যশোরে চামড়ার দামে হতাশ মৌসুমি ব্যবসায়ীরা
প্রকাশিতঃ 1:21 pm | June 09, 2025

যশোর প্রতিবেদক, কালের আলো:
ঈদুল আজহায় চামড়া ব্যবসা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম বৃহত্তম যশোরের রাজারহাটের চামড়া ব্যবসায়ীরা। সরকার নির্ধারিত মূল্য না পাওয়ার আশঙ্কা, দীর্ঘদিনের বকেয়া আদায় না হওয়া, লবণের দাম ও শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আগামী মঙ্গলবার (১০ জুন) রাজারহাটে চামড়ার হাট বসবে বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পশু কোরবানির পরপরই যশোরে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে চাহিদা ও দামের মিল না থাকায় এবারও হতাশার সুর মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কণ্ঠে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজারহাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে চামড়ার দাম নিয়ে তীব্র দর কষাকষি চলছে। অনেকেই কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে চামড়া বিক্রি করতে দ্বিধায় পড়েছেন। কেউ কেউ ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
সরকার ঢাকার বাইরে গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। ঢাকার বাইরে সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ১৫০ টাকা। তবে এ হাটে প্রতি পিস চামড়া মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা থেকে ৯০০ টাকা। আর খাসির চামড়ার ক্রয়মূল্য প্রতি বর্গফুট ২২ থেকে ২৭ টাকা এবং বকরির চামড়ার দাম ২০ থেকে ২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা থেকে ১৫ টাকা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, চামড়া সংরক্ষণের জন্য লবণের দাম বেশি। অন্যদিকে শ্রমিকের মূল্য রয়েছে। আর ট্যানারি মালিকরা বকেয়া পরিশোধ করেননি। সব মিলিয়ে চামড়া হিসাব করে ক্রয় করতে হচ্ছে।
মুড়লি মোড় এলাকার মৌসুমী ব্যবসায়ী ইমরান হোসেন পাপ্পু বলেন, চার হাজার পিস ছাগলের চামড়া ও ২০০ পিস গরুর চামড়া কিনেছি। সেগুলো লবণ মাখিয়ে গাদা দিয়ে রেখেছি। মঙ্গলবার বিক্রি করবো। সরকার যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সে দাম পেলে লাভবান হব। তবে মনে হচ্ছে না নির্ধারিত দামে বিক্রি হবে।
স্থানীয় রাকিবুল ইসলাম জানান, কুরবানির ঈদের আগে এ এলাকায় হাজারো মোসুমী ব্যবসায়ী চামড়া কিনতো। তবে সেই ব্যবসায়ীর সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। লোকসানের ভয়ে তারা চামড়া ব্যবসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এসব ব্যবসায়ীই এই হাটের প্রাণ ছিল।
চামড়া ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, এই হাটে তিন দশকের বেশি সময় ধরে ব্যবসা করে আসছি। ব্যবসার অবস্থা এবার খারাপ হবে মনে হচ্ছে। গত বছরের ট্যানারি মালিকদের প্রতিনিধিদের কাছে চামড়া দিছিলাম, সেগুলোর টাকা এখনো পাইনি। তারপরও ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে এবারও প্রস্তুতি নিচ্ছি। সরকার এবার যে দাম বেঁধে দিয়েছে, সেই দামে চামড়া কেনা যাবে না। ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার কাঁচা চামড়া কিনলে এরপরে লবণ, শ্রমিক, পরিবহন খরচে দাম হয়ে দাঁড়ায় ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। এরপর আমরা ট্যানারি মালিকদের কাছে ৫০০-৬০০ টাকার ওপরে দাম পাই না। এতে খরচেই ওঠে না। ফলে এবার চামড়া খুব হিসাব করে কিনতে হবে। সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে চামড়া কেনা কঠিন।
বেনাপোল-শার্শা এলাকার ব্যবসায়ী মন্টু মিয়া বলেন, এখন আর রাজারহাটে চামড়া বিক্রি করি না। রাস্তাঘাট ভালো থাকায় সরাসরি ঢাকায় মাল পাঠাই।
এদিকে চামড়ার বাজার স্থিতিশীল রাখতে ও লবণ সিন্ডিকেট ভাঙতে উদ্যোগ নেয় জেলা প্রশাসন। জেলায় ৩৭৭টি লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে জন্য আড়াই শ মেট্রিক টন লবণ বিনামূল্য প্রদান করা হয়।
যশোরের বৃহত্তর চামড়া ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি আকিল আহমেদ জানান, সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে এবার চামড়া কিনলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পথে বসতে হবে। কেননা ট্যানারি মালিকরা বাছাই করে চামড়া নিয়ে থাকে। তারা দাম দিতে চায় না। আবার কিছু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ট্যানারি মালিকদের কাছে কয়েক কোটি টাকা বকেয়া পাবে। সেই টাকা যদি তারা না পায় তাহলে তারা চামড়া কিনতে সমস্যার সম্মুখীন হবেন। ক্ষুদ্র চামড়া ব্যবসায়ীদের রক্ষায় সরকারকে স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণ দিতে হবে। কিন্তু সরকার ট্যানারি মালিকদেরকে এই সুবিধা দিচ্ছে।
তিনি বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যাদেরকে লবণ দেওয়া হয়েছে তারা কি চামড়ায় লবণ লাগিয়েছে? তারা গোপনে লবণ ও চামড়া আলাদাভাবে বিক্রি করেছে।
উল্লেখ্য, খুলনা বিভাগের ১০ জেলার ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজশাহী, পাবনা, ঈশ্বরদী নাটোরের বড় বড় ব্যবসায়ীরা চামড়া বেচাকেনা করেন যশোরের রাজারহাটের চামড়ার হাটে। হাটটিকে ঘিরে প্রায় ১০ হাজার ছোট বড় ব্যবসায়ী ব্যবসা করেন। ঈদ পরবর্তী প্রায় শত কোটি টাকার চামড়া হাতবদল হয় এখানে। কিন্তু ট্যানারি মালিক ও মহাজনদের কাছে থাকা বকেয়া আদায় না হওয়ার পাশাপাশি হঠাৎ লবণের মূল্যসহ শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধিতে চামড়ার ব্যবসা নিয়ে হতাশ তারা।
কালের আলো/এসএকে