নির্বাচন ঘিরে মাঠ প্রশাসন গোছাচ্ছে সরকার

প্রকাশিতঃ 12:16 am | August 08, 2025

কালের আলো রিপোর্ট:

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মাঠ প্রশাসন গোছানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রমে উন্নয়ন এবং দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। সরকারপ্রধানের নির্দেশনায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী লটারির মাধ্যমে পুলিশ বিভাগের এসপি ও ওসিদের পদায়নের কথা জানিয়েছেন। নির্বাচনকে দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্য করতে মাঠ প্রশাসনের কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক আমলাদের অনেকেই। তবে অতি গুরুত্বপূর্ণ ডিসি পদটিতে পদায়ন কৌশল এখনও নির্ধারণ হয়নি। তিনি জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদেও পদায়নে লটারি পদ্ধতি অনুসরণের অনুরোধ জানিয়েছেন। জেলা প্রশাসক পদায়নে এখনও চূড়ান্ত হয়নি বলে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি মোহাম্মদ শফিকুল আলম জানিয়েছেন।

গত ৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে চায় সরকার। এ জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে চিঠি পাঠানো হবে। যেন নির্বাচন কমিশন আগামী রমজানের আগে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এর পরের দিনই পুলিশ বিভাগের জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) ও ওসিদের লটারির মাধ্যমে পদায়নের সিদ্ধান্তের কথা জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে গত বুধবার (০৬ আগস্ট) আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নবিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণ নিয়ে আয়োজিত সভা শেষে তিনি বলেছেন, ‘এবার আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এটা স্যারের (প্রধান উপদেষ্টা) নির্দেশনা থেকে। সিদ্ধান্তটা হলো- আমরা বিশেষ করে পুলিশ বিভাগের এসপি এবং ওসিদের সবার সামনে লটারির মাধ্যমে পোস্টিংটা (পদায়ন) করবো। এখন যারা যেখানে আছে, তাদের আমরা বিভিন্ন জায়গায় পদায়ন করবো। সেটা আমরা লটারির মাধ্যমে করে দেবো। যেন কারো কোনো ধরনের সন্দেহ না থাকে যে, সে অমুকের সাপোর্টার।’ তিনি জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদেও পদায়নে লটারি পদ্ধতি অনুসরণের অনুরোধ জানিয়েছেন। এসপিদের লটারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েই হবে। ওসিদের বিভাগভিত্তিক পোস্টিং করে লটারি হবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কিছুদিন আগে এটা হবে বলেও জানান উপদেষ্টা।

সাবেক সচিব একেএম আবদুল আউয়াল মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এসপি-ওসিদের লটারির মাধ্যমে পদায়নের যে সিদ্ধান্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিয়েছে এটি ভালো। ডিসি ও ইউএনওদের ক্ষেত্রেও এটা করা উচিত।’ আবার, নির্বাচনকে সামনে রেখে লটারির মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে পদায়নের বিষয়ে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক আমলারা সাধুবাদ জানিয়ে বলেছেন, লটারি ব্যবস্থা ইতিবাচক। কারণ এর মাধ্যমে অর্থের লেনদেন, তদবির ঠেকানো সম্ভব হবে। যা ভোটে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। অন্যদিকে কেউ কেউ লটারির বিরোধিতা করে বলছেন, সঠিক কর্মকর্তাকে সঠিক জায়গায় বসাতে হবে। সেটা লটারির মাধ্যমে সম্ভব নয়। কারণ ভোটের ক্ষেত্রে অঞ্চলভেদে ভিন্নতা আছে। যোগ্যতা, দক্ষতা, সাহস- এসব গুণ বিবেচনা করে সঠিক জায়গায় সঠিক কর্মকর্তাকে পদায়ন করতে হবে।

জানা যায়, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রয়োজন হবে অতিরিক্ত বাজেট। আগামী নির্বাচন উপলক্ষে সরকার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটেও বিশেষ বরাদ্দ রেখেছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জেলা প্রশাসকদের অনুকূলে বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, যা মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় করা হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠ গোছানোর অংশ হিসেবে রয়েছে উপর মহলের কার্যকর নির্দেশনা। ইতোমধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মাঠ প্রশাসনের কার্যক্রমের জন্য কিছু কিছু নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে, যা কেন্দ্র ও মাঠ প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয় করবে। যদিও এই নির্দেশনা সময় ভেদে পরিবর্তন করা হতে পারে। সরকার নানামুখী পদক্ষেপের মাধ্যমে মাঠ প্রশাসনকে আরও শক্তিশালী ও কার্যকর করার চেষ্টা করছে। একটি প্রশ্নমুক্ত নির্বাচন উপহার দিতে চাচ্ছে।

কালের আলো/এইচএন/এমএএইচ