চেয়ারম্যানের কঠোর পদক্ষেপে আস্থা বাড়ছে দুদকে

প্রকাশিতঃ 3:24 pm | October 03, 2025

কালের আলো রিপোর্ট:

নিজেদের ভেতর থেকে দুর্নীতিমুক্ত হতে চান দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন। তিনি বলেছেন, ‘আমার কমিশন যদি দুর্নীতিমুক্ত অফিস না হয়, তাহলে অন্য অফিসকে দুর্নীতির ব্যাপারে বলার নৈতিক অধিকারই থাকে না। তাই প্রথম কাজ হচ্ছে নিজেদের ভেতর থেকে দুর্নীতিমুক্ত হওয়া।’

কথার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করার মানসিকতা রয়েছে দুদক চেয়ারম্যানের। তাঁর গৃহীত পদক্ষেপে দুদকের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা বাড়ছে। দুদকের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা ইউনিটের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন, অন্তত অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা–কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, দায়িত্বে গাফিলতি, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়সহ নানা ‘গুরুতর’ অভিযোগ রয়েছে। তার ভিত্তিতে কারণ দর্শানোর নোটিস, বিভাগীয় ব্যবস্থা, বদলি ও সাময়িক বরখাস্তের মত সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।

জানা যায়, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর–তিন মাসে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ছয় কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন; বদলি করা হয়েছে ৫১ কর্মকর্তা ও ১৮ কর্মচারীসহ ৬৯ জনকে। এছাড়া পতিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার পরিবারের সদস্য এবং ১০ শিল্পগোষ্ঠীর ‘পাচার করা’ অর্থ ফেরাতে যে ১১টি যৌথ তদন্ত দল (জেআইটি) কাজ করছে, বদলির তালিকায় সেসব দলের কর্মকর্তাও আছেন। বদলি করা হয়েছে দলের প্রধানকেও।

দুদকের কেউ কেউ বলছেন, অনিয়ম করলে কর্মীরাও যে ছাড় পাবেন না, কমিশন মূলত সে বার্তা দিতে চাইছে। দুদকের সুনাম বাড়াতে এসব পদক্ষেপ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন তারা।

আবার কেউ আশঙ্কা করছেন, একের পর এক বদলির কারণে তদন্ত কাজের বিশেষ করে যৌথ তদন্ত কাজের গতি ধীর হয়ে যেতে পারে। সাময়িক বরখাস্ত ও বদলির কারণে এক ধরনের ভয়ের পরিবেশ তৈরি হওয়ার কথাও বলছেন তারা। তবে শঙ্কার চেয়ে ভারী হচ্ছে প্রশংসার পাল্লাই।

জানা যায়, গত ২১ সেপ্টেম্বর দুদকের সিস্টেম অ্যানালিস্ট মো. রাজিব হাসানকে সাময়িক বরখাস্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। আদেশে বলা হয়, ‘গোয়েন্দা অনুসন্ধানে তার বিরুদ্ধে দুদক ও রাষ্ট্রের স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থেকে ব্যক্তিস্বার্থে বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে।’ এর আগে গত ৮ সেপ্টেম্বর সাময়িক বরখাস্ত করা হয় দুদকের পরিচালক খান মো. মীজানুল ইসলামকে। তার বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপের কারণ হিসেবে আদেশে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘অনৈতিক সুবিধা’ নেওয়ার অভিযোগ ওঠার পর কমিশনের নির্দেশে গোপন অনুসন্ধান চালানো হয়। অনুসন্ধানে জানা যায়, মীজানুল ১৭ অগাস্ট ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন। তিন দিন চিকিৎসা শেষে তিনি ছাড়পত্র নেন। কিন্তু চিকিৎসা বাবদ দুই লাখ চার হাজার ১৩২ টাকা নিজে পরিশোধ না করে অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি মাহাবুবুল আনামের দেওয়া ‘গ্যারান্টির’ ভিত্তিতে ছাড়পত্র গ্রহণ করেন তিনি। এর আগে গত ১৭ জুলাই ‘সময়মতো’ অনুসন্ধান প্রতিবেদন জমা না দেওয়ায় সাময়িক বরখাস্ত করা হয় দুদকের উপপরিচালক কমলেশ মন্ডলকে।

দুদক বলছে, অভিযোগের বিষয়ে ২০২২ সালের ৪ ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের ১০ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি প্রতিবেদন দাখিল করেননি এবং সময় বাড়ানোর আবেদনও করেননি। এ কারণে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। দেরিতে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কারণে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে এক ধরনের ভয় কাজ করছে বলে তুলে ধরেন একাধিক কর্মকর্তা। বর্তমান সরকারের এক বছরে দুদকে কাজের চাপ বেড়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরে তারা বলছেন, অনুসন্ধান ও তদন্ত কার্যক্রমে নথিপত্র সংগ্রহ, সংশ্লিষ্টদের তলবসহ নানা ধাপ সম্পন্ন করতে যথেষ্ট সময় লাগে। একজন কর্মকর্তার ওপর একসঙ্গে একাধিক অভিযোগের দায়িত্ব পড়ছে। পাশাপাশি পুরনো মামলার তদন্ত চালানো এবং আদালতে গিয়ে সাক্ষ্য দেওয়ার কাজও সামলাতে হচ্ছে।

দুদকের এমন পদক্ষেপকে ইতিবাচক হিসেবে মূল্যায়ন করা কর্মকর্তারা বলছেন, এতে করে কমিশনে একটি সুশৃঙ্খল কর্মপরিবেশ তৈরি হয়েছে। ‘ফাইলভিত্তিক’ তদবিরও কমে গেছে। এ ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে দুদকের প্রতি আস্থা তৈরি হবে। আবার কেউ বলছেন, সরকার পরিবর্তনের পর দুদকেও রদবদলের সূত্র ধরে কিছু কর্মকর্তা প্রভাবশালী হয়ে উঠেছেন। তাদের বিরুদ্ধে ‘অনৈতিক সুবিধা’ গ্রহণের অভিযোগও উঠেছে। তাদের জন্য এমন পদক্ষেপ একটি বার্তা হিসেবে কাজ করবে বলে মন্তব্য তাদের।

কালের আলো/এএইচ/এসআইপি