অপরাধীরা কোনো সাহায্যকারী খুঁজে পাবে না
প্রকাশিতঃ 2:10 pm | June 13, 2025

মাহমুদ আহমদ:
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টিকে বার বার সতর্ক করেছেন, তারা যেন অসৎ পথ ছেড়ে সহজ সরল পথ অবলম্বন করে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এ বিষয়ে উদাসীন। সমাজ ও দেশের বেশিরভাগ মানুষ যখন পাপ, ব্যভিচার, অন্যায় এবং নিজ প্রভুকে ভুলতে বসে তখনই আল্লাহতায়ালা তার পক্ষ থেকে কোপগ্রস্ত হয়ে শাস্তির যোগ্য হয়ে যায়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, ‘আর তোমাদের কৃতকর্মের কারণই তোমাদের ওপর বিপদ নেমে আসে। অথচ তিনি অনেক কিছুই উপেক্ষা করে থাকেন।’ (সুরা আশ শুরা: আয়াত ৩০)
আজাবের এমন একটি দিক নেই, যেদিক দিয়ে আজ পৃথিবী আক্রান্ত হয়নি। বিশ্বের এমন কোন দেশ বা এমন কোন জাতি নেই যার ওপর কোনো না কোনো আজাব না এসেছে। যত বড় শক্তিধর রাষ্ট্রই হোক না কেন ঐশী আজাব থেকে কেউ মুক্ত নয়। সকল প্রকার আজাবের প্রবল আক্রমণ মানব সম্প্রদায়ের ওপর বারবার এসে আঘাত হানছে। মানব প্রকৃতি বিকৃত হয়েছে। তার কারণে আল্লাহর রুদ্র রূপও প্রকাশিত হচ্ছে। আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে শাস্তিস্বরূপ যখন কোনো আজাব আসে তখন তা থেকে রক্ষা পাওয়ার কোনো রাস্তা থাকে না।
আমাকে আল্লাহপাক যা দিয়েছেন তাতে সন্তুষ্ট থেকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের শুকরিয়া আদায় করি আর অন্যের সম্পদের দিকে অবৈধ কামনা-বাসনা পরিত্যাগ করি। আমরা যদি এমনটি করতে পারি তাহলে দেখবেন রাতের ঘুম কত আরাম দায়ক হয় আর প্রত্যেকটি পরিবার কত সুখের হয়।
যেভাবে পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন ‘তুমি বল, আল্লাহর হাত থেকে কে তোমাদের রক্ষা করতে পারে যদি তিনি তোমাদের কোন শাস্তি দিতে চান? অথবা তিনি যদি তোমাদের প্রতি কৃপা করতে চান তবে কে এ থেকে তোমাদের বঞ্চিত করতে পারে? আর তারা নিজেদের জন্য আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন অভিভাবক বা কোন সাহায্যকারীও খুঁজে পাবে না।’ (সুরা আহজাব: আয়াত ১৭)
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার বান্দার দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখতে চান। তিনি চান তার বান্দারা যেন নিজের ভুল বুঝতে পেরে নিজেকে পবিত্র করার চেষ্টা করে আর আল্লাহতায়ালার কাছে ক্ষমা চায়। আমাদের আশেপাশে এমন অনেক ঘটনা রয়েছে যাদের দ্বারা সমাজে নানান অপরাধ সংঘটিত হতো আর ক্ষমতার দাপটে মাটিতে তাদের পা পড়ত না, সেই তাদেরকে যখন আল্লাহপাক পাকড়াও করেন তখন তাদের পাশে কোনো সাহায্যকারীকে খুঁজে পাওয়া যায় না।
আমাদের চলার পথে কিছু না কিছু ভুল-ত্রুটি হয়েই থাকে। কিন্তু আমরা যদি সেগুলোকে সংশোধন করার চেষ্টা না করে বরং আরো অধিকহারে মন্দ কাজের দিকে ঝুঁকি তাহলে অবশ্যই তিনি আমাদের পাকড়াও করবেন। আসলে যারা অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন করে আর ক্ষমতার দাপটে মানুষকে মানুষ মনে করে না তাদের কাছে অন্যায় কাজকে অন্যায় মনে হয় না। যখন যা ইচ্ছে তাই তারা করে, ভালো মন্দ বিচার করার সময়ই যেন তাদের নেই। তারা ভাবে ক্ষমতাই যেন তাদের সব কিন্তু এক সময় তাদের এ অহংকার আর দাপট আল্লাহপাক মাটির সাথে মিশিয়ে দেন। মানুষ যখন অপরাধ করতে করতে সীমা ছাড়িয়ে ফেলে তখন আল্লাহপাক তাকে এমনভাবে দমন করেন যা সে কল্পনাও করতে পারে না।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন ‘এসব জনপদের অধিবাসীরা কি এ ব্যাপারে নিরাপদ হয়ে গেছে যে, রাতের বেলায় ঘুমন্ত অবস্থায় তাদের ওপর আমাদের শাস্তি নেমে আসবে না? আর এসব জনপদের অধিবাসীরা কি এ বিষয়ে নিরাপদ হয়ে গেছে যে, দুপুর বেলায় খেলাধুলায় মত্ত থাকা অবস্থায় তাদের ওপর আমাদের শাস্তি নেমে আসবে না? (সুরা আরাফ: আয়াত ৯৯-১০০)।
তাই একথা কেউ মনে করা ঠিক হবে না যে আমি ছাড় পেয়ে যাবো। আমি যা কিছু করি না কেন সবই তিনি দেখছেন এবং হিসাব রাখছেন। আমার সংশোধনের জন্য কেবল আমাকে কিছুটা সময় তিনি দিয়েছেন কিন্তু আমি যদি সেই সময়ে নিজেকে সংশোধন না করি তাহলে তিনি অবশ্যই আমাকে পাকড়াও করবেন।
আমাদের পাপ সমূহ ক্ষমার জন্য আমরা যদি ইস্তেগফারে রত থাকি তাহলে আল্লাহপাক হয়ত আমাদের এই দোষত্রুটি ক্ষমা করে দিবেন। এ বিষয়ে একটি হাদিসে হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ‘ইস্তেগফার’-এর সাথে আঁকড়ে থাকে অর্থাৎ ইস্তেগফারে সর্বদা নিয়োজিত থাকে আল্লাহতায়ালা তাকে সর্ব প্রকার বিপদ-আপদ থেকে উদ্ধারের পথ সৃষ্টি করে দেন আর প্রত্যেক দুরবস্থা থেকে উত্তরণের রাস্তা বের করে দেন আর তাকে ঐ সমস্ত রাস্তায় দান করেন যা সে ধারণাও করতে পারে না’ (সুনান আবি দাউদ, কিতাবুল বিতর, বাব ফিল ইস্তেগফার)।
আমাদের কারো জানা নেই, কার কখন, কোন অবস্থায় মৃত্যু ঘটবে। তাই আমরা যদি আমাদের পাপ ও দোষ-ত্রুটিকে ক্ষমা করাতে চাই তাহলে ইস্তেগফারের বিকল্প নাই। তবে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, আমি ভুল করেছি, তারপর আমার মাঝে উপলব্ধি হলো আর আমি এর জন্য আল্লাহর কাছে কাকুতি মিনতি করে ক্ষমা চাইলাম আর তিনি আমাকে ক্ষমা করে দিলেন। তাই বলে বার বার ভুল করবো আর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে থাকবো তা ঠিক নয়। মুমিন একই ভুল বার বার করেন না।
আমাদেরকে এমনভাবে ইস্তেগফার করতে হবে যেন আমার দ্বারা দ্বিতীয়বার এমন ভুল আর কখনও সংঘটিত না হয়।
আমরা যেন সর্বদা মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও তওবা করতে থাকি এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে আবার আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, ‘ওয়া আনেসতাগফিরু রাব্বাকুম সুম্মা তুবু ইলাইহে’ অর্থাৎ ‘তোমরা তোমাদের প্রভু-প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা চাইবে, তার কাছে সবিনয়ে তওবা করবে’ (সুরা হুদ, আয়াত: ৩)।
তাই আমাদেরকে সবসময় আল্লাহপাকের কাছে আমাদের পাপ সমূহের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে আর তার শুকরিয়া ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে। তিনি আমাদেরকে না চাইতেও কত কিছুই না দান করছেন। আমরা যদি এসবের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন না করি তাহলে আমরা অকৃতজ্ঞ হিসেবে পরিগণিত হব।
একটি হাদিসে এসেছে, হজরত নুমান বিন বশির (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবি (সা.) মিম্বরে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘যে ব্যক্তি স্বল্পে তুষ্ট হয় না সে অধিক পেলেও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। আর যেব্যক্তি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে না সে আল্লাহতায়ালার করুণারাজিরও কৃতজ্ঞতা আদায় করতে পারে না। আল্লাহতায়ালার অনুগ্রহরাজির উত্তম স্বীকারোক্তি প্রকাশ করাটাও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন। আর আল্লাহতায়ালার আশিস সমূহের উত্তম স্বীকারোক্তি প্রকাশ না করাটা অকৃতজ্ঞতা’ (মুসনাদ আহমদ বিন হাম্বল)।
তাই আসুন, আমাকে আল্লাহপাক যা দিয়েছেন তাতে সন্তুষ্ট থেকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের শুকরিয়া আদায় করি আর অন্যের সম্পদের দিকে অবৈধ কামনা-বাসনা পরিত্যাগ করি। আমরা যদি এমনটি করতে পারি তাহলে দেখবেন রাতের ঘুম কত আরাম দায়ক হয় আর প্রত্যেকটি পরিবার কত সুখের হয়।
আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা অনুসরণ করে চলার তৌফিক দান করুন, আমিন।
লেখক: প্রাবন্ধিক, ইসলামি চিন্তাবিদ।