রোহিঙ্গাদের ফেরাতে মিয়ানমার সরকারকে বুঝাবে চীন

প্রকাশিতঃ 8:27 pm | July 04, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের নিজেদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার মাধ্যেমেই চলমান সংকটের সমাধান হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে একমত হয়েছে চীন। একই সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে এ সংকট সমাধান করতে মিয়ানমারকে বোঝানোর আশ্বাস দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং।

বৃহস্পতিবার(৪ জুলাই) চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে দেশটির রাষ্ট্রীয় ভবন ‘গ্রেট হল অব দ্য পিপল’ এ দুই প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে চীনের প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীন চেষ্টা করবে বলে জানান।

পরে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক সাংবাদিকদের ব্রিফিং একথা জানান। এসময় প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার নজরুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন।

পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক সাংবাদিকদের জানান, দুই প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে দু’দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি রোহিঙ্গা, অর্থনীতি ও বাণিজ্য, প্রকল্প বাস্তবায়ন, কানেক্টিভিটি ও ভিসা সংক্রান্ত পাঁচটি ইস্যু বেশি গুরুত্ব পেয়েছে।

শহীদুল হক বলেন, দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যেতে একটা সহায়ক পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য চীনকে ভূমিকা পালনের অনুরোধ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যাতে রোহিঙ্গারা নিরাপত্তা, সম্মান ও নাগরিকত্ব পেয়ে রাখাইন রাজ্যে ফিরে যেতে পারে এবং তারা নিজের ভূমি ও সম্পত্তির ওপর অধিকার ফিরে পায়।

পররাষ্ট্র সচিব জানান, প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধের জবাবে চীনা প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বুঝতে পারি এটা বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ।

শহীদুল হক বলেন, মানবিক কারণে রোহিঙ্গারে আশ্রয় দেওয়ায় তারা (চীন) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান এবং বলেন এটি (রোহিঙ্গা সংকট) অনেক বড় সমস্যা তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, তারা (চীন) মনে করে, মিয়ানমার ও বাংলাদেশকে মিলে এর সমাধান করতে হবে। এ ব্যাপারে চীন আগেও সহযোগিতা করেছে, কেননা ওনারা বলেছেন বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয়েই চীনের বন্ধু।

শহীদুল হক বলেন, দু’দেশ মিলে যাতে এ সমস্যার সমাধান করতে পারে। চীনের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে দু’বার পাঠিয়েছেন প্রয়োজন হলে আবারও পাঠাবো।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, তারা (চীন) চেষ্টা করবেন যে দু’দেশের আলোচনার মধ্যই যেন এ সমস্যার সমাধান খুঁজে পায় এবং চায়না মিয়ানমারকে এ ব্যাপারে বোঝাবে, বলছে এবং বলবে।

রোহিঙ্গা সংকটের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, শান্তি ও স্থিতিশীল, উন্নয়নের জন্য এটা খুব দরকার। জোরপূর্বক বিতাড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কারণে ওই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যত দিন যাবে এই চ্যালেঞ্জটা বড় হবে। সুতরাং, দ্রুত এর সমাধান করা দরকার। সমাধান হলো এরা যেন তাদের নিজস্ব মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে পারে।

পররাষ্ট্র সচিব জানান, রোহিঙ্গাদের মাতৃভূমিতে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে চীনা প্রধানমন্ত্রী একমত। যে মাতৃভূমিতে ফিরে যাওয়ার মধ্যে দিয়ে এ সমস্যার সমাধান হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এর আগে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করেছি। সব ধরনের চেষ্টা করেছি। রোহিঙ্গা মিয়ানমারে যেতে চায় না। কারণ তারা মনে করে ওখানে তাদের ভয় আছে। তারা ফিরে যেতে ভয় পায়।

জাতিগত নিপীড়নের শিকার হয়ে মাতৃভূমি মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে পরিবেশ ও প্রতিবেশগত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। মিয়ানমার বিভিন্ন সময় রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তারা এ জন্য কিছুই করছে না।

কালের আলো/এনএম/এমএইচএ