৪৬৩ নবীন নাবিক পেলো নৌবাহিনী, দেশের জন্য জীবন বিলিয়ে দিতে গুরুত্ব নৌপরিবহন উপদেষ্টার

প্রকাশিতঃ 10:18 pm | May 25, 2025

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

বাদ্যের তালে তালে রবিবার (২৫ মে) পটুয়াখালীর বানৌজা শের-ই-বাংলা প্যারেড গ্রাউন্ডে শুরু হয় বর্ণাঢ্য শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজ। ২২ সপ্তাহের কঠোর সামরিক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করা ৪৬৩ জন নবীন নাবিকের পদচারণায় মুখর প্যারেড গ্রাউন্ড। দৃপ্ত পায়ে এগিয়ে চলে নবীন নাবিকরা। হাতে লাল-সবুজ পতাকা নিয়ে দৃঢ় কণ্ঠে দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করার শপথ নিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে যোগ দিলেন তাঁরা। সন্তানের কুচকাওয়াজ দেখে অনেক অভিভাবকের চোখে জলজমা আনন্দ। বুটক্যাম্প প্রশিক্ষণ শেষ করা নবীন নাবিকদের বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ অবলোকন করলেন নৌ পরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।

‘শান্তিতে সংগ্রামে, সমুদ্রে দুর্জয়’ এই স্লোগান নিয়ে এই তরুণ নাবিকরা শুধু সমুদ্রসীমাই নয়, আগামী দিনে এক উন্নত ও শক্তিশালী বাংলাদেশ গঠনে রাখবে বলিষ্ঠ ভূমিকা এমন প্রত্যাশার কথাও উচ্চারিত হয় প্যারেড গ্রাউন্ড থেকে। মনোজ্ঞ এই কুচকাওয়াজে নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্যারেড পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন। এ সময় তিনি দেশের প্রতি আনুগত্যের শপথ নেওয়া নবীন নাবিকদের দেশের জন্য জীবন বিলিয়ে দিতে গুরুত্বারোপ করেন।

উপদেষ্টা বলেন, ‘কোন ব্যক্তি নয়, দেশের প্রয়োজনে বিলিয়ে দিতে হবে জীবন। এটাই একজন নাবিকের চূড়ান্ত দায়িত্ববোধ।’ নৌবাহিনীর এই ধারাবাহিক প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে নবীনরা ভবিষ্যতে পেশাগত দক্ষতা ও উৎকর্ষ অর্জন করবে বলেও মনে করেন। দেশমাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নবীন নাবিকসহ সকল নৌসদস্যকে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। একই সঙ্গে দেশের সুবিশাল সমুদ্রসীমা রক্ষার পাশাপাশি শক্তিশালী বাংলাদেশ গড়ে তুলতে নবীন নাবিকরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।

সমুদ্র জয়ের অঙ্গীকারে গর্বের নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করা নাবিকদের উদ্দেশ্যে ড.এম সাখাওয়াত হোসেন নিজের বক্তব্যের শুরুতেই মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রণকারী সকল অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও নৌ কমান্ডোদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন। একই সঙ্গে তিনি স্মরণ করেন, জুলাই বিল্পবে শহীদ ও আহতদের প্রতি, যাদের আত্মত্যাগে দেশের স্বাধীনতার চেতনা ও গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা সমুন্নত হয়েছে।

শুধু যুদ্ধে নয় শান্তিতেও নৌবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ অবদান
নৌপরিবহন উপদেষ্টা বলেন, ‘১৯৭১ সালে অপারেশন জ্যাকপটের সময় নৌবাহিনীর অগ্রযাত্রায় কিছুই ছিল না। আজকে নেভী অনেক উন্নত হয়েছে। শুধু যুদ্ধে নয় শান্তিতে নৌবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।’ সাম্প্রতিক সময়ে ইন-এইড-টু সিভিল পাওয়ার এর আওতায় দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে, জনগণের জানমাল, সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা প্রদানে নিয়োজিত থাকায় তিনি নৌবাহিনীর প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

  • নবীন নাবিকসহ সকল নৌসদস্যকে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হওয়ার আহ্বান
  • শুধু যুদ্ধে নয় শান্তিতেও নৌবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ অবদান
  • সকল বন্দরগুলোকে নিয়ে একটি পোর্ট স্ট্র্যাটেজি তৈরি করা হচ্ছে

নবীন নাবিকদের উদ্দেশ্য করে উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা দেশ মাতৃকার সেবায় নিয়োজিত আছেন, থাকবেন, আপনাদের ওপরে সমুদ্রের নিরাপত্তা নির্ভর করছে। সেদিন দূরে নয় যখন আমরা দেশের ২০০ নটিকেল মাইল সমুদ্রসীমার বাইরেও নিরাপত্তা দিতে পারবো। নৌ বাহিনীর এ ধারাবাহিক প্রশিক্ষণ নেওয়ার মাধ্যমে নবীণরা ভবিষ্যতে পেশাগত দক্ষতা ও উৎকর্ষতা অর্জন করবে এবং দেশমাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নবীন নাবিকসহ সব নৌ সদস্যকে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

সকল বন্দরগুলোকে নিয়ে একটি পোর্ট স্ট্র্যাটেজি তৈরি করা হচ্ছে
‘আপনাদের সেক্রিফাইস, অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ বলবে আমাদের সমুদ্রসীমা কতক্ষানি অক্ষত থাকবে। আমরা এখন পর্যন্ত নেভীর সেই ক্যাপাসিটি পাইনি, যারা আমাদের ইজেট বা নীল সম্পদকে আহরণ করবে এবং রক্ষা করবে’-মন্তব্য করেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আমাদের দুটি সবামেরিন হয়েছে। আরও বেশ কিছু সাবমেরিন যুক্ত হওয়া দরকার, যদি হয় তাহলে আমাদের নেভী ছোট হলেও খুব কার্যকর হবে। যদিও অন্তবর্তী সরকারের সময় খুব কম। তারপরও আশা করছি আমরা এটি দেখে যেতে পারবো। দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোকে রক্ষা করার কাজে নৌবাহিনীকে সংযুক্ত করার চেষ্টা চলছে। সকল বন্দরগুলোকে নিয়ে একটি পোর্ট স্ট্র্যাটেজি তৈরি করা হচ্ছে।’

আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, প্যারেড পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করে নৌপরিবহন উপদেষ্টা কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জনকারী নবীন নাবিকদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। নৌবাহিনীর এ-২০২৫ ব্যাচের নবীন নাবিকদের মধ্যে মো. গালিব আল মাহাদী অর্ণব পেশাগত ও সকল বিষয়ে সর্বোচ্চ উৎকর্ষতা অর্জন করে সেরা চৌকস নাবিক হিসেবে ‘নৌপ্রধান পদক’ লাভ করেন। মো. হাসিব হোসেন দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে ‘কমখুল পদক’ এবং মো. নাঈম গাজী তৃতীয় স্থান অধিকার করে ‘শের-ই-বাংলা পদক’ অর্জন করে।

কালের আলো/আরআই/এমকে