সরকারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর টানাপোড়েন তত্ত্বের ‘যবনিকা’, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় একতাবদ্ধ হয়ে কাজের অঙ্গীকার

প্রকাশিতঃ 5:04 pm | May 26, 2025

কালের আলো রিপোর্ট:

মিয়ানমারে মানবিক করিডর, চট্টগ্রাম বন্দরসহ নানা ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে দেশপ্রেমিক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে বলে গুঞ্জন-গুঞ্জরণ ছড়িয়েছে। ক্রমেই বাড়ছে দূরত্ব এমন খবর রটিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া। বিভ্রান্তিকর কাজটি করে চলেছিল একটি অশুভ চক্র। যারপরেনাই বিষয়টিকে গভীর সঙ্কটের আলামত হিসেবেও দেখতে শুরু করেছিলেন বিশ্লেষকরাও। বাস্তবের সঙ্গে এর মিল খুঁজতেও হন্তদন্ত হয়েছিলেন কেউ কেউ। পণ্ডিতরাও সরকার ও সেনাবাহিনীর মতপার্থক্যের বিষয়টিকে মোটা দাগে সামনে এনেছিলেন। অদৃশ্য শক্তি এজন্য কাউকে কাউকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতেও কুণ্ঠাবোধ করেনি একটুকুও। তবে সময় গড়াতেই এই টানাপোড়েন তত্ত্বের ‘যবনিকা’ ঘটেছে। সোমবার (২৬ মে) ঢাকা সেনানিবাসে সেনাবাহিনী সদর দপ্তরের এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে সরকারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর কোন রকম বিরোধ বা মুখোমুখি অবস্থান নেই।

সামাজিক মাধ্যমে যেসব অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে সেগুলোর সত্যতা নেই মোটেও। বরং রাষ্ট্রের স্বার্থ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সরকার এবং সেনাবাহিনী একসঙ্গে কাজ করছে। বিষয়টিকে একে অন্যের সম্পূরক হিসেবেই দেখছেন সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশন্সের পরিচালক (ডিএমও) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উল-দৌলা। তিনি খোলাসা করলেন নানা ঘটনাপ্রবাহের। যেসব নিয়ে সবার ভেতর প্রশ্ন ছিল, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও চরমে ওঠেছিল। তাঁর খোলামেলা কথা-‘আমরা প্রতিনিয়ত সরকারের সঙ্গে কাজ করছি এবং সরকারের নির্দেশের দায়িত্ব পালন করছি। সরকার এবং সেনাবাহিনী খুব সুন্দরভাবে একে অন্যের সহযোগিতায় কাজ করছে।’ তাঁর এই বক্তব্যে অনিশ্চয়তার কালো মেঘ সরে গেছে। নিজেদের গায়ে বিন্দুমাত্র শক্তি থাকতে সেনাবাহিনী কখনও বর্ডার কম্প্রোমাইজ করবে না এটিও ছিল তাঁর সাফ কথা।

প্রায় পৌনে এক ঘণ্টার এই সংবাদ সম্মেলনে মিয়ানমার, আরকান আর্মি, রাখাইন করিডর, মব, জনদুর্ভোগসহ ইত্যাকার বিষয়ে তিনিসহ গণমাধ্যমের নানা প্রশ্নের জবাব দেন মিলিটারি অপারেশন্সের পরিচালক (স্টাফ কর্নেল) কর্নেল মো. শফিকুল ইসলামও। সম্প্রতি জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এর একটি বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এ নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। এই সংক্রান্ত এক প্রশ্নে সেই বক্তব্যের বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ‘বস্তুনিষ্ঠতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সেনাসদর। সেনাসদরের মিলিটারি অপারেশন্সের পরিচালক (স্টাফ কর্নেল) কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘সেনাপ্রধানের বক্তব্য নিয়ে প্রকাশিত বিষয়গুলোর সঠিকতা বা বস্তুনিষ্ঠতা নিয়ে যথেষ্ট বিবেচনার দাবি রাখে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সেনাপ্রধান যেকোনো সময় বা সময়ে সময়ে অফিসার বা সৈনিকদের সঙ্গে কথা বলে থাকেন, দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকেন। এটি তারই একটি ধারাবাহিকতা মাত্র। এখানে আমরা কোনো সাংবাদিককে ডাকিনি, তিনি জাতির উদ্দেশে কোনো ভাষণ দেননি, আইএসপিআর সরকারিভাবে কোনো বিবৃতি দেয়নি।’

  • সরকার ও সেনাবাহিনী সুন্দরভাবে একে অন্যের সম্পূরক হিসেবে কাজ করছে
  • কেএনএফ’র পোশাক পাওয়ার সংবাদটি বস্তুনিষ্ঠ
  • বর্ডার কম্প্রোমাইজ না করার প্রতিজ্ঞা

সরকার ও সেনাবাহিনী খুব সুন্দরভাবে একে অন্যের সম্পূরক হিসেবে কাজ করছে
সরকার ও সেনাবাহিনী খুব সুন্দরভাবে একে অন্যের সম্পূরক হিসেবে কাজ করছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশন্সের পরিচালক (ডিএমও) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উল-দৌলা। করিডোরের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না এবং এই বিষয়ে সেনাবাহিনী কী ভাবছে? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। এই দেশ আমাদের সবার। এই দেশের স্বার্থ ও সার্বভৌমত্বের সঙ্গে আমরা সবাই জড়িত। দেশকে ভালো রাখতে সবাইকে কাজ করতে হবে। সুতরাং আমি মনে করি না যে বিষয়টা এমন একটি পর্যায়ে গেছে যেভাবে বিষয়টা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। সরকার এবং সেনাবাহিনী একে অন্যের সম্পূরক হিসেবে কাজ করছে।’ উর্ধ্বতন এই সেনা কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমরা প্রতিনিয়ত সরকারের সঙ্গে কাজ করছি এবং সরকারের নির্দেশে দায়িত্ব পালন করছি। সরকার এবং সেনাবাহিনী খুব সুন্দরভাবে একে অন্যের সহযোগিতায় কাজ করছে। করিডোরের সঙ্গে বর্ডারে আরসার মুভমেন্টের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এই দুইটা বিষয় আলাদা। সরকার ও সেনাবাহিনী ভিন্ন ভিন্ন চিন্তা করছে এ রকম যেন আমরা না ভাবি। সরকার ও সেনাবাহিনী একই সঙ্গে কাজ করছে, ভবিষ্যতেও আমরা আরও সুন্দরভাবে কাজ করে যাবো বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।’

কেএনএফ’র পোশাক পাওয়ার সংবাদটি বস্তুনিষ্ঠ
চট্টগ্রামের একটি কারখানায় সন্ত্রাসী সংগঠন কেএনএফ’র ৩০ হাজার পোশাক পাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উল-দৌলা বলেন, কেএনএফ মূলত বম কমিউনিটি ভিত্তিক সংগঠন। পোশাক পাওয়ার সংবাদটি একটি বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ। সংগঠনটির অস্ত্রের ব্যবহার আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামে দেখছি। তাদের আক্রমণে আমাদের কয়েকজন সেনাসদস্য মৃত্যুবরণ করেছেন এবং আহতও হয়েছেন। সেই প্রেক্ষাপটে নিশ্চয়ই এটা ভালো কোনো খবর নয়। ৩০ হাজার ইউনিফর্ম পাওয়ার ছবি দেখার পর আমরা সঙ্গে সঙ্গে কথা বলেছি এটা আসলে ব্যাপারটা কি এ বিষয়ে আমাদের জানতে হবে। এ পোশাক কাদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল সেটা আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। এটা নিয়ে এরই মধ্যে কাজ চলছে। এই সংগঠনের সঙ্গে অন্যদের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে।

তিনি বলেন, ‘বম কমিউনিটির জনসংখ্যা মাত্র ১২ হাজার। সুতরাং এই ৩০ হাজার ইউনিফর্ম কেএনএফএর জন্য ছিল কি না সেটা খুঁজে দেখার সুযোগ আছে। বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নিয়েছি। বিষয়টি দেশের নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত। বিষয়টিকে আমরা হালকাভাবে নেইনি নিশ্চিত করে বলতে পারি। এ ব্যাপারে যতটুকু ব্যবস্থা নেওয়া দরকার আমাদের দায়িত্বের মধ্যে যেটা পড়ে সেটা আমরা করব।’

বর্ডার কম্প্রোমাইজ না করার প্রতিজ্ঞা
বাংলাদেশ একটা ছায়া যুদ্ধের মধ্যে আছে সেটা বিভিন্ন মাধ্যমে বলা হচ্ছে। আরসা বাংলাদেশের লোকজনকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশে ঢুকে তারা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অনেক সময় বিভিন্ন মাধ্যমে খবর আসছে তাদের কাছে ভারি ভারি অস্ত্র আছে, তাদের কাছে এই অস্ত্র কোথায় থেকে আসছে। এসব বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে আসলে বর্ডার কি আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে নাকি আমরা বর্ডার কম্প্রোমাইজ করেছি? এমন প্রশ্নের জবাবে সেনাবাহিনীর এই কর্মকর্তা বলেন- যদি এক লাইনে উত্তর দিতে চাই অবশ্যই আমরা বর্ডার কম্প্রোমাইজ করিনি। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের গায়ে বিন্দুমাত্র শক্তি থাকবে আমরা কখনোই বর্ডার কম্প্রোমাইজ করবো না। এটা আমাদের দেশ আর দেশকে আমরা যে কোনো মূল্যে রক্ষা করব।

তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের দেশ, এটা আপনার দেশ। কোনো একটা সম্প্রদায়ের মাধ্যমে এই দেশের সার্বভৌমত্ব বিনষ্ট হতে পারে সেটা কখনোই হবে না। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার বর্ডার অত্যন্ত জটিল একটি পরিস্থিতির মুখে আছে। মিয়ানমারের সরকারের অস্তিত্ব বিলীনের মুখে। আরাকান আর্মির রাখাইন রাজ্যটিকে প্রায় দখল করে নিয়েছে। তাদের দখলে রাখাইন রাজ্যের ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ রয়েছে। আরাকান আর্মি কোনো অথরাইজ সংগঠন নয়। এই জায়গাটাতে না আছে কোনো সরকারের অস্তিত্ব, না আছে আরাকান আর্মিকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টা। এই মুহূর্তে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের বর্ডারে যে পরিস্থিতি যে কোনো সময়ের তুলনায় সংবেদনশীল। সেই ক্ষেত্রে এই সময়ে ওই এলাকায় কিছু সশস্ত্র গ্রুপের মুভমেন্ট করাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তার মানে এই নয় যে এটাকে আমরা স্বীকৃতি দেব বা দেখেও না দেখার ভান করব।’ তিনি জানান, এই ধরনের ঘোলাটে পরিস্থিতিতে এই ধরনের মুভমেন্ট হতে পারে। কিন্তু আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই বিজিবি প্রাথমিকভাবে ডিফারেন্টলি সাপোর্টেড বাই আর্মি আমরা এই বর্ডারে নজরদারি রাখছি। তবে অবশ্যই এই মুভমেন্টটি উদ্বেগের বিষয় এবং কাক্সিক্ষত নয়।

লালমনিরহাট বিমানবন্দর চীন ব্যবহার করবে কি না এই তথ্য নেই
সম্প্রতি লালমনিরহাট বিমানবন্দর চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এটি বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর অধীনে ছিল এবং আছে। সম্প্রতি আর্মি এভিয়েশন লালমনিরহাট বিমানবন্দরে অবস্থান করছে। আগামী জুলাই মাসের দিকে লালমনিরহাট বিমানবন্দরের রানওয়ে চালুর কথা রয়েছে অ্যারোস্পেস ইউনিভারসিটির শিক্ষার্থীদের গবেষণা ও বিমান উড্ডয়নের জন্য। ভবিষ্যতে বিমানবন্দরটি চীনের ব্যবহারের সম্ভাবনা রয়েছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উল-দৌলা বলেন, দেশের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেই সঙ্গে আমাদের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পাবে এটা খুব স্বাভাবিক। লালমনিরহাট অনেক পুরোনো একটি বিমানবন্দর। বিমানবন্দরটি আগেই ছিল এটি ব্যবহার হয়নি। প্রয়োজনের নিরিখে সেটি আবার সচল করার চেষ্টা করা হচ্ছে এবং কাজে লাগানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। দেশের সম্পদ দেশের প্রয়োজনে ব্যবহার করা হবে এটাই স্বাভাবিক। এতদিন প্রয়োজন পড়েনি তাই ব্যবহার করা হয়নি, এখন প্রয়োজন পড়েছে তাই আবারও সচল করার চেষ্টা চলছে।’ তিনি বলেন, চীন ব্যবহার করবে কি না বা কবে ব্যবহার করবে, এ ধরনের কোনো তথ্য আমার কাছে নেই। এটুকু আশ্বস্ত করতে পারি দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় ও দেশের স্বার্থ বিঘ্নিত হয় এরকম কোনো কর্মকাণ্ডে কোনো দেশকে অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে বা সম্পৃক্ত করার ব্যাপারে নিশ্চয়ই সরকার ভেবে দেখবে। আমি মনে করি না কোনো সরকার কোনো কিছু চিন্তা না করে কোনো পদক্ষেপ নেবে।

জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কোনো বিষয়ে সেনাবাহিনী সম্পৃক্ত হবে না
করিডোর ও চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে দেশের সার্বভৌমত্বের চ্যালেঞ্জ তৈরি হতে পারে, সেই চ্যালেঞ্জ সেনাবাহিনী আমলে নিচ্ছে কি না এবং চ্যালেঞ্জ নিলে কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছেন? সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্ন করা হয় মিলিটারি অপারেশন্সের পরিচালক (স্টাফ কর্নেল) কর্নেল মো. শফিকুল ইসলামকেও। তিনি বলেন, করিডোর একটি স্পর্শকাতর বিষয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত কোনো কাজে সম্পৃক্ত হবে না।

নির্বাচন-করিডোর নিয়ে সেনাবাহিনী ও সরকারের মুখোমুখি অবস্থান রয়েছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই বিষয়গুলো নিয়ে মুখোমুখি অবস্থান দেখছি না। যথেষ্ট সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ রয়েছে। সেনাবাহিনী ও সরকার একত্রে, একসঙ্গে দেশের জন্য, দেশের স্বার্থে, জনগণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।’ এই সেনা কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য বা নিরাপত্তা রক্ষার জন্য সেনাবাহিনী একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করে আসছে। ভবিষ্যতেও দেশের জন্য, দেশের নিরাপত্তার জন্য দেশের মানুষের সঙ্গে কাজ করে যাবো।’

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক বলেছেন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও মশক নিধনে ওষুধ ছিটাবে সেনাবাহিনী। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও মশক নিধনে সেনাবাহিনী কাজ করবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্জ্য ও মশক নিধনে সেনাবাহিনী কাজ করে না। ওনার (ডিএনসিসি প্রশাসক) সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়নি।

গণমাধ্যমে এসেছে আরাকান আর্মি বাংলাদেশে ঢুকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছে। পার্বত্য অঞ্চলে যেহেতু সেনাবাহিনী রয়েছে সেক্ষেত্রে এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে- জানতে চাইলে সেনাবাহিনীর এই কর্মকর্তা বলেন, আরাকান আর্মির সঙ্গে আমাদের সরাসরি কোনো যোগাযোগ নেই। গণমাধ্যমে যা দেখেছেন সেটির সত্যতা ও বস্তুনিষ্ঠটা যথেষ্ট বিবেচনার দাবি রাখে।

সবাই মিলে সমন্বিতভাবে কাজ করলে আইনশৃঙ্খলা আরও উন্নত হবে
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছিনতাই ও হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা কমছে না। সেনাবাহিনী মাঠে থাকার পরও এসব অপরাধ না কমার কারণ জানতে চাওয়া হয় সেনাবাহিনীর কাছে। এর জবাবে মিলিটারি অপারেশন্সের পরিচালক (স্টাফ কর্নেল) কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সেনাবাহিনী দিন-রাত আইনশৃঙ্খলা উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা উন্নয়ন শুধু সেনাবাহিনীর একার দায়িত্ব নয়, অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও দায়িত্ব রয়েছে। সবাই মিলে সমন্বিতভাবে কাজ করলে আইনশৃঙ্খলা আরও উন্নত হবে।’

সেনাবাহিনী মাঠে থাকার পরেও কেন ছিনতাই ও হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা কমছে না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেগুলো মিডিয়াতে আসছে সেগুলো আপনারা দেখতে পাচ্ছেন। আগের তুলনায় আইনশৃঙ্খলা ইন-ডিটেইল (বিস্তারিত) যদি বিশ্লেষণ করেন তাহলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আইনশৃঙ্খলা স্থিতিশীল অবস্থায় আছে বা কিছুটা ভালো হয়েছে। সেনাবাহিনী দিন-রাত আইনশৃঙ্খলা উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।’

  • জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কোনো বিষয়ে সেনাবাহিনী সম্পৃক্ত হবে না
  • সবাই মিলে সমন্বিতভাবে কাজ করলে আইনশৃঙ্খলা আরও উন্নত হবে
  • ভবিষ্যতে মব ও জনদুর্ভোগ করলে সেনাবাহিনী কঠোর হবে

তিনি বলেন, গত ৪০ দিনে সেনাবাহিনী ২৪১টি অবৈধ অস্ত্র ও ৭০৯ রাউন্ড গোলাবারুদ এবং আগস্ট থেকে থেকে এই পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৬১১টি অবৈধ অস্ত্র ও ২ লাখ ৮৫ হাজার ৭৬১ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। এছাড়া গত এক মাসে বিভিন্ন ধরনের অপরাধে সম্পৃক্ত মোট ১ হাজার ৯৬৯ জনকে এবং এ পর্যন্ত মোট ১৪ হাজার ২৬৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যাদের মধ্যে কিশোর গ্যাং, তালিকাভুক্ত অপরাধী, অপহরণকারী, চোরাচালানকারী, প্রতারক ও দালাল চক্র, চাঁদাবাজ, ডাকাত, ছিনতাইকারী উল্লেখযোগ্য।

এছাড়া গত ৪০ দিনে যৌথ অভিযানে ৪৮৭ জন মাদক কারবারি এবং আগস্ট থেকে এই পর্যন্ত মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৪ হাজার ৪০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অবৈধ মাদকদ্রব্য, যেমন ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজা, অবৈধ মদ ইত্যাদি উদ্ধার করা হয়েছে যার মাধ্যমে এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ও নিরাপত্তা বিরাজ করছে। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময় থেকে শুরু করে অদ্যাবধি শিল্পাঞ্চল এলাকার সার্বিক নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

ভবিষ্যতে মব ও জনদুর্ভোগ করলে সেনাবাহিনী কঠোর হবে
দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষাসহ সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে সেনাবাহিনী। ভবিষ্যতে জানমালের ক্ষতিসাধন, মব ভায়োলেন্স ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করতে পারে এমন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছে সেনাসদর। সংবাদ সম্মেলনে মিলিটারি অপারেশন্সের পরিচালক (কর্নেল স্টাফ) কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম এমনটি উচ্চারণ করে বলেন, ‘দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, দেশের জনগণের জানমাল এবং রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ও স্থাপনার নিরাপত্তা দেওয়াসহ সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সেনাবাহিনী প্রধানের দিকনির্দেশনাকে অনুসরণ করে দেশের চরাঞ্চলসহ ৬২টি জেলায় সেনাসদস্যরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন, বিভিন্ন সংস্থা, গণমাধ্যম এবং সাধারণ জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করছে।’

ভেজাল বিরোধী অভিযান, ঈদুল আজহায় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গ
কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি জুলাই অভ্যুথ্যানে ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন সময়ে যারা আহত হয়েছেন, তাদের সুচিকিৎসার জন্য সেনাবাহিনী এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৫৯৬ জনকে দেশের বিভিন্ন সিএমএইচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে, যার মধ্যে ৩৬ জন এখনো চিকিৎসাধীন।

ভেজাল খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও কারখানায় অভিযান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গত এক মাসে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে সেনাবাহিনী দেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ভেজাল শিশু খাদ্য উৎপাদন, বাজারজাতকরণ এবং বিপণনের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এছাড়াও যশোর ও সাতক্ষীরা জেলায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে বিপুল পরিমাণ জেলি মিশ্রিত চিংড়িসহ সিন্ডিকেটের সদস্যদের আটক করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর ভেজাল খাদ্যদ্রব্যের বিরুদ্ধে এরূপ অভিযান স্থানীয় জনগণের মধ্যে স্বস্তির আস্থা সৃষ্টি করেছে।’

ঈদুল আজহায় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার বিষয়ে এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও সুশৃঙ্খল যানবাহন চলাচল নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী ঈদের আগে ও পরে মিলে ২ সপ্তাহের বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এর অংশ হিসেবে জাতীয় মহাসড়কগুলোতে নির্বিঘ্নে যান চলাচল নিশ্চিত করতে ঢাকাসহ দেশের গুরত্বপূর্ণ বাস স্ট্যান্ড, রেল স্টেশন, লঞ্চ টার্মিনাল ও মহাসড়কে দিন-রাত টহল পরিচালনা, গাড়ির অতিরিক্ত গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য স্পর্শকাতর স্থানে চেকপোস্ট স্থাপনসহ টিকিট কালোবাজারি অথবা অধিক মূল্যে টিকিট বিক্রি রোধ এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে যা ঈদুল ফিতরের মতই মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে। একইসঙ্গে জনসাধারণকে নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানোসহ পরিবার-পরিজনের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ ও আনন্দঘনভাবে ঈদ উদযাপনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।’

কোরবানির পশুর হাটে চাঁদাবাজি ও নিরাপত্তা বিধানের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর হাট কেন্দ্র করে চাঁদাবাজ এবং ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পায়। মূল সড়কের পাশে পশুর হাটের অবস্থান হওয়ায় রাস্তাঘাটে যানজটের সৃষ্টি হয়। যার ফলে জনসাধারণের মধ্যে দুর্ভোগ ও জানমালের নিরাপত্তার হুমকি সৃষ্টি হয়। সেনাবাহিনী নিয়মিত টহল ও বিশেষ অভিযানের মাধ্যমে পশু হাটে চাঁদাবাজি ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সচেষ্ট থাকবে।’

পার্বত্য চট্টগ্রাম ও এফডিএমএন ক্যাম্পের নিরাপত্তার কথা জানিয়ে মিলিটারি অপারেশন্সের পরিচালক (স্টাফ কর্নেল) কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং কক্সবাজার জেলায় এফডিএমএন ক্যাম্প এলাকার নিরাপত্তা বিধান করার দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করে যাচ্ছে। এছাড়াও সেনাবাহিনী দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখাসহ বিদেশি কূটনীতিক ও দূতাবাসগুলোর সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের কাজে নিয়োজিত রয়েছে।’

কালের আলো/এমএএএমকে