শ্রীদেবীর স্মৃতিচারণায় যা লিখেছেন মিঠুন চক্রবর্তী

প্রকাশিতঃ 1:08 pm | February 27, 2018

কালের আলো ডেস্ক:

শ্রীদেবীর সঙ্গে সম্পর্ক ভাঙার অনেক বছর পর ‘আমার নায়িকারা’ শিরোনামে একটি বই লেখেন ভারতের বলিউড ও টলিউডের অন্যতম বড় সুপারস্টার মিঠুন চক্রবর্তী। সেই বইয়ে শ্রীদেবীর স্মৃতিচারণায় যা লেখেন মিঠুন…

‘সাল ১৯৮৪। প্রযোজক রাকেশ রোশন জানাল, ও আমায় নিয়ে একটা ছবি করতে চায়, ছবির নাম ‘জাগ উঠা ইনসান’। হিরোইন কে? না, শ্রীদেবী। শোনামাত্র যে কোনও ‘ইনসান ’-এরই ‘জেগে ওঠার কথা’। কারণ শ্রীদেবী তখন ‘হটেস্ট’ নায়িকা। ওর শরীরী সম্মোহে মন্ত্রমুগ্ধ, পর্দার সামনে হাঁ হয়ে চেয়ে থাকা ‘পাবলিক’। ‘হিম্মতওয়ালা’, ‘তোফা’, ‘মকসদ’, ‘মাওয়ালি’… জিতেন্দ্রর সঙ্গে একের পর এক ‘হিট -হট’ ছবি দিয়ে বক্স -অফিস তো নিয়েছেই, এক নম্বর আসন নেওয়ার লক্ষ্যেও প্রথম দাবিদার।

ওর ‘সদমা’, ‘হিম্মতওয়ালা’, ‘তোফা ’… ছবিগুলো আমার দেখা হয়নি। তবে জানতাম, আমার সঙ্গে ছবি করার বহু আগে থাকতেই ওর লক্ষ ফ্যান। সেই মেয়েই শুটিং চলাকালীন জানাল, ও নিজেই নাকি আমার ফ্যান। ‘ডিস্কো ড্যান্সার’ ছবিটা দেখেছে অন্তত কুড়িবার। …জানি না, তবে এটুকু জানি, মনের ভাললাগা ব্যক্ত করতে ওর বিন্দুমাত্র সঙ্কোচ ছিল না। পরিষ্কার মনের মেয়ে। কোনও কিছু ভালো লাগলে, পরিষ্কার জানাত। ছবিতে একটা গানের সিকোয়েন্স ছিল, যেখানে আমি বাঁশি বাজাব, ও নাচবে। শুটিংয়ের ফাঁকে, আমার বাঁশি শুনে ও মুগ্ধ।

সেই মুগ্ধতা চেপে না রেখে বলেই ফেলেছিল, ‘তুমি এত সুন্দর বাঁশি বাজাতে কোথা থেকে শিখলে মিঠুন?’ কোথাও না, নিজেই শিখেছি … শোনার পর আরও অবাক। অথচ নিজেই তো সকলকে অবাক করার মেয়ে। ওর রূপ-গুণ অভিনয়…রিয়েলি অসাধারণ অভিনেত্রী। ভেরি স্পনটেনিয়াস, ন্যাচারাল …কমেডিও চমৎকার করে। আর ডান্সার হিসেবে তো ওর তুলনাই নেই।

এমনিতে মেয়ে হিসেবে অত্যন্ত ভদ্র-সভ্য, মার্জিত, রুচিশীল। দক্ষিণী শিক্ষিত, রক্ষণশীল পরিবারের মেয়েরা যেমন হয়, ঠিক সে রকম। শুটিংয়ে দেখতাম চুপচাপই থাকত। কোনও ছ্যাবলামি, ইয়ার্কি নেই। ফালতু কথা বলা নেই। থরো প্রফেশনাল… কাজটুকুই ছিল ওর ধ্যান। আদারওয়াইজ মা-বোনের সঙ্গেই সময় কাটাত। ওর বোন লতার সঙ্গেও আমার খুব ভালো বন্ধুত্ব। খুবই মজার মেয়ে। মাকে ছাড়া লতার সঙ্গে থাকলেই দেখতাম, শ্রীদেবীর ভিতরের একটা ছেলেমানুষি সত্তা যেন জাগ্রত হত। ‘স্টার নায়িকা’-র খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসত। হাসি -মজার মধ্যে দিয়েই কাজ করতে গিয়ে আমাদের মধ্যে তৈরি হয়েছিল সুন্দর একটা সম্পর্ক। সেই সম্পর্কের সূত্রে আমি আর শ্রী ক্রমশ জড়িয়ে গেছিলাম একটা ভালোলাগার বন্ধনে। সেই সম্পর্কে হয়তো ছিল প্রান্তির প্রত্যাশা। চাহিদার প্রতিশ্রীতি।

দায়বদ্ধতা …জানি না, সত্যি জানি না। তবে এটুকু জানি , সেই ‘দায়’ কখনও আমি মেটাতে পেরেছি, কখনও হয়তো পারিনি …আর এই পারা, না -পারার মাঝেই আমার আর শ্রী-র সম্পর্কে তৈরি হল একটা দূরত্ব।

মনে আছে ’৮৯ সাল৷ ‘গুরু’-র লাস্ট শট।

পরিচালক উমেশ মেহরা চিন্তা করছে, আমাদের শট শেষ করা যাবে কি না। নিশ্চিত করেছিলাম উমেশক, ‘ডোন্ট ওরি, আমি কথা দিচ্ছি, তোমার শট শেষ হবে। শ্রী আমার থেকে যদি দূরে সরেও যায়, ছবি শেষ না করে যাবে না।’ ছবি শেষ। আমাদের ‘বন্ধুত্ব’ও শেষ। আর ওর সঙ্গে দেখা হয়নি।

সূত্র: এই সময়

কালের আলো/এমএ

Print Friendly, PDF & Email