বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও ভূমিকম্প সুরক্ষা বিষয়ে বাপার ২০ সুপারিশ
প্রকাশিতঃ 6:58 pm | June 21, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
প্লাস্টিক পলিথিন দূষণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও ভূমিকম্প সুরক্ষা প্রস্তুতি বিষয়ে ২০ দফা সুপারিশ ও দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)।
শনিবার (২১ জুন) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে আয়োজিত এক বিশেষ সেমিনার থেকে এসব সুপারিশ জানানো হয়।
শিল্প ও মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সুপারিশগুলো হচ্ছে— প্রতিটি শিল্প কারখানায় বাধ্যতামূলক ইটিপি স্থাপন এবং কার্যকরভাবে পরিচালনা করা; পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও প্রক্রিয়া ব্যবহার করে বর্জ্য উৎপাদন হ্রাস করতে হবে; শিল্প মালিকদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে এবং নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে; সরকারকে শিল্পাঞ্চলভিত্তিক আধুনিক সিইপিটি গড়ে তোলা এবং রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রিকে উৎসাহ প্রদান করতে হবে; জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে, যাতে তারা শিল্প বর্জ্যের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জানে এবং ব্যবস্থা গ্রহণে চাপ সৃষ্টি করতে পারে; গবেষণা এবং উন্নয়নের মাধ্যমে বিকল্প উপকরণ ও প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করতে হবে, যাতে বর্জ্যের পরিমাণ কমে আসে; চিকিৎসা বর্জ্যের ক্ষতিকর প্রভাব নিরসনে প্রতিটি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে আলাদা আলাদা করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যবস্থা, প্রশিক্ষিত জনবল থাকতে হবে এবং সরঞ্জাম সরবরাহ করতে হবে; চিকিৎসা বর্জ্য সংগ্রহ ও নিষ্পত্তির জন্য প্রতিটি শহরে সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাকে সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব প্রদান করতে হবে; ইনসিনারেটর বা অটো-ক্লেভ প্রযুক্তি ব্যবহার করে চিকিৎসা বর্জ্য ধ্বংস বা জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে এবং সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে আইন মেনে চলতে বাধ্য করতে হবে এবং নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে।
ভূমিকম্প ও নগর প্রস্তুতি বিষয়ক সুপারিশগুলো হচ্ছে— সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক প্রণয়ন করা ভূমিকম্প কন্টিনজেন্সি প্ল্যান বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে; অস্থায়ী আশ্রয়গুলোর যথাযথ চিহ্নিতকরণ ও এ বিষয়ক জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে; স্ট্যান্ডিং অর্ডারস অন ডিজাস্টার ২০১৯-এ বর্ণিত সিটি কর্পোরেশন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগসহ যে ৪৫টি সংস্থার কন্টিনজেন্সি প্ল্যান তৈরির কথা উল্লেখ রয়েছে তা অতিসত্বর প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে; ভূমিকম্পজনিত ক্ষয়ক্ষতি কমানোর লক্ষ্যে ভূমিকম্প ঝুঁকির প্রকৃতি এবং মাত্রা চিহ্নিত করতে হবে এবং তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষা করে ‘আপদকালীন পরিকল্পনা’ প্রণয়ন করতে হবে; আধুনিক নগর পরিকল্পনা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় জিআইএস প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এর কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে হবে; নগরজুড়ে আন্তঃনীল সংযোগ (ব্লু নেটওয়ার্ক) ও আন্তঃসবুজ সংযোগ (গ্রিন নেটওয়ার্ক) প্রতিষ্ঠিত করা হলে ওই নেটওয়ার্কের সমন্বয়ে নগর দুর্যোগকালীন (অগ্নিকাণ্ড, ভূমিকম্প) উদ্ধার পরিকল্পনা তৈরি করা সম্ভবপর হবে; নগরজুড়ে বিদ্যমান পুকুর, খাল এবং অন্যান্য জলাশয় পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ নিশ্চিত করা গেলে সেগুলো ভূমিকম্পজনিত অগ্নিদুর্যোগের সময় প্রয়োজনীয় পানির উৎস হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব হবে; পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃক দ্রুত কার্যক্রম গ্রহণ করে জলাধারগুলো চিহ্নিতকরণে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাকে প্রাধান্য দিতে হবে; স্থানীয় জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে কমিউনিটি-ভিত্তিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা প্রয়োজন; জরুরি ভিত্তিতে ‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি)’-এর অনুসৃত নীতি অনুযায়ী ‘বিল্ডিং রেগুলেটরি অথরিটি (বিআরএ)’ প্রতিষ্ঠা করে সমগ্র বাংলাদেশের সব ভবন নিরাপদ করার যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে; ‘অগ্নিপ্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন ২০০৩’, ‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি)’ এবং ‘ইমারত নির্মাণ বিধিমালার পারস্পরিক সামঞ্জস্যপূর্ণতা নিশ্চিত করে যথাযথকরণের আশু উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এ বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি এলাকাভিত্তিকভাবেও এ ভূমিকম্প বিষয়ক ড্রিল/মহড়া পরিচালনা করা প্রয়োজন; এক্ষেত্রে সঠিক বিনিয়োগের প্রয়োজন রয়েছে বিধায় এ বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
বাপার সভাপতি অধ্যাপক নূর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং নির্বাহী সদস্য ও কোষাধ্যক্ষ জাকির হোসেনের সঞ্চালনায় সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন বাপার সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর কবির।
সেমিনারে প্লাস্টিক ও পলিথিন প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ের ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপার সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. এম. ফিরোজ আহমেদ, শিল্প ও মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ের ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার এবং ভূমিকম্প ও প্রস্তুতি বিষয়ের ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপার নগরায়ন ও নগর সুশাসন বিষয়ক প্রোগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব ও পরিকল্পনাবিদ তৌফিকুল আলম।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন, বাপার সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. এম. শহীদুল ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)’র আইন বিষয়ক সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট হাসানুল বান্না।
কালের আলো/এসএকে