সংস্কার কমিশনে নিত্যনতুন প্রস্তাব সংসদ পরিচালনায় প্রভাব ফেলবে: মির্জা ফখরুল

প্রকাশিতঃ 1:46 pm | July 06, 2025

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, কালের আলো:

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় নিত্যনতুন প্রস্তাব জমা হওয়ায় সংসদ ও রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে গভীর প্রভাব পড়তে পারে। রোববার (৬ জুলাই) গুলশানে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, জাতীয় ঐকমত্য ও ৬টি সংস্কার কমিশনে বিএনপি সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে ভোটারদের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছে। সভায় আমরা যুক্তি ও প্রমাণা দিয়ে একমত করার চেষ্টা করেছি।

তবে সম্প্রতি প্রস্তাবগুলোতে দেখা গেছে—কিছু প্রস্তাব অস্পষ্ট। নতুন কিছু বিষয় যোগ হচ্ছে। এতে কাজ আটকে যাচ্ছে। সংস্কার বিলম্বিত হচ্ছে।

তিনি বলেন, যদি প্রস্তাবগুলো ইতিবাচক হয়, জনগণ তা মেনে নেবে। কিন্তু রাষ্ট্রের মালিক মানুষকে না জানিয়ে বড় পরিবর্তন নেওয়া ঠিক নয়।

তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রীয় জনপ্রতিনিধি গঠন — সংসদ ও সরকার — দুর্বল করে দেওয়ার বিপক্ষে আমরা। সেটি হলো সংস্কারের বিরুদ্ধে।

ফখরুল জানান, ৬টি কমিশনের মধ্যে পুলিশ সংস্কার নিয়ে আলোচনা এখনও শুরু হয়নি। তবে র‍্যাব বিলুপ্তিসহ বেশিরভাগ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে।

দুদক সংস্কারে ৪৭টি প্রস্তাবের মধ্যে ৪৬টিতে একমত হয়েছি। মাত্র একটি প্রস্তাবে—আদালতির অনুমতি নেওয়ার নিয়ম—বদল না করে রাখতে আমাদের যুক্তি রয়েছে।

জনপ্রশাসন সংস্কারে ২০৮টির মধ্যে ১৮৭টিতে একমত, ৫টিতে আংশিক একমত, ১১টিতে ভিন্নমত।

বিচার বিভাগীয় সংস্কারে ৮৯টির মধ্যে ৬২টিতে একমত, ৯টিতে আংশিক একমত, ১৮টিতে যুক্তিসহ ভিন্নমত। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার সুপারিশে আমরা একমত।

নির্বাচনী সংস্কারে ২৪৩টির মধ্যে ১৪১টিতে একমত, ১৪টিতে আংশিক একমত, ৬৪টিতে একমত হলাম ভিন্নমতসহ। ২৪টি প্রস্তাব আমরা মানিনি, কারণ তা নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক স্বাধীনতাকে ক্ষুন্ন করে।

সংবিধান সংস্কারে ১৩১টিতে ধারাব্যবহার করে মন্তব্য এবং অধিকাংশে সম্মত হয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগে এখনো আমরা একমত।

তিনি আরও জানালেন—সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বিরোধী দলের পক্ষে দেওয়ার বিষয়ে, ৪টি গুরুত্বপূর্ণ পদ, আসন সংখ্যা অনুযায়ী দিতেও দল একমত। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সংশোধনে ঐকমত্য হয়েছে।

এছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রবর্তন, ন্যায়পাল আইন জরুরি করা, নির্বাচনী এলাকার সীমানা সংশোধন, বিশেষায়িত কমিটি গঠনেও একমত হয়েছি।

বিভাগীয় হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থাপনে আলোচনায় একমত রয়েছি, তবে বাস্তবায়নে সময় লাগবে—কারণ ১৯৮৮ সালে আদালত সেটি বাতিল করেছে।

তিনি বলেন, সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নযোগ্য নয়, অনেক ক্ষেত্রে উদ্দেশ্যই পূরণ করতে পারবে না। এসব প্রস্তাবে একমত হওয়া শুধু ঐকমত্যের নামকল্পে, যার ফল বাস্তবায়নে কিঞ্চিৎ সমাধান হবে না।

ফখরুল নোট করেন, আগ্রহ ও প্রত্যাশার সঙ্গে সাথে হতাশা ও উৎকণ্ঠাও রয়েছে জনগণের মাঝে।

শেষে তিনি বলেন, তবে আমরা যুক্তিগ্রাহ্য মতামত দিয়ে দায়িত্ব পালন করছি। ঐকমত্যে সহযোগিতা করছি, অথচ প্রস্তাবে যদি মনগড়া বা জনগণকে সম্পৃক্ত না করে বড় রূপান্তর আনা হয়—তাহলেই সেটি গণতন্ত্রের বিপক্ষে।

কালের আলো/এমডিএইচ