সরকার জাতীয় সক্ষমতা না বাড়িয়ে বিকল্প খুঁজছে: আনু মুহাম্মদ

প্রকাশিতঃ 4:47 pm | May 23, 2025

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, কালের আলো:

জাতীয় সক্ষমতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, সরকার জাতীয় সক্ষমতা না বাড়িয়ে বিকল্প খুঁজছে। বিকল্প হিসেবে বিদেশি কোম্পানিকে চট্টগ্রাম বন্দর না দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা দূর করে জাতীয় সক্ষমতা বাড়ানো যেতো।

শুক্রবার (২৩ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা আকরম খাঁ হলে গণতান্ত্রিক নাগরিক কমিটি আয়োজিত ‘গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে কেমন বাজেট চাই’— শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশের অর্থবছরের সময়সীমা পরিবর্তন করা প্রয়োজন জানিয়ে আনু মুহাম্মদ বলেন, আমাদের অর্থবছর ব্রিটিশ আমলের মতো জুলাই-জুনই আছে। এই অর্থবছরের কারণে দুর্নীতির একটি সুযোগ তৈরি হয় এবং অর্থের অপচয় হয়।

অর্থবছর বাংলা বছর অনুযায়ী ১৪ এপ্রিল থেকে ১৩ এপ্রিল অথবা ইংরেজি বছর অনুযায়ী ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর করার পরামর্শ দেন তিনি।

আনু মুহাম্মদ বলেন, এই সরকারের একটি বড় দায়িত্ব হলো বৈষম্যহীন বাংলাদেশের প্রত্যাশা অনুযায়ী কিছু কিছু পরিবর্তনের গতিপথ তৈরি করা। এই সরকার অস্থায়ী সরকার, এই সরকারের স্থায়ী কোনো ম্যান্ডেট নেই, এই সরকার দীর্ঘদিন থাকবে না।

তিনি বলেন, এই সরকারের পক্ষে অনেক কিছুই করা সম্ভব নয়। কিন্তু কিছু করণীয় আছে, যা সরকার খুব সহজেই করতে পারে। যেমন শিক্ষা, চিকিৎসা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো এটা বহু বছরের দাবি। যেটা থাকার কথা বাজেটের ৫-৬ শতাংশ, সেটা আছে ১-২ শতাংশ। এর সূচনাটা হওয়া উচিত এই বছরই।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতে এরইমধ্যে অনেক দুর্নীতি, অপচয়, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, অপ্রয়োজনীয় বরাদ্দ, অপ্রয়োজনীয় বিদেশ সফর, অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প আছে। এসব থেকে এই দুই খাতকে মুক্ত করতে হবে।

শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতের পরিবর্তনের জন্য একটি সংস্কার এই সরকারের জন্য খুব সহজ ছিল জানিয়ে এই অধ্যাপক বলেন, এটা ঘোষণা করা যেতো, প্রধান উপদেষ্টা থেকে শুরু করে সকল উপদেষ্টা, সকল বিশেষ সহকারী, সকল প্রতিনিধি, সরকারি আমলা তাদের চিকিৎসা দেশের সরকারি হাসপাতালে নেবেন।

‘এটা করলে সরকারি হাসপাতালগুলোর আবহাওয়া জাদুর বাক্সের মতো পরিবর্তন হয়ে যেতো। যদি তারা সিদ্ধান্ত নিতেন, তাদের সবার সন্তানরা দেশের সরকারি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। তাহলে এসবের চেহারা পাল্টে যেতো। এই সূচনাটি সরকার খুব সহজে করতে পারতেন। গত নয় মাসে সেটি আমরা দেখিনি। ’

বৈষম্যহীন বাংলাদেশের যাত্রাটা অগ্রসর হোক

তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের দায়িত্ব, বৈষম্যহীন বাংলাদেশের পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য জাতীয় সক্ষমতা বাড়ানো। শিক্ষা, সংস্কৃতি, কৃষি, শিল্প ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করা। এবং জনগণের জন্য পরিবেশবান্ধব পথ শক্তিশালীকরণে প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন করা।

‘সেই কাজগুলো না করে অন্য দিকে গিয়ে জটিলতা সৃষ্টি করে মান-অভিমান করা, এসব গ্রহণযোগ্য কাজ নয়। আমরা চাই, সামনের বাজেটে যথাযথ কাজটি সরকার করুক এবং বৈষম্যহীন বাংলাদেশের যাত্রাটা অগ্রসর হোক। ’

আলোচনা সভায় আগামী অর্থবছরের বিভিন্ন খাতের বাজেট নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আলোচকরা। এর মধ্যে কৃষি বাজেট নিয়ে আলোচনা করেন মাহা মির্জা, সংস্কৃতি বাজেট নিয়ে আলোচনা করেন সজীব তানভীর, জ্বালানি বাজেট নিয়ে আলোচনা করেন মোশাহিদা সুলতানা ঋতু।

শিক্ষা বাজেট নিয়ে আলোচনা করেন সামিনা লুৎফা, চিকিৎসা বাজেট নিয়ে আলোচনা করেন হারুন উর রশীদ, জেন্ডার বাজেট নিয়ে আলোচনা করেন মারজিয়া প্রভা।

‘গত দেড় দশকের বাজেটের যেসব প্রবণতা থেকে বের হতে হবে’— প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মাহতাব উদ্দিন আহমেদ, ‘শ্রীলঙ্কা থেকে কী শিখলাম’— প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কৌশিক আহমেদ, ‘বাজেটে বৈষম্য ও সামাজিক নিরাপত্তা’— প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কল্লোল মোস্তফা।

কালের আলো/এএএন