পেশাদারিত্বেই কঠিন চ্যালেঞ্জে উত্তীর্ণ এসএসএফ, রাজনৈতিক মতাদর্শের ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করার বার্তা প্রধান উপদেষ্টার
প্রকাশিতঃ 1:00 pm | June 18, 2025

কালের আলো রিপোর্ট:
ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে হিসেব কষলে কেটে গেছে ৩৮টি বছর। পদ্মা-মেঘনা-যমুনায় জল গড়িয়েছে অনেক। দীর্ঘ সময়ে ভারী হয়েছে স্মৃতির মলাট। রাষ্ট্রপ্রধান, অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান এবং ভিভিআইপি বিদেশি সম্মানিত অতিথিদের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনকারী স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) পা রেখেছে গৌরবময় ৩৯ বছরে।
বুধবার (১৮ জুন) উদযাপিত হয়েছে কর্মদক্ষতা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা, পেশাদারিত্ব ও আনুগত্যের মাপকাঠিতে বারবার কঠিন সব চ্যালেঞ্জে উত্তীর্ণ আধুনিক ও সুসজ্জিত এই নিরাপত্তা বাহিনীটির ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের ৩৯তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত ‘প্রধান উপদেষ্টার দরবার’ অনুষ্ঠানে যোগ দেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় তিনি এসএসএফ সদস্যদের রাজনৈতিক মতাদর্শের ঊর্ধ্বে উঠে পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।
এসএসএফ সদস্যদের সততা, দায়িত্বশীলতা, আন্তরিকতা ও পেশাগত দক্ষতারও ভূয়সী প্রশংসা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি জনবিচ্ছিন্ন না হয়ে বরং জনসংযোগ ও নিরাপত্তার মেলবন্ধনের মাধ্যমেই এসএসএফ তার ওপর অর্পিত সকল দায়িত্ব সফলতার সঙ্গে পালন করবে বলেও মন্তব্য করেন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) সদস্যদের রাষ্ট্র ঘোষিত ভিআইপিদের নিরাপত্তা প্রদানে পেশাগত দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি চারিত্রিক দৃঢ়তা, উন্নত শৃঙ্খলা, সততা, দায়িত্বশীলতা এবং মানবিক গুনাবলীর বিষয়সমূহকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে।
- নিরাপত্তার খাতিরে এসএসএফকে সীমাবদ্ধতা আরোপ করতে হয়
- এসএসএফ যমুনার সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুসংহত করেছে
- এসএসএফের আধুনিকায়ন প্রক্রিয়া চলমান
অনুষ্ঠানে এসএসএফ-এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুস সামাদ চৌধুরী বক্তব্য রাখেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাসহ রাষ্ট্র ঘোষিত ভিআইপিদের নিরাপত্তা প্রদান এবং মর্যাদা ও সম্মান রক্ষায় এসএসএফ পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। বর্তমানে এই বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ৫৭০।’
প্রেসিডেন্সিয়াল সিকিউরিটি ফোর্স (পিএসএফ) হিসেবে ১৯৮৬ সালে যাত্রা শুরু করে এই বিশেষ নিরাপত্তা ইউনিট এখন কালের বিবর্তনে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) হিসেবে পরিচিত। রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান এবং ভিভিআইপি বিদেশি সম্মানিত অতিথিদের নিরাপত্তার দায়িত্ব দিয়ে নামকরণ হওয়া ‘এসএসএফ’ বর্তমান ডিজি মেজর জেনারেল মাহবুবুস সামাদ চৌধুরীর প্রাজ্ঞ ও গতিশীল নেতৃত্বে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়েই নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। বিদেশি অতিথিরাও এসএসএফের আন্তরিকতা ও কর্তব্যনিষ্ঠার প্রশংসা করেছেন বিভিন্ন সময়।
নিরাপত্তার খাতিরে এসএসএফকে সীমাবদ্ধতা আরোপ করতে হয়
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘নিরাপত্তার খাতিরে এসএসএফকে বিভিন্ন ধরনের সীমাবদ্ধতা আরোপ করতে হয়, যা অনেক সময় জনভোগান্তি সৃষ্টি করে। এই ব্যাপারে আমি এসএসএফকে যতটুকু সম্ভব জনভোগান্তি পরিহার করার ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছি। অতীতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিআইপি ফ্লাইটের জন্য প্রায় এক ঘণ্টা সকল ফ্লাইট অপারেশন বন্ধ থাকত। এতে অনেক ধরনের জটিলতার সৃষ্টি হত। আমি এই নিষেধাজ্ঞা তুলে দিয়েছি। এতে সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তি লাঘব হবে বলে আমি আশাবাদী। আমি মনে করি জনবিচ্ছিন্ন না হয়ে বরং জনসংযোগ ও নিরাপত্তার মেলবন্ধনের মাধ্যমেই এসএসএফ তাঁর ওপর অর্পিত সকল দায়িত্ব সফলতার সাথে পালন করবে।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বর্তমান বিশ্বে আধুনিক প্রযুক্তি ও তথ্য আদান প্রদান খুব সহজ হওয়ার কারণে নিরাপত্তা হুমকির ধরন ও প্রকৃতি দ্রুত পরিবর্তনশীল। তাই শতভাগ নিরাপত্তা প্রদান করা খুবই চ্যালেঞ্জিং একটি বিষয়। বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এসএসএফ সুষ্ঠুভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। আমি আশা করি, এসএসএফ নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের নিরাপত্তা হুমকি পর্যালোচনা এবং সেগুলো মোকাবিলা করার জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করবে।’
এসএসএফ যমুনার সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুসংহত করেছে
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি এসএসএফ যমুনার সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুসংহত করেছে। আমি আশা করি, এসএসএফ একইভাবে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়েরও সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করবে। আমি আরও আশা করি, এসএসএফ একটি পেশাদার বাহিনী হিসেবে উন্নত প্রশিক্ষণ, উন্নত প্রযুক্তি এবং উন্নত মনোবলের সন্নিবেশে দিন দিন আরো উন্নতি সাধন করবে।’
এসএসএফের আধুনিকায়ন প্রক্রিয়া চলমান
এসএসএফের প্রশিক্ষণ, অস্ত্র ও সরঞ্জামাদির আধুনিকায়ন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘গত বছরের ৫ আগস্ট এই বাহিনীর কিছু যানবাহন ও সরঞ্জামাদির ক্ষতি হয়েছিল, যা অল্প সময়ের মধ্যেই কার্যক্ষম করা হয়েছে। পাশাপাশি, বাহিনীর অভিযানিক কার্যক্রম আরো বেগবান ও কার্যকরী করার লক্ষ্যে অত্যাধুনিক অস্ত্র-সরঞ্জামাদির ব্যবহার এবং দেশে-বিদেশে উন্নত প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে প্রতিটি সদস্যের সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। খুব শীঘ্রই এসএসএফ তাদের ১২ বছরের পুরানো ভিএইচএফ রেডিও কমিউনিকেশন সিস্টেম পরিবর্তন করে সর্বশেষ মডেলের ইউএইচএফ রেডিও কমিউনিকেশন সিস্টেম সংযোজন করবে, যা তাদের অভিযানিক কার্যক্ষমতা বহুলাংশে বৃদ্ধি করবে।’
তিনি বলেন, আমি জেনে খুশি হয়েছি যে এসএসএফ এর অত্যাধুনিক ইনডোর ফায়ারিং রেঞ্জ এর কাজ প্রায় শেষ ও আগামী মাস থেকে এটি ব্যবহার করা সম্ভব হবে। এই ফেরিং রেঞ্জের জন্য ভূমি বরাদ্দসহ অন্যান্য সহযোগিতা প্রদান করায় বিমান বাহিনীকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অন্যান্য বাহিনীর তুলনায় এসএসএফ একটি ক্ষুদ্র বাহিনী। তবে এর কাজের গুরুত্ব এবং সংবেদনশীলতা অনেক বেশি। এই বাহিনী আমার নেতৃত্বে এবং তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। এসএসএফ একটি প্রশিক্ষিত ও সুশৃঙ্খল বাহিনী যারা আমার ও রাষ্ট্রপতির সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। বিগত ১০ মাসে এসএসএফ দেশে ও বিদেশে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দক্ষতার সাথে পালন করেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি বিভিন্ন অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন এবং সার্বিক পেশাদারিত্ব ও আন্তরিকতার জন্য তিনি এসএসএফের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সেনা, নৌ, বিমান, পুলিশ ও আনসার বাহিনী হতে সেরা চৌকস অফিসারকে নিয়ে এসএসএফ একটি অত্যাধুনিক ও পেশাদার বাহিনী হিসেবে গড়ে উঠেছে। তবে তাদেরকে কেবল দেশের সেরা হলে চলবে না পেশাদারিত্ব, কাজের দক্ষতা, প্রযুক্তির ব্যবহার সবকিছু মিলিয়ে বিশ্বমানের হতে হবে। এসএসএফ সদস্যদের বিশ্বমানের হওয়ার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা এসএসএফ-এ সেনা, নৌ, বিমান, পুলিশ ও আনসার বাহিনী থেকে চৌকস অফিসার নির্বাচন ও প্রেরণ করায় সকল বাহিনী প্রধানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব মো. সিরাজ উদ্দিন মিয়া, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমসহ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কালের আলো/এমএএএমকে