আওয়ামী লীগকে কোন্দল মুক্ত করার দাবি তৃণমূলের নেতাদের

প্রকাশিতঃ 1:58 am | June 16, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার দাবি জানিয়েছেন দলটির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। একেই সঙ্গে তাঁরা দলকে কোন্দল মুক্ত করতেও কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জেলা পর্যায়ের সিনিয়র নেতাদের অভিজ্ঞতা দিয়ে কোন্দল দূর করার অনুরোধ জানিয়েছেন।

শনিবার (১৫জুন) দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের ঢাকা বিভাগের বিশেষ সাংগঠনিক সভায় জেলা ও মহানগর নেতারা এমন দাবি উত্থাপন করেন।

আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগের দয়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

সভায় নারায়নগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই বলেন, ‘আমাদের ৬ থানার ১২ জনের মধ্যে ৬ জনই ভারপ্রাপ্ত। এগুলো আমরা ভারমুক্ত করতে চাই। তূণমূলের প্রশাসন এমপি-মন্ত্রীদের বেশি গুরুত্ব দেয়। আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় না।

এবিষয়ে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যায় কি না বা নির্দেশনা দেওয়া যায় কী না, সে বিষয়ে ভেবে দেখতে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানাই।’

নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, ‘মহানগর আওয়ামী লীগ শক্তিশালী সংগঠন। ২০১৫ সালে মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি পেয়েছি। কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় এখনও ওয়ার্ড কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ করতে পারি নাই। কারণ সীমানা নিয়ে আমাদের মধ্যে একটা জটিলতা রয়েছে।’

সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আলোচনা না করেই বিভিন্ন সময় মহানগরের অর্ন্তগত সহযোগী সংঠনগুলোর কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিগুলো আসলে কাদের নির্দেশে গঠন করা হয়?

এই সহযোগী সংগঠনগুলো মহানগর আওয়ামী লীগের কোন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে না। আমাদের কোনো সহযোগিতাই করে না।’

টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুক বলেন, ‘আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। কোনোভাবেই দ্বিধাবিভক্ত হওয়া যাবে না।

একে অপরের বিরুদ্ধে কেউ যেন কোন সুযোগ নিতে না পারে, তিনি এমপিই হন বা মন্ত্রীই হন। দল দলের মতো চলবে। দলের অস্তিস্ব ঠিক থাকলে মন্ত্রিসভার অস্তিত্ব ঠিক থাকবে।

আওয়ামী লীগের অতীত ঐতিহ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমাদের ইতিহাসে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ। এটার মানেই হলো সংগ্রাম। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মানেই সংগ্রাম। আর সেই সংগ্রামের বিজয়। আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে কয়টা আন্দোলন করেছে তার সবকটিতেই সফল হয়েছে।

আমরা শুধু এক জায়গায় ব্যর্থ হয়েছি। সেটি হলো- আমরা বঙ্গবন্ধুর প্রাণ রক্ষা করতে পারিনি। এটা আমাদের ব্যর্থতা। ’

গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি চৌধুরী এমদাদুল হক বলেন, ‘সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে ছাত্রলীগ ও যুবলীগসহ আর একটি সংগঠনের কমিটি সম্মেলনের মাধ্যমে করা হয়েছে। বাকীগুলোর কমিটি কেন্দ্র থেকে ঠিক করে দেওয়া হয়েছে।

এই সংগঠনগুলো নিয়ে আমাদের বিভ্রান্তির মধ্যে পড়তে হয়। যাদের আওয়ামী লীগের ঢোকার যোগ্যতা নাই; বিভিন্ন সময় তাদের দিয়েই কেন্দ্র থেকে এই কমিটিগুলো করে দেওয়া হয়। তারা কাজ করে তাদের নিজেদের মতো।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ থেকে নির্দেশনা দিতে হবে। কোনো কমিটি করতে গেলে জেলা কমিটির সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে।’

রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিল্লুল হাকিম সহযোগী সংগঠনের সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সহযোগী যে সংগঠনগুলো আছে, এগুলোর কমিটি নাই। আমরা চেষ্টা করেছি, কিন্তু ফলপ্রসু ও কার্যকর হয় নাই। ’

কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি আরও বলেন, ‘সংগঠনের বিরুদ্ধে যারা কাজ করে তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে বহিষ্কারের সুপারিশসহ কেন্দ্রীয় কমিটিতে প্রেরণ করেছি। কিন্তু দীর্ঘদিন সেন্ট্রাল কমিটি থেকে এব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত পাইনি। ’

সহযোগী সংগঠন নিয়ে তিনি বলেন, ‘সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে কিছু অযাচিত হস্তক্ষেপ আমরা লক্ষ্য করি। সংগঠনের কমিটি করার জন্য বিভিন্ন রকম চাপ সৃষ্টি করা হয়। আমাদের সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যারা আছেন কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া উচিত।

এগুলোতে যেন কোনভাবেই তারা ইন্টারফেয়ার না করে। এতে সংগঠনের ক্ষতি হয়। ‘

সভায় দলের গ্রুপিং-কোন্দলের বিষয়টি আমলে নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দলের মধ্যকার অনৈক্য ও কলহ দূর করতে হবে। আওয়ামী লীগ যেন আওয়ামী লীগের শত্রু না হয়। আর আপন ঘরে যার শত্রু, তার বাইরের শত্রু র কোনো প্রয়োজন নেই।’

তিনি বলেন, মাঝে মাঝে এমন অবস্থায় আমরা নিপতীত হই। আমরা নিজেরাই আমাদের মধ্য শত্রুতা সৃষ্টি করি। কাজেই আপনাদের কাছে অনুরোধ, জেলা পর্যায়ের সিনিয়র নেতা যারা আছেন তারা বসে নিজেদের অভিজ্ঞতা দিয়ে কলহ-কোন্দল দূর করবেন।’
সভায় ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত দলে নেতা-কর্মীদের ডাটা আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে পাঠাতে জেলা নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এর আগে দলের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিশেষ সম্মননা জানাতে প্রতি জেলা থেকে দুজন করে প্রবীণ ও ত্যাগী নেতার নাম চেয়েছিল আওয়ামী লীগ।

বিশেষ সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক রিপোর্টের সঙ্গে দু’জন করে নেতার নামও জমা দেওয়া হয়।

ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সঞ্চালনায় সভায় দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক শামসুন্নাহার চাঁপা, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মারুফা আক্তার পপি, আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।

কালের আলো/পিও/এমএম