দিবসের মহত্ত্ব তো বুঝলাম, ঘটনার দায় নেবেন না!
প্রকাশিতঃ 7:42 am | March 12, 2018
গোলাম মোর্তোজা:
মার্চ মাসটি যে আমাদের জীবন- ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত, অতীব গুরুত্বপূর্ণ, না লিখলেও তা বুঝতে কারও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। ১৯৭১ সালে,৪৭ বছর আগে যারা ছিলেন কিশোর- তরুণ বা পরিণত মানুষ- তাদের বড় একটা অংশ বিদায় নিয়েছেন। ৬ মার্চ চলে গেলেন ফেরদৌসি প্রিয়ভাসিনী। যাদের অবদানে এই বাংলাদেশ, তিনি তাদেরই অন্যতম একজন। বীরাঙ্গনা, মুক্তিযাদ্ধা, ভিন্ন ধারার এক নান্দনিক ভাস্কর্য শিল্পী, সাহসি মানুষ ফেরদৌসি প্রিয়ভাসিনী।
৭ মার্চ বাঙালিকে অদম্য মানসিকতায় নতুন করে উজ্জীবিত করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সম্প্রতি ইউনেস্কোর স্বীকৃতি ভাসনটিকে আরও মহিমান্বিত করেছে। আওয়ামী লীগের উদ্যেগে ছিল তার বিশাল উদযাপন-আয়োজন। ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারী দিবসের একদিন আগে,৭ মার্চ উদযাপনের সময়কালে ঘটে গেছে নির্মম কিছু ঘটনা। জানা মতে স্কুল- কলেজের বেশ কয়েকজন ছাত্রী নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।
তাদেরকে নিপীড়ন করা হয়েছে শারীরিক এবং মানসিকভাবে।নির্যাতিতদের কেউ কেউ ফেসবুকে তা লিখেছেন। দু’একটি লেখা পড়লে যে কোনও সুস্থ- স্বাভাবিক মানুষের ভেতরটা উলোট- পালট হয়ে যাওয়ার কথা। তা আসলে কতটা হয়েছে, রাষ্ট্র পরিচালনাকারীদের, নাগরিক সমাজের, নারী নেত্রীদের? বিষয়টি নিয়ে কী ভাবছেন এত বড় আয়োজন করে দিবসটি পালন করা আওয়ামী লীগ নেতৃবন্দ? জানি, এদের কারও কারও কথা শুনে মর্মাহত হওয়া ছাড়া আর কিছু করার থাকবে না। ইতিমধ্যে তা শুরুও হয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটে কিছু বলার চেষ্টা করব।
০১.
‘…আমি এই শুয়েরের দেশে থাকব না। জয় বাংলা বলে যারা মেয়ে মলেস্ট করে তাদের দেশে আমি থাকব না।থাকব না। থাকব না…’। কতটা বেদনায়- অপমানে সিক্ত হয়ে একজন কিশোরি একথা লিখতে পারে! তা বোঝার বোধ কী এই বাংলাদেশের আছে?
আসলে এমন প্রশ্ন করার কী কোনো যৌক্তিকতা আছে? যুক্তি যে নেই, তা তো এদেশে বারবার প্রমাণ হয়েছে, হচ্ছে। ইতিমধ্যে কিছু প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। প্রতিক্রিয়া ব্যক্তকারীদেও অনেকে বলছেন, মেয়েটি ফেসবুকে এমন একটি পোস্ট দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী জামায়াত-বিএনপি বা সরকার বিরোধীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছে। এরা বা এদের বাবা- চাচারা বিএনপি ঘরানার। প্রাসঙ্গিক হওয়ার দরকার নেই, গরুকে ধাক্কা দিয়ে নদীতে ফেলে, লিখতে হবে গরুর রচনাই।
০২.
কিশোরটি তার ফেসবুকের পোস্ট অনলি মি করেছে। তার আগে একদল প্রপাগান্ডাবাজ কিশোরীটির আইডি ফেক, প্রমাণ করায় তৎপর হয়ে উঠেছিল। এই প্রপাগান্ডাবাজদের উদ্দেশ্য ছিল, এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি, সরকারকে, ৭ মার্চের গৌরবকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্যে সরকার বিরোধীরা প্রচারণা চালাচ্ছে। কিশোরি তার পরবর্তী পোস্টে লিখছে, ‘পোস্ট অনলি সি করেছি কারণ পোস্টটা রাজনৈতিক উস্কানিমূলকভাবে শেয়ার করা হচ্ছিল। আমি কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পোস্টটা দেইনি।’
মিথ্যা প্রমাণ করতে চাওয়া প্রপাগান্ডাবাজদের প্রথম প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে, কিশোরি দ্বিতীয় পোস্টটি দেওয়াত। রাজনৈতিকভাবে সুবিধা নেওয়ার কাজে যাতে তার পোস্ট ব্যবহার না হয়, কিশোরির এই অবস্থানকে সম্পূর্ণ সমর্থন করি। যদিও জানিনা তার এই অবস্থানে আসার ক্ষেত্রে ভয়- ভিতি কতটা ভূমিকা রেখেছে। তবুও সমর্থন করি কিশোরির এই অবস্থানকে। কারণ যারা এই পোস্ট ভাইরাল করেছেন, তাদের অধিকাংশের কিশোরিটির প্রতি কোনো সমবেদনা নেই।তারা রাজনৈতিক বিবেচনায় পোস্ট শেয়ার করছেন। সরকারকে বিপদে বা বিব্রত করার জন্যে। যারা কিশোরিকে নিপীড়ন করেছে, আর যারা পোস্ট শেয়ার করছে তাদের অধিকাংশের মানসিকতায় তেমন কোনও পার্থক্য নেই। এই পোস্ট শেয়ারকারীদের একটি অংশের দ্বারাই প্রকাশ্যে একজন নারী সংবাদকর্মী নির্যাতিত হয়েছিলেন, তা তো কারও অজানা নয়। তারপরও বিষয়টির ব্যাখ্যা কী এতটাই সরল?
০৩.
মূল রাজনৈতিক দল বা তাদের অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা যদি কোনও ভালো কাজ করেন, তা রাজনৈতিকভাবেই দেখা হয়। কৃতিত্ব মূল দল, অঙ্গ সংগঠন সম্মিলিতভাবেই নেই। সমস্যা শুধু অপকর্মের দায়ভার নেয়ার ক্ষেত্রে। খারাপ কাজ করলে প্রথমে ফতোয়া দেয়ার চেষ্টা করা হয় যে, ‘না এমন কিছু ঘটেনি বা আমাদের কেউ করেনি।’
অধিকাংশ অপকর্ম অস্বীকারের মধ্যে দিয়ে চাপা দিয়ে দেয়া হয়। যে দু’একটি নির্মম সত্য সামনে চলে আসে, চাপা দেয়া যায় না, সেগুলোর ক্ষেত্রে বলা হয়, ‘যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তারা আমাদের দলের নয় বা তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে বা বলা হয় প্রমাণ হলে ব্যবস্থা নেব’।
চাপা দেয়ার সবচেয়ে কার্যকরি কৌশল ‘খতিয়ে দেখা হচ্ছে, তদন্ত হচ্ছে। দোষি প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে’।
এমন বক্তব্য আসে দল থেকে। দল করিনা বলে যারা দাবি করেন তারা বলেন, ‘এটা তো দল করেনি। একজন বা কয়েকজন ব্যক্তি করেছে, দলের পরিচয়ে করেনি। তারা ‘যদি’ দোষী হয় অবশ্যই তাদের শাস্তি হওয়া উচিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নিয়েছেন। অপরাধ করে কেউ পার পাবেন না। এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা, রাজনৈতিকভাবে দেখা ঠিক হবে না। এটা তো দল কেন্দ্রীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে করেনি।’
৪৭ বছরের বাংলাদেশের কপালে যে নারী-কিশোরী নির্যাতনের কলঙ্কের তিলক স্থায়ী ক্ষত তৈরি করছে, তার পেছনে অসত্য এবং চাতুরতার সঙ্গে ভূমিকা রাখছেন এসব ‘দল করি না’ দাবিদার দলদাসরা। তারা জেনেবুঝে দায়িত্ব নিয়ে সত্যকে আড়াল করছেন- চাপা দিচ্ছেন, অসত্য দিয়ে। যারা নারী বা কিশোরিদের নিপীড়ন করছে, তাদের চেয়ে বড় দায় এই সরব এবং নিরব দলদাসদের।
০৪.
ক্ষমতাসীনরা অনবরত বিরোধীদলের যে কোনো কর্মকাণ্ডকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে। আর তাদের নিজেদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আসলেই বলন, এটাকে রাজনৈতিকভাবে দেখা ঠিক হবে না। এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত করতে চাইনা, রাজনৈতিকভাবে দেখতে চাই না। যদি দেখতাম ক্ষমতাসীনরা এভাবে দেখছেন না। ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবালের উপর আক্রমণকারীর মামা কৃষক লীগের নেতা। সে কারণে আওয়ামী লীগের উপর এই আক্রমণের দায় চাপানো ঠিক হবে না, একথা লিখেছি।ক্ষমতাসীনরা নিজেরা এই নীতিতে বিশ্বাস করেন না।
ফয়জুরের ‘মামা’র পরিচয়ের সঙ্গে যদি বিএনপি সংশ্লিষ্টতা থাকত? কী করতেন ক্ষমতাসীনরা? বলতেন ‘বিএনপির উপর দায় চাপানো ঠিক হবে না?’ রঙ মিশিয়ে বিএনপিকে দায়ী করার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়তেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা-নেত্রী-কর্মী সমর্থকরা।
‘তারপরও হয়ত রাজনৈতিকভাবে দেখা ঠিক হবে না’ তত্ত্ব মেনে নেওয়া যেত, যদি ঘটনা ঘটার পর ব্যবস্থা নিতেন ক্ষমতাসীনরা।
০৫.
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বা চেতনা ধারণের কথা মুখে বলে, জঘন্য অসামাজিক-অনৈতিক কাজ সবচেয়ে বেশি সংগঠিত হচ্ছে আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের দ্বারা। আর মূল রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিরব থাকছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অস্বীকার বা চাপা দিয়ে উৎসাহিত করছে। তার কয়েকটি দৃষ্টান্ত।
ক. জাহাঙ্গীর নগরের ধর্ষণের সেঞ্চুরি উৎসব পালনকারী ছাত্রলীগ নেতা মানিকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আওয়ামী লীগ। ধর্ষক মানিককে বিদেশে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছে।
খ. পহেলা বৈশাখে টিএসসি এলাকায় নারী নিপীড়নের ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে। পুলিশি সহায়তায় এককভাবে ক্যাম্পাস নিয়ন্ত্রণকারী ছাত্রলীগকে প্রতিরোধে তো নয়ই, প্রতিবাদেও দেখা যায়নি। অভিযোগ এমন নয় যে, এই নিপীড়ন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা করেছে। কিন্তু প্রতিরোধের পর প্রতিবাদে সক্রিয় ছাত্র ইউনিয়নের উপর আক্রমণ করে ঘটনার অনেকটা দায় নিজেদের ঘাড়ে নিয়ে নিয়েছে ছাত্রলীগ।
গ. সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিশেষ করে ছাত্রীদের প্রথমে যৌন নিপীড়ন করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এর প্রতিবাদ করায় শিক্ষার্থীদের পিটিয়েছে ছাত্রলীগ। ছাত্রীদের শারীরিকভাবে নিপীড়ন তো বটেই,কিল-ঘুষি-লাথি মেরেছে।
ঘ. নিরীহ ছাত্র রফিক এহসানকে সারা রাত ধরে নির্যাতন করে চোখের কনিয়া, মস্তিকে রক্তক্ষরণ, মুখ বিকৃত করে দিয়েছে ছাত্রলীগের নেতারা। সংগঠন ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দু’একজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সরকারকে রাষ্ট্রীয় কোনো আইন প্রয়োগ করতে দেখা যায়নি।
ঙ. ৭ মার্চ যৌন নিপীড়ন চালানো হলো নারী-কিশোরিদের উপর। এখন জানা যাচ্ছে সেই সংখ্যা যা জানা গেছে, তারচেয়ে অনেক বেশি। কয়েকজন কিশোরি তাদের নির্যাতনের কথা জানিয়েছে। দেশের মানুষ জেনে মর্মাহত-ব্যথিত হয়েছে। ক্ষমতাসীনদের বিবেকে নাড়া লাগেনি। দলদাস নারী নেত্রীরা নীরব-নিশ্চুপ।
প্রধান বিরোধী দল যে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটায়নি তা নয়। ইয়াসমীন হত্যা-নির্যাতন তাদের সময়েই হয়েছিল। সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচনের পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের প্রকাশ্যে নির্যাতন করেছিল ছাত্রদল। শামসুন নাহার হলেও নির্যাতন করেছিল ছাত্রদল। যুবলীগ- ছাত্রলীগের নিপীড়নের কাছে, এসব নিপীড়ন নির্যাতন ম্লান হয়ে গেছে। সেই সময় নাগরিক সমাজ, নারী সমাজ জাগ্রত ভূমিকা পালন করেছে। শামসুন নাহার হলের নিপীড়নের পর ভিসি আনোয়ারুন্নাহ চৌধুরীকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। তার চেয়ে ভয়াবহ কত ঘটনা ঘটেছে, ঘটেছে -কারও পদত্যাগ করতে হয়নি। শাস্তি পেতে হয়নি। লোক দেখানো বহিস্কার ছাড়া।
চ. স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, কিশোরি নির্যাতনের সিসি টিভি ফুটেজ হাতে এসেছে। দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কথাটা শুনতে খুব ভালো শোনায়। পহেলা বৈশাখের নিপীড়নের সিসি টিভি ফুটেজ ছিল। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের যৌন নিপীড়নের ভিডিও ফুটেজও ছিল। শিক্ষার্থীদের রড দিয়ে পেটানোর, কিল- ঘুষি- লাথি দেওয়ার কিছু দৃশ্য টেলিভিশনগুলোও দেখিয়েছিল। ব্যবস্থা নেয়ার নামে কেমন রসিকতা করা হয়েছে, তা তো অজানা নয়। এই চাপা দেয়ার কৌশল, আর কতদিন?
০৬.
৭ মার্চ পুরো ঢাকা শহর থাকল আওয়ামী লীগের দখলে। কিশোরি নির্যাতিত হলো বাংলামোটরে। সেখানে আওয়ামী লীগের মিছিল ছাড়া, অন্য কারও মিছিল ছিল না। পুরো শহর দখল করে, পুরো শহর অচল করে দিয়ে ৭ মার্চের তাৎপর্য না বোঝালেও দেশের মানুষ তা বোঝেন। দেশের মানুষ বোঝেন না, জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে কেন স্কুল ছাত্রীর ওড়না টেনে ছিড়ে ফেলা হবে? জনগণকে বাস্তায় আটকে দিবসের তাৎপর্য বোঝাবেন,আর নারী- কিশোরি নিপীড়নের দায় নেবেন না? গৌরবের ৭ মার্চকে কালো আতঙ্কের ভয়াল দিবসের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন কিনা, ভেবে দেখেছেন?
বলবেন এত বড় আয়োজন, লাখ লাখ মানুষ কে কোন দিক থেকে কি করেছে, তা বোঝা সম্ভব নয়। তা যদি বোঝা সম্ভব না হয়, ঠেকানো সম্ভব না হয়, তাহলে এত বড় আয়োজন করে উদযাপন করার কোনো অধিকার আপনাদের নেই। উদযাপন করার অধিকার থাকলে, ঠেকানো বা প্রতিরোধের ক্ষমতা- সক্ষমতা, আন্তরিকতাও থাকতে হবে।
মনে রাখতে হবে ৭ মার্চের ভাষণ উদযাপন করা প্রধান বিষয় নয়, ৭ মার্চের ভাষণ হৃদয়ে ধারণ করার বিষয়। আপনারা বিপুল অর্থ ব্যয় করে উদযাপন না করলেও ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব মানুষের কাছে এতটুকু কমে যাবে না। ২১ বছর ধরে চেষ্টা করে কমানো যায়নি। আপনারা যারা নীতি-নির্ধারক তাদের হৃদয়ে এই ভাসন ধারণ করতে হবে। কর্মী সমর্থকদের ধারণ করতে হবে। তা যতক্ষণ না পারবেন, ততক্ষণ এসব উদযাপন লোক দেখানো ছাড়া অন্য কোনো তাৎপর্য বহন করবে না। আপনারা রাজনৈতিক সুবিধার জন্যে উদযাপন করছেন, কিশোরি নিপীড়নের দায়ও রাজনৈতিকভাবে আপনাদেরই নিতে হবে।
যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতারা নিজেদের কর্মী হত্যা করবে, ধর্ষণ করবে, চাঁদাবাজি করবে, ছিনতাই করবে, আর আপনারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলবেন, আপনাদের বুঝতে হবে এমনটা করা যায় না।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে ধর্ষণ-নিপীড়ন,মাস্তানি, হত্যা, ছিনতাই নয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে মিথ্যার কোনো সম্পর্ক নেই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সম্পূর্ণ সত্য বিষয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে নায্যতী, সখ্যতা, সততা, মানবাধিকার, মুক্ত চিন্তার বিকাশ সর্বপরি গণতন্ত্র।,
ব্যাংকের অর্থ জালিয়াতির আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পারস্পরিক সাংঘর্ষিক।
০৭.
৭ মার্চের ভাষণের মূল বিষয় ছিল ‘অধিকার’ এবং ‘নায্যতা’ প্রতিষ্ঠার দাবি। আজকের বাংলাদেশে যার সবচেয়ে বড় অনুপস্থিতি। নায্যতা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ না নিয়ে,৭ মার্চ নিয়ে বড় কথা বলা যায় না।
নিজেরা বড় আয়োজন সমাবেশ করবেন। বিরোধী দলকেও সেই সুযোগ দিতে হবে। বিরোধী দলকে স্বৈরাতান্ত্রিক মানসিকতায় ঘরে বসে আলোচনা করতে বলবেন, নিজেরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে শহর, অচল করে সমাবেশ করবেন, এর নাম ‘নায্যতা’ নয়। ৭ মার্চের ভাষণের তাৎপর্য সে কথা বলে না।
গোলাম মোর্তোজা: সম্পাদক, সাপ্তাহিক।
s.mortoza@gmail. com