লন্ডনে ড. ইউনূস-তারেক রহমান বৈঠক অনেকের মনে জ্বালা ধরিয়েছে: রিজভী

প্রকাশিতঃ 11:02 pm | June 14, 2025

গাজীপুর প্রতিবেদক, কালের আলো:

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী বলেছেন, লন্ডনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক অনেকের মনে জ্বালা ধরিয়েছে। অনেকে এটা মেনে নিতে পারছেন না।

তিনি বলেন, ড. ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হয়েছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলন এবং বিএনপির ১৫-১৬ বছরের এক রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এ অন্তর্বর্তী সরকার।

শনিবার (১৪ জুন) বিকেলে গাজীপুর সদর উপজেলার ভবানীপুর বীর মুক্তিযোদ্ধা কলেজ মাঠে বিএনপির নতুন সদস্য সংগ্রহ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

রুহুল কবীর রিজভী বলেন, রমজান মাসে কি নির্বাচনী প্রচারণা করা যায়? ফেব্রুয়ারি-মার্চে রমজান থাকবে। থাকবে ঈদের আয়োজন। তাহলে এপ্রিলের ১ তারিখ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে আপনি কখন প্রচারণা চালাবেন।

কখন আইনি প্রক্রিয়া হবে, কখন নমিনেশন পেপার জমা দেবে, কখন প্রচার চালাবে, সারাদিন রোজা রেখে কীভাবে এপ্রিল মাসের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব? সম্ভব নয়। ধর্মীয় কোনো অনুষ্ঠান থাকবে না সেই সময় তো নির্বাচনী উপযুক্ত সময় হওয়া উচিত। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অথবা দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচনটা হবে। এ সময়টায় কোনো রোজা নেই, ঈদ নেই, ধর্মীয় অনুষ্ঠান নেই। এ সময় আবহাওয়া ভালো থাকে, শীত থাকে। এ সময় আন্দোলন সংগ্রাম হয়, নির্বাচন হয় এটা এ দেশের একটা ঐতিহ্য। নির্বাচন কমিশন যদি ফেব্রুয়ারির ১০-১৫ তারিখের মধ্যে নির্বাচন ঘোষণা করে এর থেকে উপযুক্ত সময় কি এপ্রিল মাস? এপ্রিল মাস তো হতেই পারে না। তখন বৈশাখ মাস, শুরু হবে ঝড় ঝাপটা, কালবৈশাখীর প্রচণ্ড তাণ্ডব চলবে।

তিনি আরও বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান বারবার বলেছে, এ হাসিনা দুর্বৃত্ত। এ হাসিনা গণতন্ত্র জব্দ করছে, এ হাসিনা নির্বাচন কমিশন ধ্বংস করেছে, গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো ক্ষুণ্ন করেছে। মানুষের কথা বলতে গেলে তা ঠিকানা হয়েছে আয়না ঘরে, তার ঠিকানা হয়েছে পুলিশের অত্যাচার, তার বিরুদ্ধে শতশত মামলা, তার স্থায়ী ঠিকানা হয়েছে কারাগারে। আপনি সেই আওয়ামী লীগকে মাফ করে দেবেন ?

শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনাদের রাজনীতিটা ভুলে ভরা। এ ভুলে ভরা রাজনীতি আপনারা শুরু থেকেই করে আছেন। আর বিএনপি সব সময় ইতিবাচক রাজনীতি করেছে। রাজনীতি মানে হচ্ছে জনগণের কাছে ওয়াদা, জনগণের কাছে অঙ্গীকার।

তিনি বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজকে যদি আপস করতেন তাকে ৫-৬ বছর জেলে থাকতে হতো না। তার ওপর নিপীড়ন নির্যাতন এতখানি হতো না। তিনি জনগণকে ছেড়ে কখনো যাননি, শেখ হাসিনা গেছে। আজকে এত বড় বড় কথা বলেছেন বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে কত অপপ্রচার, কত কুৎসা রটিয়েছেন। কত কি কথা বলেছেন। কিন্তু বেগম জিয়া তো দেশ ছেড়ে যাননি। তিনি বলেছেন শেখ হাসিনা যা বলছেন তা মিথ্যা। বরণ করেছেন নির্যাতন, কারাগারের মধ্যে থেকেছেন। ২০০ বছরের পুরোনো কারাগার ধুলা উড়ে, বালি উড়ে উনার চোখে অপারেশন সেই ধুলাবালি উড়ে তার চোখ আরো ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তারপরও শেখ হাসিনার অন্যায়ের কাছে তিনি (খালেদা জিয়া) মাথা নত করেননি।

রুহুল কবীর রিজভী বলেছেন, শেখ হাসিনার এত পুলিশ, এত র‌্যাব, এত টাকা, এত টাকা পাচার, বেসিক ব্যাংক লোপাট, সোনালী ব্যাংক লোপাট একটার পর একটা ব্যাংক লোপাট। তাদের টাকা উড়ে সিঙ্গাপুরে, তাদের টাকা উড়ে বেড়ায় অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে, তাদের টাকা উড়ে বেড়ায় সুইজারল্যান্ডে, দুবাইয়ে, কানাডায়। সব শেখ পরিবার, না হয় আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতার। আওয়ামী লীগের মন্ত্রীর ৩০০-৪০০ মিলিয়ন পাউন্ডের সম্পত্তি পাওয়া গেছে। ইংল্যান্ডে সাইফুজ্জামান শেখ হাসিনার ভূমি মন্ত্রী। এর মধ্যে ইংল্যান্ডের পুলিশ তার কয়েকটি সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে। শেখ হাসিনা, এটার দায় কি আপনার নয়? ওরা বাংলাদেশ চাইনি। ওরা বাংলাদেশকে অন্যের কাছে লিখে দিতে চেয়েছে। আর বলেছে আমরা যত পারি লুটেপুটে নিয়ে চিরদিনের জন্য শেখ পরিবার ও আওয়ামী লীগের কিছু ব্যবসায়ী তারা বিদেশে কয়েক প্রজন্ম ধরে থাকবে। এটাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। এ কারণে তাদের যারা প্রভু খুবই অসন্তুষ্ট। শেখ হাসিনার সময়ে আপনারা তো পুশইন করেননি। ভারতীয় নাগরিকের কার্ড আছে এ কার্ডসহ আমাদের বিজিবি ধরেছে। সব ভারতের লোক। পায়ে পারা দিয়ে, গায়ে ধাক্কা দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ কি ঝামেলা পাকাতে চায় বাংলাদেশের সঙ্গে? হঠাৎ করে নীলফামারী বর্ডার, লালমনিরহাটের বর্ডার, ঠাকুরগাঁওয়ের বর্ডার , মৌলভীবাজারের সীমান্ত, সাতক্ষীরা সীমান্ত প্রতিদিন ২০-৪০ টা করে বিদেশি নাগরিক বলে বাংলাদেশের পুশইন করছে। আমি বলব সরকারকে আপনারা এর জবাব দিন।

তিনি বলেন, এদেশের মানুষ জুলাই সৃষ্টি করতে পারেন, ওরা আগস্ট সৃষ্টি হতে পারে, এদেশের তারুণ্যের রক্ত ঝলকে উঠে। এ রক্ত প্রতিরোধ করতে জানে। তাই এরা ৭১ সৃষ্টি করেছে, ৭ই নভেম্বর সৃষ্টি করেছে, আজকে দিল্লির প্রভুরা ভুলে গেছে যে এ দেশের ১৮ কোটি মানুষ কীভাবে তারা প্রতিরোধ করতে পারে আর কীভাবে প্রতিবাদ করতে জানে। তাই তাদেরকে আমি হুঁশিয়ার করে দিতে চাই। এভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অগ্রাহ্য করে আপনারা যদি এ পুশইন অব্যাহত রাখেন এর দায় দায়িত্ব আপনাদেরকেই নিতে হবে।

অনুষ্ঠিনে সভাপতিত্ব করেন গাজীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য একেএম ফজলুল হক মিলন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রিয়াজুল হান্নান।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় গবেষণা বিষয়ক শামীমুর রহমান শামীম, কেন্দ্রীয় সহ শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ূন কবির খান, সহ স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, কেন্দ্রীয় সদস্য ও সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার, কেন্দ্রীয় সদস্য ও সাবেক পৌর মেয়র মজিবুর রহমান, কেন্দ্রীয় সদস্য ওমর ফারুক সাফিন, সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবু তাহের মুসল্লি ও এমদাদুল হক মুসল্লি।

কালের আলো/এমডিএইচ