বন্যা দুর্গতের ‘বিপদের বন্ধু’ বিমান বাহিনী, মানবিক বিপর্যয়ে পাশে থাকার অঙ্গীকার

প্রকাশিতঃ 10:27 pm | June 23, 2025

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা দেখেছে ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালীসহ দেশের পূর্বাঞ্চলের চার জেলা। গত বছর কমবেশি আক্রান্ত হয়েছিল ২৭টি জেলা। বিশেষত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল ফেনীর ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজী উপজেলা। পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে ফুটে উঠে দগদগে ক্ষত। জানমালের পাশাপাশি বড় ক্ষতি হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মৎস্য, কৃষি ও প্রাণিসম্পদ খাতের। বন্যাকবলিত ফেনীর মানুষের সামনে তখন ঘুরে দাঁড়ানোর কঠিন এক চ্যালেঞ্জ।

ওই সময় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.মুহাম্মদ ইউনূস এর দিকনির্দেশনায় ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ভয়াবহ  বন্যাদুর্গত কুমিল্লা, নোয়াখালী এবং বিশেষ করে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ফেনী জেলায় হেলিকপ্টার ও ইউএভি এর মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে এরিয়াল রেকোনাইসেন্স মিশন পরিচালনা করে সফলতার স্বাক্ষর রাখে। বন্যা দুর্গত মানুষের সহায়তায় প্রয়োজনীয় জরুরি উদ্ধার, ত্রাণ বিতরণ ও চিকিৎসা কার্যক্রমে পালন করে কার্যকর ভূমিকা।

কঠিন এক চ্যালেঞ্জে জয়ী হতে বানভাসিদের পাশে থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে লড়াইয়ে সেই সময় প্রতিনিয়ত শক্তি জুগিয়েছিলেন বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন। সবকিছুই সমান তালে সামাল দিয়েছে প্রশিক্ষিত, নির্ভীক ও দেশপ্রেমিক বিমান সেনারা। পুনর্বাসন কার্যক্রমের আওতায় ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজী উপজেলার বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এতিমখানা, ধর্মীয় উপাসনালয় ও রাস্তা-ঘাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ ও সংস্কার কার্যক্রম সফলভাবে শেষ করে। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকেই আবার সোজা হয়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখাতে পেশাদারিত্বের সঙ্গেই তাদের নিরন্তর সংগ্রামে সহযাত্রী করেন নিজেদের। বুকে প্রত্যয় আর সাহস নিয়ে এই দুর্যোগ মোকাবিলায় ত্যাগের সমুদ্রে ভাসিয়ে দেন সৈনিক জীবনের তরী।

বন্যা দুর্গত এলাকায় ‘রাউন্ড দ্যা ক্লক’ কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে দেশজুড়ে প্রশংসা

সূত্র জানায়, বন্যার সময়ে বিমান বাহিনী প্রধান বন্যা কবলিত এলাকাসমূহ পরিদর্শন করেন। তিনি বন্যা দুর্গত মানুষের ক্ষয়ক্ষতি নিরসনে বন্যার পানি সরে যাওয়ার পরপরই পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু করার নির্দেশনা প্রদান করেন। তাঁর সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত ও সার্বক্ষণিক নির্দেশনায় মানবতা, মনুষ্যত্ব আর ঐক্যের মহান ঐতিহ্য ধারণ করেই বন্যা দুর্গত  এলাকাগুলোতে ‘রাউন্ড দ্যা ক্লক’ এমন কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে দেশজুড়ে প্রশংসা কুড়ায় বাহিনীটির সদস্যরা। বিমান বাহিনীর সদস্যরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আসবাবপত্র ও শিক্ষা উপকরণের অভাব লাঘবে শিক্ষা সামগ্রী প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এর ফলে শিক্ষার্থীদের দ্রুত সময়ের মধ্যে পুনরায় বিদ্যালয়মুখী করতে সক্ষমতার পরিচয় দেয় বিমান বাহিনী। একইভাবে নোয়াখালীতেও বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছে বিমান বাহিনী। এসবের মাধ্যমে ‘ভাগ্যবিড়ম্বিত’ মানুষের ‘বিপদের বন্ধু’ হয়ে ওঠে দেশের আকাশ প্রতিরক্ষার অতন্দ্র প্রহরী এই বাহিনী।

সোমবার (২৩ জুন) ফেনীর হাবিব উল্যাহ খান উচ্চ বিদ্যালয়ে নবনির্মিত দ্বিতল ‘শাহীন ভবন’ ও ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজী উপজেলার আরও কিছু উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করেন বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন। এরপর তিনি বিদ্যালয় চত্বরে বৃক্ষরোপণ শেষে দুর্গাপুর সিংহনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং নুরুল কোরআন ইসলামিয়া মাদরাসার উন্নয়ন কাজ ঘুরে দেখেন। এসব উন্নয়নমূলক কার্যক্রমগুলো মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করেছে ঢাকাস্থ বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশার ও বিমান বাহিনী ঘাঁটি একে খন্দকার। বিমান বাহিনী প্রধান সুধী সমাবেশে সময়োপযোগী দিকনির্দেশনা প্রদানের জন্য প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.মুহাম্মদ ইউনূসকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

বিমান বাহিনী আকাশপথে সর্বদা প্রস্তুত, প্রতিজ্ঞাবদ্ধ শক্তিশালী বাংলাদেশ গড়তে 

এদিন দুপুরে ফেনীর ছাগলনাইয়ার হাবিব উল্ল্যাহ খান উচ্চ বিদ্যালয়ে বিমান বাহিনীর বাস্তবায়িত বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসন কার্যক্রমের আওতায় উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন বলেন, ‘সশস্ত্র বাহিনী শুধু সীমান্ত বা আকাশ নয়, দুর্যোগ ও মানবিক বিপর্যয়ে দেশের মানুষের পাশে থেকে একটি নতুন, শক্তিশালী বাংলাদেশ গড়ে তুলতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

তিনি বলেন, বিমান বাহিনী আকাশপথে সর্বদা নিজেদের প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি দেশের উন্নয়ন ও মানবিক সহযোগিতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

দেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিমান বাহিনী আকাশসীমা রক্ষার পাশাপাশি মানবিক সহায়তায় সক্রিয় রয়েছে জানিয়ে বিমান বাহিনী প্রধান বলেন,

‘বন্যাকালীন সময়ে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার দিকনির্দেশনায় জরুরি সাড়া দিয়ে আমরা বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াই। প্রথমদিন হেলিকপ্টারে এলেও কোথাও অবতরণের সুযোগ ছিল না। তাই প্যারাসুটের মাধ্যমে ত্রাণ সরবরাহ করেছি। এরপর প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে শুরু হয় পুনর্বাসন কার্যক্রম।’

পুনর্বাসনে তিনটি খাতকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোর উন্নয়নে কাজ করেছি। আজকের শিশুরাই আগামী দিনের বাংলাদেশ গড়বে। এই বিদ্যালয়ের নবনির্মিত শাহীন ভবন তাদের সেই অগ্রযাত্রার প্রেরণা হয়ে থাকবে।’

বিমান বাহিনী প্রধান আরও বলেন, ‘বিমান বাহিনীর দরজা এসব শিক্ষার্থীর জন্য সবসময় খোলা। ভবিষ্যতে তারা বিমান বাহিনীতে আগ্রহ দেখালে অগ্রাধিকার পাবে। এখানে আরও অনেক কিছু করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু স্থানীয় মানুষের সচ্ছলতা দেখে সত্যিই গর্ববোধ করছি। আমরা খুঁজেও অনেক কিছু করার প্রয়োজন পাইনি। এজন্য আপনাদের নিয়েই গর্ব করি।’

এসময় সহকারী বিমান বাহিনী প্রধান (প্রশাসন) রুসাদ দীন আছাদ, বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশারের এয়ার ভাইস মার্শাল মোহাম্মদ খায়ের উল আফসার, ফেনীর জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম, পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমানসহ বিমান বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সামরিক-বেসামরিক প্রশাসনের সদস্য, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

কালের আলো/এমএএএমকে