রয়াত আনিসুল হকের এ উত্তরসূরী।

ঈদুল আজহার দিনেও ঈদের নামাজ শেষেই রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগীদের শয্যাপাশে ছুটে গেছেন। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত শিশুদের উপহার দিয়েছেন চকলেট, চুইংগা, জুস ও খেলনা।

মেয়র আতিকুল ইসলাম শিশুদের জন্য বাসযোগ্য নগরী উপহার দিতে সবার সহযোগিতা চেয়ে বলেন, ‘এই যে ফুটফুটে ছোট শিশু, এদের কষ্ট সহ্য করা যায় না। ওদের জন্য হলেও আপনারা সচেতন হোন, যত্রতত্র আবর্জনা ফেলে ওদের জীবনকে ঝুকিপূর্ণ করবেন না। আমরা এই শিশুদের জন্য বসবাসযোগ্য একটু নগরী উপহার দিতে চাই, আমাদের সহযোগিতা করুন।’

হাসপাতালের পর উত্তরের প্রতিশ্রুতিশীল এ নগর পিতা রাজধানীর উত্তরায় বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম উদ্বোধন করে ২৪ ঘন্টার মধ্যেই নিজের করপোরেশন এলাকার বর্জ্য অপসারণের ঘোষণা দেন। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত নগরীর কোন না কোন এলাকায় গিয়ে বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম পরিদর্শন করে সকালের কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন।

কালের আলো/ এএআর/এমএএএমকে

Print Friendly, PDF & Email