বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হলে জিয়া হত্যাকাণ্ড ঘটতো না : গণপূর্তমন্ত্রী

প্রকাশিতঃ 5:29 pm | June 21, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

বিচারহীনতার রাজনীতির কারনেই মানুষ নির্বিচারে হত্যা করতে সাহস পায় বলে মন্তব্য করেছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।

তিনি বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর যদি এতে জড়িতদের সঠিক বিচার করা হতো, তাহলে এরপর সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডটি ঘটতো।

শুক্রবার (২১ জুন) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন পূর্তমন্ত্রী। ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনটি আয়োজন করে ডিআরইউ।

মন্ত্রী বলেন, বিচারহীনতার রাজনীতি আমাদের দেশে পুরনো ঘটনা। এ কারণে মানুষ নির্বিচারে হত্যা করতে সাহস পায়। কারণ সঠিক বিচার হয় না। যেমন বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর যদি সঠিক বিচারটি হয়ে যেতো, তাহলে জিয়াউর রহমানকে আর কেউ হত্যা করার সাহস পেতো না, শুধু বিচারের ভয়ে। বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এসেও চার্জশিট দিতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার কার্যক্রম সংসদে আইন করেও বন্ধ করা হয়েছিল। আমি চাই সঠিক বিচার হোক। এক্ষেত্রে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার সঠিক বিচার আমি কামনা করি।

মন্ত্রী বলেন, বনানীতে অগ্নিকাণ্ডের পর সঠিক তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। যেটা অত্যন্ত সাফল্যের বিষয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নিয়ে অন্যান্য দোষীদের পাশাপাশি সরকারি লোকজনদেরও ধরা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে আমরা নির্দেশ দিয়েছি।

অনিয়ম করে ঢাকা নগরে গড়ে তোলা ১ হাজার ৮০৮ বাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে উল্লেখ করে গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, ২৪টি টিমের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলাম রাজধানীর অনিয়মে পরিপূর্ণ বাড়িগুলো চিহ্নিত করার জন্য। আমরা ১ হাজার ৮০৮টি বাড়ি চিহ্নিত করেছি। এসব বাড়ির মধ্যে অনেকেই আছেন অনেক ক্ষমতাধর, যারা ভাবেননি তাদের বাড়ির বিরুদ্ধে রিপোর্ট হতে পারে। এই ১ হাজার ৮০৮ বাড়ির প্রত্যেকটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাজউককে নির্দেশ দিয়েছি। এক্ষেত্রে কেউ ছাড় পাবে না। আইন সবার জন্য সমান হবে।

রাজধানীকে নিরাপদ রাখতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, পুরান ঢাকায় এমন অনেক বিল্ডিং আছে যেগুলো ৫০০ বছরের পুরনো। আমরা তাদের জানিয়েছি, সরকারি সহায়তায় এসব বিল্ডিং ভেঙে সিঙ্গাপুরসহ উন্নত বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো নতুন বিল্ডিং বানাবো। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনকেও আমরা প্রস্তাবনা দিয়েছি। এক্ষেত্রে জায়গা অনুসারে সেখানে মানুষ ফ্ল্যাট পাবে। অনেকেই সাড়া দিয়েছেন।

হয়তো শিগগির এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হতে পারে। এছাড়া ঢাকার অন্যান্য স্থানে যেসব ভবন একেবারে ঝুঁকিপূর্ণ সেগুলো সিলগালা করে দেওয়া হবে। যেগুলো একটু কম ঝুঁকিপূর্ণ সেগুলোকে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বা আলাদা পিলারের মাধ্যমে স্থায়িত্ব দেওয়া হবে। এসব বিষয় নিশ্চিত করতে হবে, কারণ মানুষের জীবনের চেয়ে ভবন মালিকদের আয়ের উৎস বড় হতে পারে না।

দেশে আর কোনো তদবির চলবে না জানিয়ে দিয়ে মন্ত্রী বলেন, হঠাৎ একটি ঘটনা শুনলাম রাজধানীর একটি ভবনের ফাইল হারিয়ে গেছে। আমি দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় আমার সামনে ৭০০ ফাইল নামানো হয়েছে। ৩০০ ফাইল পাওয়া যায়নি, সে ফাইলগুলো খুঁজে পাওয়ার ব্যবস্থা করলাম। পরবর্তীতে সেই ফাইল পাওয়া গেলো। প্রয়োজনে বিকল্প ফাইল বানানোর কাজ চলছে। এছাড়া মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন অফিসে অনেক পাওয়ারফুল কর্মকর্তাদের সন্ধান পেলাম।

যাদের নাড়ানো যেতো না। আমি তাদেরই একজনকে পাহাড়ি এলাকায় বদলি দিয়েছি। আমার মন্ত্রণালয় সম্পূণ দুর্নীতিমুক্ত থাকবে, কোনো তদবির চলবে না। একটি ভবন নির্মাণ করতে ১৬টি টেবিলে দৌড়াদৌড়ি করতে হতো আগে। সেখান থেকে ১২টি টেবিল বাদ দিয়েছি। ৫৭ দিনের ভেতরে ভবন পাস করানোর ব্যবস্থা করেছি। টেবিলে টেবিলে ঘোরার দিনও শেষ করেছি। অটোমেশন ব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে ঘরে বসেই প্ল্যান জমা দেওয়ার সুবিধা রয়েছে এখন।

শ ম রেজাউল করিম বলেন, বিজিএমইএ ভবন ভাঙা যাবে না, এমন অবস্থা ছিল। বিল্ডিং ভাঙা ঝুঁকিপূর্ণ কি-না তা নিয়ে যেমন শঙ্কা ছিল, তেমনি তারা শক্তিশালী সংগঠন, এমন কথাও শোনা গেছে। তবু আমরা ভাঙার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি। সরকারের নির্ধারিত দামের বাইরে কেউ প্লট বিক্রি করলে আমরা সেটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।

রাজউকের বিষয়ে তিনি বলেন, রাজউক অনেকগুলো প্রকল্প হাতে নিয়ে ফেলেছে। যেগুলোর সব বাস্তবায়িত হয়নি। এ কারণে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এখন রাজউক যেন আর নতুন কোনো প্রকল্প হাতে নিতে না পারে, সেদিকে আমি আন্তরিকভাবে নজর রাখবো। আগে এসব প্রকল্প শেষ করতে হবে।

চকবাজারে জাহাজবাড়ির মতো ঐতিহাসিক স্থাপনা ভাঙা হয়েছে, এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আগে দেখতে হবে জাহাজবাড়ি প্রত্নতাত্মিক অধিদপ্তরের তালিকায় আছে কি-না। যেটা আমার মন্ত্রণালয়ের কাজ নয়। সেটা ওই তালিকায় থাকলে তা রক্ষার দায়িত্ব আমাদের।

গেন্ডারিয়ায় রাজউকের পুকুর, যেটা ফায়ার সার্ভিসের পানি নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হতো, সেটা অবৈধ দখল হয়ে গেছে জানিয়ে সাংবাদিকরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, জায়গাটির জন্য ভুয়া কাগজ তৈরি করে ওই এলাকার কাউন্সিলর উচ্চ আদালতে গিয়ে নিজেদের পক্ষে রায়ও নিয়েছেন। তবু আমি অ্যাটর্নি জেনারেল বরাবর চিঠি দিয়েছি। এই জায়গা কোনোভাবেই বেদখল হতে দেবো না। প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবো।

কালের আলো/এআর/এমএম