সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ
প্রকাশিতঃ 11:50 pm | May 10, 2025

কালের আলো রিপোর্ট:
দিনমান প্রশ্ন ছিল কী সিদ্ধান্ত আসতে যাচ্ছে? আওয়ামী লীগকে কি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হচ্ছে? এমন সব প্রশ্নই ঘুরপাক খেয়েছে সবার মাঝে। তবে সঠিক উত্তর জানা ছিল না কারও। কেউ বলছেন এখন আওয়ামী লীগকে নয়, আপাতত যুবলীগ কিংবা স্বেচ্ছাসেবক লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হতে পারে। যদিও গত কয়েকদিন যাবত ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের ফলে অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন এবার হয়তো সত্যি সত্যিই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হবে। সিদ্ধান্ত গ্রহণে জরুরি বৈঠকে বসেছিল উপদেষ্টা পরিষদ। অবশেষে শনিবার (১০ মে) রাত ১১টার দিকে গণমাধ্যমের সামনে হাজির হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্তের কথা জানান আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
এর আগে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছিল শনিবার (১০ মে) রাত ৮টায় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শুরু হয়েছে। বৈঠক শেষে যমুনার বাইরে প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হবে। এই প্রেস ব্রিফিংয়ে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘আজ শনিবার ১০ মে উপদেষ্টা পরিষদে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনের সংশোধন অনুমোদিত হয়েছে। এতে করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কোনও রাজনৈতিক দল তার অঙ্গ সংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারবে। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচার কাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতা কর্মীদের নিরাপত্তা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেসসহ আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরিপত্র পরবর্তী কর্মদিবসে জারি করা হবে।’
এদিকে, রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পরপরই আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠেন ছাত্র জনতা। স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠেছে পুরো শাহবাগ মোড় থেকে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হয়ে বাংলামোটর পর্যন্ত।
শাহবাগ মোড় থেকে এই আনন্দ মিছিলে ব্যাপক শোডাউনসহ অংশ নেয় জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির, ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ), জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইনকিলাব মঞ্চ, ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মী ছাড়াও ছাত্র-জনতা।
জানা যায়, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে গত দুদিন ধরে কর্মসূচি পালন করছে সদ্যগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বিভিন্ন দল ও সংগঠন। এনসিপি গঠিত হওয়ার পর থেকেই ছাত্র জনতার আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধের বিচার ও তার দায়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছিল।
বুধবার মধ্যরাতে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সময়ের সাবেক রাষ্ট্রপতি মো.আবদুল হামিদ থাইল্যান্ডে গেলে নতুন করে কর্মসূচি নেয় মাঠে নামে এনসিপি। শনিবার (১০ মে) সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের জন্য এক ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয় ইনকিলাব মঞ্চ। এই সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগসহ এর অঙ্গসংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধ করা না হলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলেও জানান ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি। একই গণজমায়েতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা শাহবাগ থেকে বাংলামোটর অবরোধ করবো। পরে অবস্থা বুঝে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের দিকে যাওয়া হবে।’ তারই অংশ হিসেবে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে অবস্থান নিতে দেখা যায় আন্দোলনকারীদের। এরও আগে শুক্রবার (৯ মে) রাতে শাহবাগে এক সংবাদ সম্মেলনে তিন দফা দাবি সামনে রেখে গণজমায়েত কর্মসূচির ঘোষণা দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। পাশাপাশি দাবি আদায়ে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালনের কথাও জানান তিনি।
সেই ঘোষণার অংশ হিসেবে শনিবার (১০ মে) বিকেল থেকে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন ইসলামী ছাত্রশিবির, ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ), ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মী ও ছাত্র-জনতা। সন্ধ্যা পর্যন্ত দাবি আদায়ে অনড় অবস্থানের পাশাপাশি নানান স্লোগান দিতে থাকেন তারা।
কালের আলো/এমএসএএকে