এরশাদের মৃত্যুতে শ্বশুরালয় ময়মনসিংহে শোকের ছায়া
প্রকাশিতঃ 10:05 pm | July 14, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
সাবেক রাষ্ট্রপতি, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে তার নিজ শহর রংপুরের মত শোকাহত ময়মনসিংহও।
ময়মনসিংহের উন্নয়নের পেছনে এরশাদের কার্যকর ভূমিকা ও শ্বশুরালয় হওয়ায় এ শহরের জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারাও শোকাচ্ছন্ন ও ভারাক্রান্ত।
ময়মনসিংহের সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে রওশন এরশাদকে ১৯৫৬ সালে বিয়ে করেন এরশাদ। ওই সময় এরশাদ ছিলেন সেনা কর্মকর্তা। এরপর সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর একাধিকবার ঘুরে গেছেন শ্বশুরালয়ের এ জেলা।
রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রাম থেকে শুরু করে দলের সাংগঠনিক শক্তির দিকে যখনই তিনি নজর দিয়েছেন, তখনই অগ্রভাগে ছিল ময়মনসিংহ। যখনই তিনি ময়মনসিংহে আসতেন, তখনই নগরীর সার্কিট হাউজের বাইরে নগরীর গঙ্গাদাসগুহ রোডের শ্বশুরালয় ‘সুন্দর মহল’এ উঠতেন।
এ সুন্দর মহলের পরতে পরতে রয়েছে তার স্মৃতি। ময়মনসিংহকে তিনি নিজের ‘সেকেন্ড হোম’ মনে করতেন। ময়মনসিংহের উন্নয়নের ইতিহাসের রূপালি নদীতে তিনি থাকবেন যুগ যুগান্তর।
ময়মনসিংহ মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি জাহাঙ্গীর আহমেদ বলেন, রাষ্ট্রপতি থেকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হওয়া পর্যন্ত সময়ে এরশাদ কমপক্ষে অর্ধশতাধিকবার ময়মনসিংহে এসেছেন। এসেই তিনি শাশুড়ি বদরুন নাহারের কবর জিয়ারত করতেন।
তিনি বলেন, বৃহত্তর ময়মনসিংহের চার জেলার মানুষের যোগাযোগের ‘লাইফ লাইন’ হিসেবে পরিচিত ময়মনসিংহ নগরীর ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর ১৯৮৬ সালে দীর্ঘ বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু নির্মাণ করে দিয়েছিলেন এরশাদ। সদর উপজেলার সুতিয়াখালীর শ্বশুর বাড়ির গ্রামের একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন করেছেন তিনি।
‘১৯৮৩ সালে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের জায়গা হস্তান্তর করেছেন তিনি। এছাড়া তার হাতেই ফিডার রোড উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ ও ময়মনসিংহ-নেত্রকোণাসহ একাধিক মহাসড়কের উন্নয়ন কার্যক্রম হয়েছিল।’
রওশন এরশাদের ঘনিষ্ঠ এ নেতা জানান, ১৯৮৭ সালে ময়মনসিংহের ক্রীড়াঙ্গণের উন্নয়নে নগরীর আবুল মনসুর সড়কের পাশে জায়গা বরাদ্দ দিয়ে ‘ক্রীড়াপল্লী’র উদ্বোধন করেন এরশাদ। সেখানে একই ধরনের সব ঘরগুলো তিনিই নির্মাণ করে দিয়েছিলেন। ১৯৮৫ সালে ‘হরিজন পল্লী’তে ১০৮টি বসতঘর নির্মাণ করে দেন তিনি।
জেলা জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা জানান, ১৯৮৮ সালের বন্যার সময় এরশাদ ত্রাণ হাতে সদর উপজেলার বোরোরচর, সিরতা, পরানগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় ছুটে গেছেন। সদর উপজেলার চরাঞ্চলের চরখরিচায় দেশের প্রথম বৈদ্যুতিক গম্বুজের মসজিদ উদ্বোধন ও পরিদর্শনে কমপক্ষে তিনবার ময়মনসিংহে এসেছেন তিনি।
জেলা জাতীয় পার্টির সহ সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম তপন বলেন, ময়মনসিংহের উন্নয়নের রূপকার ছিলেন এরশাদ। তার সময়েই মূলত আধুনিক ময়মনসিংহের পথচলা শুরু হয়। ময়মনসিংহ তার কাছে চিরঋণী।
এরশাদ সহজাত নেতৃত্ব গুণ ও উন্নয়নের কারিশমায় ময়মনসিংহবাসীর হৃদয় জয় করেছেন বলে মনে করেন সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ইদ্রিস আলী ও জাতীয় পার্টির নেতা শরীফুল ইসলাম খোকন। তারা বলেন, এরশাদ সারাজীবন উন্নয়ন ও কল্যাণের রাজনীতি করে গেছেন। শ্বশুরালয়ের জেলা ময়মনসিংহে তার উন্নয়নের রেকর্ড পরবর্তী আর কোনো সরকারই ভাঙতে পারেনি।
ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. শামসুল আলম খান বলেন, তারুণ্যের আইকন ছিলেন এরশাদ। ময়মনসিংহের উন্নয়নে তার অবদান অনস্বীকার্য। ময়মনসিংহের সঙ্গে ছিল তার অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। আজীবন ময়মনসিংহের উন্নয়নের ইতিহাসে থাকবে এরশাদের নাম।
এদিকে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে ময়মনসিংহে সাত দিনব্যাপী কর্মসূচি করার কথা জানিয়েছে জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টি।
মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি জাহাঙ্গীর আহমেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ইতোমধ্যে দু’দিনের কর্মসূচি ঘোষণাও করেছে দলটি।
দু’দিনের কর্মসূচির মধ্যে রোববার (১৪ জুলাই) প্রথম দিনে ছিলো- কালো ব্যাজ ধারণ, দলীয় ও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা। এছাড়া পরেরদিন (১৫ জুলাই) রয়েছে সদর উপজেলার প্রতিটি মসজিদে মসজিদে কোরআনখানি ও দোয়ার আয়োজন।
দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভোগার পর সিএমএইচে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার (১৪ জুলাই) সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে মারা যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
কালের আলো/এএম/আরআর