শিক্ষককে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের নির্দেশ শিক্ষা উপমন্ত্রীর
প্রকাশিতঃ 4:35 pm | July 04, 2019

কালের আলো প্রতিবেদক:
ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজি, চট্টগ্রামের (ইউএসটিসি) ইংরেজি বিভাগের উপদেষ্টা অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদকে গায়ে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় জড়িতদের তদন্ত করে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমানকে ফোন করে ঘটনা জেনে তিনি এ নির্দেশ দেন।
এ বিষয়ে সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান বলেন, ‘উপমন্ত্রী মহোদয় ফোন করেছিলেন। তিনি ইউএসটিসি’র ঘটনা এবং এর প্রেক্ষিতে পুলিশ কি করেছে সেটা জানতে চেয়েছেন। আমি একজন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে জানিয়েছি। এই ঘটনায় গ্রেফতার আসামির সঙ্গে আরও কেউ জড়িত ছিল কি-না, ইন্ধন কে বা কারা দিয়েছে সেটা তদন্তের জন্য বলেছেন উপমন্ত্রী। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই ধরনের ঘটনার পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র আছে কি না সেটাও তদন্ত করতে বলেছেন তিনি।’
জানতে চাইলে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘উনি (মাসুদ মাহমুদ) একজন শিক্ষক এবং সমাজের শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। উনার সঙ্গে যে ঘটনা হয়েছে, এটা গুরুতর অপরাধ। এর সঙ্গে জড়িতরা যেন কোনোভাবেই ছাড় না পায়, সেটা আমরা অবশ্যই নিশ্চিত করব। এর সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির ভেতরে-বাইরে যারাই জড়িত থাকুক না কেন, পুলিশকে তাদের খুঁজে বের করে গ্রেফতার করতে বলেছি। শিক্ষকের মর্যাদা রক্ষা এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আমরা কোনো আপস করবো না।’
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার (২ জুলাই) দুপুর ১২টার দিকে ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজি, চট্টগ্রামের (ইউএসটিসি) ইংরেজি বিভাগের উপদেষ্টা অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদকে অফিস থেকে টেনে বের করে রাস্তায় নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে লাঞ্ছিত করে একদল শিক্ষার্থী। এরপর ওই শিক্ষার্থীরাই আবার নগরীর খুলশীতে ইউএসটিসি ক্যাম্পাসের সামনে প্রায় একঘন্টা ধরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
এই ঘটনার পর ইউএসটিসি’র ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র মাহমুদুল হাসানকে (২২) ক্যাম্পাস থেকে গ্রেফতার করে নগরীর খুলশী থানা পুলিশ। ইউএসটিসি’র ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার দিলীপ কুমার বড়ুয়া বাদি হয়ে শিক্ষককে আগুনে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় শুধুমাত্র মাহমুদুলকে আসামি করা হয়। আদালতের নির্দেশে মাহমুদুলকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী- ক্লাসে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদের পদত্যাগ দাবিতে একদল শিক্ষার্থী গত এপ্রিল থেকে ইউএসটিসি ক্যাম্পাসে আন্দোলন করে আসছিল। মাস দু’য়েক ধরে তাদের আন্দোলন বন্ধ থাকলেও আকস্মিকভাবে গত মঙ্গলবার আবারও তারা রাস্তায় নামে। এর মধ্যেই এই শিক্ষককে লাঞ্ছিত করা হয়।
অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৪০ বছর ধরে শিক্ষকতা করেন। সেখান থেকে অবসরের পর একবছর আগে তিনি ইউএসটিসিতে যোগ দেন।
ইংরেজি সাহিত্যের কোর্স কারিকুলামের অংশ হিসেবে বেশ কয়েকটি কবিতা পড়াতে গিয়ে নারী-পুরুষের জৈবিক সম্পর্ক, পোশাক নিয়ে ক্লাসে নিয়মিত আলোচনা করেন শিক্ষক মাসুদ মাহমুদ। সেসব বিষয়কে যৌন হয়রানি হিসেবে অভিযোগ তুলে ইউএসটিসি’র একদল শিক্ষার্থী আন্দোলনে নেমেছিল।
গত ২৫ এপ্রিল কয়েকজন ছাত্রছাত্রী চট্টগ্রামে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সঙ্গে দেখা করে অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে তোলে স্মারকলিপি দেন। উপমন্ত্রী বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সিএমপি কমিশনারকে লিখিত নির্দেশনা দেন। ২৮ এপ্রিল সিএমপি কমিশনার নগর পুলিশের উপ-কমিশনার বিজয় বসাককে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘কয়েকজন ছাত্রছাত্রী আমার কাছে এসেছিল। ছাত্রীরা সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্টের অভিযোগ করে আমার সামনে কাঁদতে থাকেন। ছাত্ররা খুব উত্তেজিত ছিলেন। সেইসময় ফেনীতে মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাতকে যৌন হয়রানির বিষয়টি নিয়ে খুব আলোচনা চলছিল। যেহেতু একটি অভিযোগ করা হয়েছে, সেটাকে তদন্ত করে দেখতে বলেছি। কিন্তু পুলিশ অভিযোগের বিষয়ে কোনো তথ্যপ্রমাণ পায়নি বলে আমাকে জানানো হয়েছিল। এরপর হঠাৎ করে এই শিক্ষককে এভাবে অপদস্ত করা হল। এখন আমার মনে হচ্ছে, আমার কাছে অভিযোগ নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের আসার পেছনে অন্য কোনো ষড়যন্ত্র আছে। সবকিছুই উদঘাটন হওয়া প্রয়োজন।’
ঘটনার পর মাসুদ মাহমুদ জানিয়েছেন- ইউএসটিসিতে ইংরেজি বিভাগের দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি কয়েকজন শিক্ষককে বিভিন্ন অভিযোগে চাকুরিচ্যুত করেন। নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত না থাকলে পরীক্ষার অংশগ্রহণ করতে না দেওয়ার বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করেন। তাকে হেনস্থার পেছনে চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের ইন্ধন আছে।
কালের আলো/এনএ/এসআরএম