আবারো ফাইনালে স্বপ্নভঙ্গ বাংলাদেশের

প্রকাশিতঃ 11:35 pm | March 18, 2018

কালের আলো রিপোর্ট:

পারল না বাংলাদেশ। বীরের মতো খেলে শেষ বলে কার্তিকের ছক্কায় হেরে গেল বাংলাদেশ। আরেকটি স্বপ্নের সমাধি হলো।

কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে নিদাহাস টি-টোয়েন্টি সিরিজের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে বাংলাদেশকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে ভারত। শেষ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে বাংলাদেশকে হারিয়ে দেন দিনেশ কার্তিক। এর আগে আরও চারবার আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। তবে, এবারই প্রথম দেশের বাইরে কোনো ত্রিদেশীয় সিরিজে ফাইনালে খেলেছে টাইগাররা।

২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজের ফাইনালে মিরপুরে বাংলাদেশ ২ উইকেটে হেরেছিল। এরপর ২০১২ সালে এশিয়া কাপে মিরপুরে পাকিস্তানের বিপক্ষে হেরেছিল ২ রানের ব্যবধানে। ২০১৬ সালে এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টির ফাইনালে মিরপুরে ভারতের বিপক্ষে ৮ উইকেটে হারে বাংলাদেশ। সবশেষ ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজের ফাইনালে মিরপুরেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চলতি বছর ৭৯ রানে হারে বাংলাদেশ।

এবার স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা এই সিরিজে ছিল দর্শকের ভূমিকায়। টস জিতে আগে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা। ভারতের বিপক্ষে আগে ব্যাট করে সাব্বির রহমানের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ভর করে বাংলাদেশ নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে তোলে ১৬৬ রান। বাংলাদেশ দলে কোনো পরিবর্তন ছিল না। ভারতের মোহাম্মদ সিরাজের জায়গায় এসেছেন জয়দেব উনাদকাট। ৬ উইকেট হারিয়ে শেষ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে জয় তুলে নেয় ভারত।

ভারতের ওপেনিংয়ে নামেন রোহিত শর্মা আর শিখর ধাওয়ান। দলীয় ৩২ রানের মাথায় সাকিব ফিরিয়ে দেন ১০ রান করা শিখর ধাওয়ানকে। রুবেলের করা ইনিংসের চতুর্থ ওভারের তৃতীয় বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন সুরেশ রায়না। আম্পায়ার উল্টো ওয়াইডের সংকেত দেন। মুশফিক-সাকিবের প্রতিবাদে পরে থার্ড আম্পায়ারের সাহায্য নেন আম্পায়ার। তাতে টিভি রিপ্লে দেখে আউটের সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। রায়না বিদায় নেন ০ রানে। ইনিংসের দশম ওভারে রুবেল ফেরান লোকেশ রাহুলকে। দলীয় ৮৩ রানের মাথায় বিদায় নেওয়ার আগে রাহুল ১৪ বলে দুই চার-এক ছয়ে করেন ২৪ রান।

১৪তম ওভারে রোহিত শর্মাকে বিদায় করেন নাজমুল অপু। দলীয় ৯৮ রানের মাথায় ভারত তৃতীয় উইকেট হারায়। রোহিত শর্মা বিদায়ের আগে ৪২ বলে চারটি বাউন্ডারি আর তিনটি ওভার বাউন্ডারিতে করেন ৫৬ রান। ১৮তম ওভারে মোস্তাফিজ এসে তুলে নেন ২৭ বলে ২৮ রান করা মনিষ পান্ডেকে। সেই ওভারে মাত্র ১ রান দেন মোস্তাফিজ। রুবেলের করা ১৯তম ওভারের প্রথম তিন বলে ১৬ রান নেন নতুন ব্যাটসম্যান দিনেশ কার্তিক। সেই ওভারে ওঠে ২২ রান। শেষ ওভারে দরকার হয় ১২ রানের। সৌম্য সরকার পঞ্চম বলে ফিরিয়ে দেন ১৭ রান করা বিজয় শংকরকে। শেষ বলে ৫ রান দরকার হলে ছক্কা হাঁকিয়ে দলকে জেতান দিনেশ কার্তিক। ৮ বলে দুটি চার আর তিনটি ছক্কায় তিনি অপরাজিত থাকেন ২৯ রানে।

বাংলাদেশের হয়ে ওপেনিংয়ে নামেন তামিম ইকবাল এবং লিটন দাস। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে বিদায় নেন লিটন দাস। ওয়াশিংটন সুন্দরের বলে টপএজ হয়ে সুরেশ রায়নার হাতে ধরা পড়ার আগে লিটন এক ছক্কায় ৯ বলে করেন ১১ রান। দলীয় ২৭ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। পরের ওভারেই ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে দুর্দান্ত এক ক্যাচে শারদুল ঠাকুরের হাতে ধরা পড়েন তামিম ইকবাল। স্কোরবোর্ডে কোনো রান না উঠতেই ফেরেন তামিম। যুভেন্দ্র চাহালের বলে আউট হওয়ার আগে তামিম ১৩ বলে একটি বাউন্ডারিতে করেন ১৫ রান। একই ওভারে ব্যক্তিগত ১ রান করে বিদায় নেন সৌম্য সরকার। ১১ বলেই বাংলাদেশ হারায় টপঅর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে। পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়ায় ৪০/৩।

প্রথম ১০ ওভারে বাংলাদেশ তোলে ৩ উইকেট হারিয়ে ৬৮ রান। এগারোতম ওভারের প্রথম বলেই বিদায় নেন ইনফর্ম ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম। চাহালের বলে বিজয় শংকরের হাতে ধরা পড়ার আগে মুশফিক ১২ বলে করেন ৯ রান। দলীয় ৬৮ রানে বাংলাদেশ হারায় চতুর্থ উইকেট। ১৪ ওভারে আসে দলীয় শতক।

১৫তম ওভারে সিঙ্গেল রান নিতে সাব্বির-মাহমুদউল্লাহর ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হন মাহমুদউল্লাহ। ১০৪ রানে বাংলাদেশ পঞ্চম উইকেট হারায়। বিদায়ের আগে মাহমুদউল্লাহর ব্যাট থেকে আসে ১৬ বলে দুটি চারে ২১ রান। সাব্বিরের সঙ্গে জুটি গড়েন ৩৬ রানের। বাংলাদেশের চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে হাজার রানের ক্লাবের সদস্য হন মাহমুদউল্লাহ। তার আগে তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম এই ক্লাবের সদস্য হন। ৩৭ বলে চতুর্থ টি-টোয়েন্টি হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন সাব্বির। ১৭তম ওভারে রানআউট হওয়ার আগে সাকিব করেন ৭ রান। দলীয় ১৩৩ রানের মাথায় ষষ্ঠ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে বিদায় নেন সাব্বির রহমান। উনাদকাটের বলে বোল্ড হওয়ার আগে ৫০ বলে সাতটি চার আর চারটি ছক্কায় সাব্বির করেন ৭৭ রান। দলীয় ১৪৮ রানের মাথায় সপ্তম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। একই ওভারে বোল্ড হন রুবেল হোসেন। মেহেদি হাসান মিরাজ ৭ বলে দুই চার এক ছয়ে ১৯ এবং মোস্তাফিজুর রহমান ০ রানে অপরাজিত থাকেন। শেষ ওভারেই মিরাজ তুলে নেন ১৮ রান।

গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশ শেষ ম্যাচে লঙ্কানদের হারিয়ে ফাইনালে ওঠে। আর প্রথম ম্যাচে লঙ্কানদের কাছে হারলেও টানা তিন জয়ে ফাইনালে ওঠে টিম ইন্ডিয়া। দেশের বাইরে থেকে প্রথম কোনো শিরোপা জিতে আনার স্বপ্নপূরণের হাতছানি ছিল বাংলাদেশের। প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে রোববার (১৮ মার্চ) বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে শুরু হয় হাইভোল্টেজ এই ফাইনালটি।

টি-টোয়েন্টিতে এখনো ভারতকে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। এ নিয়ে আটবারের মুখোমুখি লড়াইয়ে প্রতিবারই জিতেছে টিম ইন্ডিয়া। এই সিরিজেই প্রথম মুখোমুখি দেখায় বাংলাদেশ হেরেছিল বড় ব্যবধানে। তবে, মুখোমুখি দ্বিতীয় দেখাতে জয়ের কাছাকাছি চলে গিয়েছিল তামিম-মুশফিকরা। সেই ম্যাচে হেরেছিল মাত্র ১৭ রানের ব্যবধানে। তবে, স্বাগতিক শ্রীলঙ্কাকে দুই ম্যাচেই হারিয়ে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে ওঠে সাকিব অ্যান্ড কোং।

বাংলাদেশ একাদশ: তামিম ইকবাল, লিটন দাস, সৌম্য সরকার, মুশফিকুর রহিম (উইকেটরক্ষক), সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সাব্বির রহমান, মেহেদী হাসান মিরাজ, রুবেল হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান, নাজমুল ইসলাম অপু।

ভারতীয় একাদশ: রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), শিখর ধাওয়ান, লোকেশ রাহুল, সুরেশ রায়না, মনিষ পাণ্ডে, দিনেশ কার্তিক (উইকেটরক্ষক), বিজয় শংকর, ওয়াশিংটন সুন্দর, শারদুল ঠাকুর, জয়দেব উনাদকাট, যুভেন্দ্র চাহাল।