এ যেন ফ্রিস্টাইল নকলের মহড়া!
প্রকাশিতঃ 9:10 pm | June 21, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
ক্লাসরুমের বেঞ্চে বেঞ্চে শিক্ষার্থীরা বসে লিখছেন। কারো সামনে খোলা বই, কারো সামনে ছেঁড়া পাতা। আবার কারো সামনে ছোট ছোট করে লেখা খাতার পাতা। সবাই মনযোগ সহকারেই লিখে যাচ্ছে।
কয়েকজন মিলেমিশেও টিম হিসেবেও লিখছে। তবে সাধারণ কোন খাতায় তারা লিখছে না, লিখছে পরীক্ষার উত্তরপত্রে।
শুক্রবার(২১ জুন) ঠিক এমন চিত্রই দেখা গেছে ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের কান্দিপাড়া আব্দুর রহমান ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে।
কেন্দ্রটিতে শুক্রবার উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন (বাউবি) এইচএসসি প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা চলছিল।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পরীক্ষার্থীরা অবাধে বইয়ের পাতা বেঞ্চের ওপরে রেখে তা দেখে দেখে উত্তরপত্রে লিখছে। আবার কেউ কেউ পুরো বইটাই বেঞ্চের ওপর রেখে উত্তরপত্রে লিখছে। আবার একজন পরীক্ষার্থীর সামনে থাকা বই বা বইয়ের পাতা দেখে কয়েকজন পরীক্ষার্থী লিখছে। কিন্তু তা প্রতিরোধে তেমন কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি।
তবে কেন্দ্রে প্রবেশ করার সময় পরীক্ষায় দায়িত্বপ্রাপ্তদের দোহাই দিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা দেন। সংবাদকর্মী পরিচয় পাওয়ার পর কেন্দ্রে প্রবেশের অনুমতি মিললেও পরীক্ষার হলে প্রবেশের অনুমতি মেলেনি।
তবে এর পর অনুমতি মিলে, তবে ক্যামেরা ব্যবহার করতে না পাড়ায় কৌশলে তাদের চোখ এড়িয়ে মুঠোফোনে অবাধে বই খুলে লেখার ছবি ধারণ করা হয়। এ সময় পরিদর্শকের দায়িত্বে থাকা দু-তিনজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভাই বুঝতেই তো পারেন। এখানে কী ধরনের পরীক্ষার্থীরা অংশ নিচ্ছে। আপনি থাকলে থাকায় তাদের সমস্যা হচ্ছে, তাই চলে গেলে ভালো হয়।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরীক্ষার্থী বলেন, ‘যাদের কোনো উপায় নেই, তারাই উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কোর্সে ভর্তি হয়। শিক্ষা নয়, সার্টিফিকেট পাওয়াটাই মূল লক্ষ্য। এসব কারণে পরীক্ষাকেন্দ্রে কিছুটা নকল করার সুযোগ না দিলে বেশিরভাগ পরীক্ষার্থীই ফেল করবে। আর ফেল করলে বাউবিতে ছাত্র-ছাত্রী অনেক কমে যাবে।’
তবে এই পরীক্ষার্থীর দাবি অন্য বছরের তুলনায় এবার পরীক্ষায় অনেকটাই নকল কম।
কয়েকজন শিক্ষক বলেছেন, বাউবির পরীক্ষা কেন্দ্রটি উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সে কারনেই পরীক্ষার্থীরা অবাধে নকলের সুযোগ পাচ্ছে। কেন্দ্রটি উপজেলা সদরে থাকলে অবাধে নকলের সুযোগ পেত না কোন পরীক্ষার্থীই। নকল কমাতে চাইলে অবশ্যই কেন্দ্র পরিবর্তন করে উপজেলা সদরে আনতে হবে।
এ ব্যাপারে পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির সভাপতি গফরগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মাহবুব উর রহমান বলেন, ‘আপনি এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে কথা বলেন, আমিও বলব।’
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘বাউবির পরীক্ষার ব্যাপারে আপনি যেভাবে বলেছেন, মানুষও এভাবেই বলে। আর ওই কেন্দ্রে উম্মুক্ত নকল হওয়ার বিষয়টি আমিও শুনেছি। তবে আমি বাউবির পরীক্ষার কোন দায়িত্বে নেই।’
কালের আলো/এআর/এনএল